গতকাল দমদম থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। যেহেতু কৃষ্ণনগরে কিছু কাজ ছিল, তাই কৃষ্ণনগর হয়েই আসতে হয়েছিল...
যখন কৃষ্ণনগর স্টেশনে নামি রাত প্রায় সাড়ে আট'টা, নবদ্বীপে পৌঁছনোর শেষ বাস ন'টা দশ-এ...
এদিকে খিদের জ্বালায় পেটে প্রায় ছুঁচো ডাকছে, বিভিন্নরকম আওয়াজ... বুঝতে পারলাম ভাত ছাড়া কিছুতেই এই খিদে মিটবে না... কালেক্টরির আশেপাশে বেশ কয়েকটা ছোটখাটো গুমটি পেলাম, এগুলোকে হোটেল মোটেই বলা যাবেনা... নিরুপায় হয়ে ওখানেই ভাত খেতে বাধ্য হলাম....
শুধুমাত্র বাড়ি বলে না... যেকোনও আত্মীয়ের বাড়ি খেতে বসলেও খাবার নষ্ট করা আমার এক চিরাচরিত অভ্যাস। উচ্চতা আর বয়সের অনুপাতে কেউ আমাকে খেতে দিলে তার ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক কারণ আমি স্বল্পভোজী...
অর্ধেক ভাত খেলাম, আর বাকি ভাত তরকারি প্লেটে রয়ে গেল... বাড়িতে ভাত মেখে নষ্ট করি, ওগুলো মাখাই নি.... এইটুকু ভদ্রতা না দেখালে নিজেকে শুধু ছোট মনে হয় তাই নয়, অত্যন্ত নোংরা মনে হয়.....
যে ছেলেটি স্তূপীকৃত নোংরা প্লেটগুলো পরিষ্কার করছিল, আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল... আমার মনে হচ্ছিল ভাত নষ্ট করে কোনও মারাত্মক অপরাধ করে ফেলেছি, এবং এই অপরাধে আমার ফাঁসি হওয়া উচিত....
টাকা দিতে গিয়ে দেখি পকেটে একটা পাঁচশো টাকার নোট পড়ে আছে। ধাবার মালিকের কাছে ভাঙানি ছিলনা, তাই পাশের দোকান থেকে একটা হাওয়া ভর্তি কুরকুরের প্যাকেট নিয়ে টাকা ভাঙালাম।
ধাবাতে টাকা দিতে গিয়ে দেখি যে ছেলেটা আমার দিকে কটমট করে চেয়েছিল ও ভাত খাচ্ছে, ডিমের ঝোলের কয়েকটা আলু আর সামান্য একটু ডাল দিয়ে... ভাত টা ঠিক করে মাখানো হয়নি... পুরোপুরি ঝোলের সাথে মেশেনি...
ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল কিছুক্ষণ আগে আমি বেশ কিছুটা ঝোল নষ্ট করেছিলাম, বাটিতে অনেকটা ডালও অবশিষ্ট ছিল.... সেগুলো ফেলে দিতে হয়েছিল....
টাকা মিটিয়ে যখন বাসে উঠলাম আমার মোবাইলে ন'টা দশ... বাস হর্ণ দিয়ে দুলকি চালে চলতে শুরু করেছে.... পৃথিবীর সমস্ত ধাবা পেরিয়ে এক আরামদায়ক জীবনের উদ্দেশ্যে বাস ছুটে চলেছে.....
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন