ক্লাস থ্রিতে পড়ি। সন্ধ্যার সময় উনুনের পাশে লম্ফর আলোতে পড়তে পড়তে যখন ফ্যানা ভাতের গন্ধ নাকে আসতো, ভাবতাম ফ্যানাভাতে আর ঘি ছাড়া বোধহয় আমি আর বাঁচবো না।
সেভেনে যখন চারিদিকটা অন্ধকারে ঘিরে ধরত... মেঘ করত, বৃষ্টি আসত... ঝড়বৃষ্টিতে দু-একটা কলাগাছ উপড়ে পড়ত... পাড়ার দাদারা বাঁশ কেটে, ওর মুখটা ছুঁচলো করে চার-পাঁচটা কলাগাছ পাশাপাশি একসাথে সাজিয়ে ভেলা তৈরি করে যখন পুকুরে নামাত... আমি একটা বাঁশের লাঠি নিয়ে একাএকা পুকুরে নামতাম... বেশ লাগত... মনে হত একাএকাও আমি অনেক দূরে যেতে পারি... একসময় মনে হত সারাজীবন এইভাবে ভেসে যেতে পারলে মন্দ হয়না... তবে সারাদিন পুকুরপাড়ে কাটালে লোকজন বকাবকি করলে খারাপ লাগত... মনে হত কলার ভেলা ছাড়া আমি আর বাঁচব না...
এইট অথবা নাইনে একটা টেপ রেকর্ডার কিনেছিলাম... গান শুনতে কতটা ভাল লাগত বুঝতামনা। তবে দুর্গাপূজোর মাইকের শব্দের মধ্যেও আমি হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতাম। গান শোনার অভ্যাস একসময় মাত্রা ছাড়াতে লাগলো... তখন মনে হত এই টেপ রেকর্ডার ছাড়া বোধহয় আমি আর বাঁচবো না... তারপর একসময় টেপরেকর্ডারটা আমায় ছেড়ে চলে গেল....
তারপর আধুনিক যুগের সূচনা.... ফেসবুক জীবনের অক্সিজেনে পরিণত হয়েছে.. বেশ লাগে মেয়েদের রিকুয়েস্ট পাঠাও... কথা বলো... তখনও কিন্তু আমার মনে হত ফেসবুক ছাড়া বোধহয় আমি আর বাঁচব না...
সত্যি কথা বলতে কলেজের পড়া শেষ করা পর্যন্ত মেয়েদের নিয়ে ভাবিনি। আর নিজের মধ্যে এরকম কিছু আবিষ্কারও করতে পারিনি যা দিয়ে কোনও মেয়ের সামনে দাঁড়াতে পারব...। তারপরেও যদি কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়... ভাল লাগে... হ্যাঁ... মনে হওয়াটা স্বাভাবিক '.... ছাঁড়া বোধহয় আমি আর বাঁচবো না....।
এবার আমি মুচকি হাসলাম। নেহাত আজ মুড অফ আর ঝড়বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন ... তাই মনে পড়ছে কতকিছু ছাড়া মরতে মরতে আমি শিখে গেলাম কতকিছু ছাড়া বেঁচে থাকা যায়....
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন