বিকেলে একলা বসে থাকলে ছোটবেলার অনেক কথা মনে পড়ে... বিশেষকরে টিকটিকি দেখলে আমি যেন সেই ছোটবেলাতে আবার ফিরে যাই...
আমার ছোট সময়ে খুব বিড়ি খাওয়ার শখ ছিল.. দাদু যখন বিড়ি খেত, আমি কল্পনা করার চেষ্টা করতাম বিড়ির স্বাদ ক্যামন হতে পারে... যেহেতু বিড়ি লম্বাটে ছিল তাই একেক সময় ভাবতাম বিড়ি বোধহয় ল্যাংচার মত খেতে, মিষ্টির মত... বিড়ির গন্ধটা খুব ভাল লাগত তা নয়, বরং বিড়ি খেয়ে সেই মুখ নিয়ে কেউ আদর করতে এলে দুর্গন্ধে বমি হয়ে যেত। একবার দাদুর পকেট থেকে একটা বিড়ি বের করে আমবাগানে গেছিলাম... আমবাগাছের ডালে বসে দেশলাই ধরাব, এমন সময় হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি চলে এল... তারপর ভাবলাম ভগবান বোধহয় চান না, আমি বিড়ি খাই.... সেদিনের মত প্ল্যান ভেস্তে গেল....
তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। সন্ধেবেলাতে মামাবাড়ি বসে আছি, হঠাত দেখি একটা টিকটিকি জোনাকি পোকা ধরেধরে খাচ্ছে। টিকটিকিটার উপর খুব রাগ হল। এইভাবে নিরীহ প্রাণিদের হত্যা করে টিকটিকি মোটেই সমুচিত কাজ করছেনা। অবিলম্বে এর একটা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
বাইরে বেরিয়ে দেখি দাদু বিড়ি ধরিয়েছে। বিড়িটা শেষ হতে মিনিট দুয়েক দেরি আছে, তারপরেই দাদু ওটা ফেলবে... আমি বাথরুমে গিয়ে চুপটি করে বসেছিলাম, আর দাদুর মুখ থেকে বিড়িটা ফেলার সময় গুনছিলাম।
একসময় দাদু বিড়িটা উঠোনে ফেলে বাজার করতে চলে গেল। আমি ওটা কুড়িয়ে নিয়ে দুতিনবার ফুঁ দিয়ে মুখের আগুনের ফুলকিটা আরও একটু বাড়িয়ে নিলাম...
একটা দড়ি দিয়ে বাঁধলাম, তারপর ঘরের বাতি সম্পূর্ণভাবে নিভিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করছিলাম।
একটা সময় দেখি টিকটিকিটা জোনাকি ভেবে বিড়ি টা খেতে গেছে, কাছে গিয়ে কামড় দিয়েই খেল ছ্যাঁক.... তারপর নীচে গড়িয়ে পড়ল... যদিও কিছুক্ষণ পর আবার চলতে শুরু করেছিল...
এই ঘটনার পর দাদুর ঘরে ওই বুড়ো টিকটিকিটাকে আর কখনওই দেখিনি... আমার তো খুবই আনন্দ হচ্ছিল.... মনে হচ্ছিল... সত্যিই... বুদ্ধিতে আমি নাইনস্টাইন....
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন