হোস্টেলের প্রথম রবিবার। কয়েকটা জামাকাপড় দুর্গন্ধ হয়েছে, পরিষ্কার করার প্রয়োজন।

আমি বরাবর জিন্স পরি, জিন্সের সবথেকে বড় সুবিধা হল অনেকদিন না কেচে পরা যায়। জামাকাপড় কীভাবে কাচতে হয় আমার কোনও ধারণা নেই, তবে জল আর ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে অনেকক্ষণ  ভিজিয়ে রাখার পর মোবাইলে গান চালিয়ে সেই জামাকাপড়ের উপর নাচানাচি করে সেগুলি পরিষ্কার করা যায় বলে আমার বিশ্বাস।

হোস্টেলের রাস্তাটা যেখানে দুদিকে ভাগ হয়ে গিয়েছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে। তাই শত ইচ্ছে সত্ত্বেও কেউ মেয়েদের রুমের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেনা। একটু এগিয়ে গেলে ডানদিকে খেলার মাঠ পড়ে, আর বাঁদিকে সারিবদ্ধ গাছ। এই গাছের নীচে সিনিয়র স্যার আর ম্যাডামরা গল্প করে। আই.এইচ.এম এর একটা নিয়ম ছিল, সিনিয়রদের সঙ্গে দেখা হলেই ঊইশ করতে হত, স্যার অথবা ম্যাডাম বলে....

যিনি গেটে বসে থাকতেন, অমায়িক লোক। কারণ দেখিয়ে নাম রেজিস্ট্রি করে বেরোতে হত, নিয়ম রাত আট'টার মধ্যে রুমে ফেরা, কোনওদিন আধঘণ্টা লেট হলে কিছু টাকা দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।

সাধারণত তারাতলা থেকে অজন্তা সিনেমা হল পর্যন্ত হেঁটে যেতাম। তারপর মিনিবাসে উঠে বেহালা। কিন্তু যেদিন রাস্তায় অনেক মেয়ে থাকত, পুরোটাই হেঁটে যেতাম। বিকেলবেলা মেয়েদের সুন্দর লাগে, ক্লান্তিকর অবস্থায় তখন মুখে খুব বেশি আর্টিফিশিয়ালিটি থাকেনা।

যেহেতু আজ হোস্টেলের প্রথম রবিবার, খুব মন খারাপ হচ্ছে, মন খারাপ বাড়ির জন্য, ভাই-মা-বাবা.. বাড়িতে কোনওদিনই জামাকাপড় কাচিনি... মায়ের সামনে জড়ো করে দিলেই কাজ হয়ে যেত... আজ নিজেকে কাচতে হবে, বেশ ভাল লাগছে, মনে হচ্ছে নতুন বিয়ে করেছি.. সংসার পেতেছি... আর এখন!.... বালতি, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, কাপড় মেলা দড়ি, জামা ঘসা ব্রাশ কিনতে যাচ্ছি।

দামদর করে একটা লাল বালতি আর দড়ি কিনলাম। বাকি জিনিসপাতি কোনও একটা মল থেকে। ডালের বড়া খেতে খেতে ফিরছিলাম। আকাশে প্রচণ্ড মেঘ,  চারিদিক এত ঘন কালো হয়ে গিয়েছে যে খুব সুন্দর মেয়েও চোখে পড়ছেনা, বৃষ্টি আসবে মনে হয়...।

একবার ভাবলাম বালতিটা মাথার উপর বসিয়ে নেব, কিন্তু আরেক হাতের বারুণটা কিছুতেই সামলাতে পারছিলাম না। নিরুপায় হয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হোস্টেলে পৌঁছলাম। রাজ্যের জামাকাপড় বের করে কাচতে শুরু করলাম। সেদিন খুবই কষ্ট হয়েছিল, ভাবছিলাম বাড়িতে মা কীভাবে করে এসব!  তারপর যা জ্বর এসেছিল, তা আর বলার না.......

হোস্টেলে খুব একা লাগত নিজেকে। মনে হত এই পৃথিবীটা একটা মানুষ দিয়ে তৈরি, আজ এত বড় হয়েও একা লাগে.... তবে দৃষ্টিভঙ্গির অনেক বদল এসেছে...। তখন একা লাগলে কষ্ট হত, আর এখন নিজেকে একা ভাবতে ভাল লাগে... একা থাকতে ভাল লাগে... না জানি, আমি একাকীত্বের প্রেমে পড়ে গিয়েছি .......

বি: দ্র: অতীত বর্তমান ছারখার।।।।