জানিনা ভাল আছি কিনা... খারাপ আছি বোধহয়...  কান পাতলেই শুধু মৃত্যুর সংবাদ... মৃত্যুকে আমরা কোনওদিন জয় করতে পারিনি...কখনও পারবনা,  তবু বেঁচে থাকার অফুরন্ত কারণ রয়েছে.... রয়েছে জীবনের প্রতি সৎ এবং সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি...

মানুষ ছোট থেকেই বড় হয়... আমরা সকলেই তাই... ক্ষুদ্রতর থেকে বৃহত্তর...  বড় হওয়ার পথে অনেক বাঁধা আসে... পারিবারিক অশান্তি, ব্যক্তিগত সমস্যা, শারীরিক অসুস্থতা...  এসবের মধ্যে দিয়েই আমরা বড় হই, বিশ্বাস কর, এই সমস্যাগুলো বিশ্বজনীন...  কেউ রেহাই পাইনা... এর মধ্যেই শান্তি খুঁজে নিতে হয়...

একটা গল্প বলি..  তখন আমি কলেজে পড়ি... সেকেন্ড ইয়ার বোধহয়...  একটা বাচ্চাকে পড়াতাম..  সপ্তাহে ছ'দিন, চারশো টাকা বেতন... মাসের শেষের দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম...  সেসময় আমাদের পাড়াতে একটা মন্দির তৈরি হয়। মন্দিরের সামনে একটা প্রণামীবাক্স রাখা ছিল... সেই বাক্সে বেশ কিছু টাকা জমা পড়েছিল। একদিন মন্দির কর্তৃপক্ষ কমিটির সকলকে ডেকে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করল... সিদ্ধান্ত হল প্রণামীবাক্সের টাকা দিয়ে এলাকার দুঃস্থ এবং মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে... শুরু হল চাঁদা সংগ্রহের কাজ, দুর্গা পূজোতে যেমন চাঁদা কাটা হয়, অনেকটা তেমনই... সকলের কাছে চেয়েচিন্তে.....
অনেকেই সাহায্য করেছিল...  সেসময় আমার মাসিক আয়ের কিছু অংশ বই কেনার জন্য দিয়েছিলাম...  প্রথম প্রথম আফসোস হচ্ছিল... মনে হচ্ছিল হাত খরচের টাকাটা না দেওয়াই বোধহয় ভাল ছিল... কিন্তু বিশ্বাস কর... এখন যখন সেই দিনটার কথা ভাবি... মনটা তৃপ্তিতে ভরে ওঠে... মনে হয় আমার এই শিশুসুলভ জীবনের ঐ একটি মাত্র কাজে নিজের পরিপক্বতা দেখিয়েছিলাম....  এটাই জীবন.. এটাই প্রশান্তি...  আর এইভাবেই আমরা নিজেদের মধ্যে অজান্তেই বেঁচে থাকার বীজ বপন করি.....

মাঝেমধ্যে তোমার অনেক কিছু মনে হয়... মনে হয় বাবা-মায়ের সম্পর্কটা ভাল থাকলে আমাদের পরিবারটা সুখী থাকতো...  পরিবারের আয় আরও বেশি হলে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাতে পারতাম... পড়াশোনাতে আরও ভাল হলে আমরা অন্যের সম্মান পেতাম... ইশ! আমি যদি দাক্তার হতাম... ইশ! ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলে আজ আমি হংকং এ থাকতাম....  বিশ্বাস কর... এই 'যদি' শব্দটা আমাদের জীবনে ভয়ংকরভাবে ডিপ্রেশনের ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়... আমাদের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আয়ত্ত এবং সমর্থ অনুযায়ী আমরা জীবনে কতটা উন্নতি করতে পারি... আমাদের জীবনের মূল বিচার্য বিষয় তাই হওয়া উচিত...।
বললে তুমি হয়তো বিশ্বাস করবেনা আমার এমনও বন্ধু আছে যাকে পরীক্ষাতে পাস করা অপেক্ষায় বেশি ভাবতে হয় পরীক্ষার দিনগুলোর অতিরিক্ত খরচা সে কীভাবে সামাল দেবে...

জীবনে লক্ষ্য সবসময় বড় রাখা উচিত, বিশ্বাস কর এটা খুব প্রয়োজন...  লক্ষ্য বড় না থাকলে জীবন একসময় থেমে যায়... তুমি কতটা অর্জন করতে পারলে তার থেকেও বেশি জানা প্রয়োজন তুমি কতটা চাও... আমাদের সকলের জীবনে ব্যর্থতা আছে, কিন্তু বিশ্বাস কর সফল হলে মানুষ একবারও জানতে চাইবেনা তুমি কতবার ব্যর্থ হয়েছ...

জীবনের ছোটখাটো সুখ, আনন্দ.. এগুলোকে উপভোগ করতে শেখ... জীবন একসময় স্থায়ি হয়ে যাবে.... খেয়াল রাখবে দারিদ্র্যতা কখনও যেন মানসিক শান্তিতে বিঘ্নিত না ঘটায়....

আর প্লিজ... লেখ... কিছু একটা লেখ... লেখা আমাদের জীবনটাকে গোছাতে সাহায্য করে... কঠিন সময়কে ঠান্ডামাথায় সহজভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়....