'আই অ্যাম সরি' মানে কী? 'আই অ্যাম সরি' মানে কি কখনও 'আই লাভ ইউ' হতে পারে? আমি ডিকশনারির কথা বলছিনা..  চিরাচরিত মানে...  বহুল প্রচলিত মানে... যেমন অনেক সময় 'আই লাভ ইউ' মানে দাঁড়াই 'আই ডোন্ট কেয়ার'...  'গো এন্ড হ্যাং ইওরসেল্ফ'...

উচ্চমাধ্যমিক পাস করা মানে অনেকটা বড় হয়ে যাওয়া... নিজের ভাল নিজে বুঝতে পারা... মুখের তুলোটে গোঁফদাড়ি তখন প্রায় দৃঢ় এবং মজবুত...
উচ্চমাধ্যমিক দেওয়া মানে কম্পিউটার শেখা... কম্পিউটার না জানলে পৃথিবীর অর্ধেক রহস্য উন্মোচন অসম্ভব...  কম্পিউটারে পৃথিবী চলে, কম্পিটারের মাধ্যমেই মানুষ শপিং করে, গার্লফ্রেন্ড খোঁজে, বিয়ে করে, আবার কখনও কম্পিউটারের সহায়তায় মহাকাশে স্যাটেলাইট  পাঠায়, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে... মা-বাবা বোঝেনা আমাদের কম্পিউটারের দৌড় এম.এস ওয়ার্ড, এক্সেল আর ডসের এক্সিট কমেন্ট মেরে বেরিয়ে আসা.... আর ইন্টারনেট! আমাদের সময়ে ইন্টারনেট সম্পর্কে যে বদ্ধ ধারণা মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যমেধার মানুষের ছিল, তা - 'কম্পিউটারে একমাত্র অসভ্য ছবি দেখা যায়'...।

তাসত্ত্বেও কম্পিউটারে ভর্তি হতে হবে... আকর্ষণ একটাই ছিল...(এই বয়সে আর মিথ্যা কথা বলব না...) আমি ভাবতাম যদি নতুন কারও সাথে আলাপ পরিচয় হয়! এই একদম ওরকম না! আমি ছেলেদের কথা বলছিনা! :p

প্রথম দিন স্যারের মুখে কম্পিউটারের উপযোগিতা আর অপারেশন শুনে আমি ভাবলাম এবছরই কম্পিউটার সায়েন্সে নোবেল প্রাইজ চালু করা উচিত, আর সেই প্রাইজ নিশ্চিতভাবে আমি পাবো....

প্রথম প্রথম বাইনারি নাম্বার নিয়ে খেলতে ভালই লাগত, তারপর পেইন্ট এল... একসময় টাইপ করতে করতে হাত ব্যথা হয়ে গেল...

কম্পিউটার ক্লাস আমি কখনও মিস করতাম না... অবশ্য তার কিছু কারণও আছে.... আমার এক বন্ধু একদিন অকপটে স্বীকার করে টিউশনের ব্যাচে ভাল মেয়ে থাকলে তার মধ্যে একটা গ্রাভিটেশনাল ফোর্স কাজ করে... কিছুতেই ঘরে থাকতে পারেনা...  পড়তে যেতে বাধ্য হয়... আমার মধ্যে একই ক্রিয়া কাজ করত কিনা জানিনা.....। তবে.....

আমাদের ব্যাচে একটি মেয়ে আসতো... দিদি বলা উচিত ছিল... কারণ আমি তখন ক্লাস টুয়েলভ্ এ আর সে এম.এস.সি করছে... তাও আবার ম্যাথম্যাটিকস-এ।

কিছুকিছু ধারণা কতটা নৈতিকতা অগ্রাহ্য করে সে বিষয়ে আমি খানিকটা বিভ্রান্ত। লোকাচার অনুযায়ী সুন্দর মেয়ে দেখা পরিহার্য বা প্রতিষিদ্ধ কিনা তা আমার আজও জানা নেই... একটা গল্প লিখতে হলে নিষিদ্ধ শব্দাবলীর সীমারেখা কতদূর তা এখনও গবেষণা করে উঠিতে পারিনি। তাই মাঝেমধ্যেই কম্পিউটার ক্লাসে আমার ম্যাথম্যাটিকসের দিকে মন চলে যেত....

আমি যতই কারও কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি, ব্যাপারটা ততটাই ন্যক্কারজনক এবং ঘৃণ্য অবস্থাতে পরিণত হয়। তাই একসময় ভাবলাম অঙ্কে আমার মাথা কাঁচা, তাই কম্পিউটারে মননিবেশ  করাই শ্রেয়....

কম্পিউটারের ক্লাসে বড়বড় হরফে নীরবতা পালনের নির্দেশ দেওয়া ছিল... আমি তাসত্ত্বেও মোবাইলে গান বাজাচ্ছিলাম, বেশ উচ্চস্বরে 'বাবুজি যারা ধীরে চলো....'

ম্যাথম্যাটিকস্ ক্লাসে এল... আমাকে গান বন্ধ করতে বলল... আমি নাছোড় বান্দা, জাস্ট গানের সাউন্ডটা কমিয়ে দিলাম.... এরপর শুরু হল ভূমিকম্প...  সেখান থেকে ৎসুনামি...

না... মানে সত্যিকারে নয়... কথা কাটাকাটি এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে প্রায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে... আমি গান শোনার উপযোগিতা বলি তো সে বলে কোনও নিকটাত্মীয় মারা গেলে সেই সময় গান শোনা কতটা যথোপযুক্ত...  নীরবতা বজায় রাখতে বলা হলেও আমি কেন গান চালিয়েছি! এই সমস্ত হাজারো প্রশ্ন....

সত্যি কথা বলতে কি সেদিন হেরে গিয়েছিলাম... আমার মনে হচ্ছিল কেউ আমার সমস্ত চেতনা কেড়ে নিয়েছে... আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছি...  মাঝ সমুদ্রে দিগভ্রান্ত হয়ে পড়েছি.....

ক্লাসের বাকি সময়টা মরার মত সেন্সলেস হয়ে বসেছিলাম। স্যারের ক্লাসে বিন্দুমাত্র মনযোগী হতে পারিনি.... আমার মাথার আগুন তখনও নেভেনি...

হঠাত ক্লাসের নীরবতা ভাঙল... মেয়েটি ক্লাসের মধ্যে বমি করছে... স্যার আমাকে নির্দেশ করে মিস ম্যাথম্যাটিকসকে ওয়াশ রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেন... আরও বেশ কিছুক্ষণ বমি হওয়ার পর ও মুখটা ধুলো...  আমি রুমালটা এগিয়ে দিলাম...
স্যারে ক্লাসে ব্যস্ত ছিলেন...  ক্লাসের বাকি সমস্ত ছেলেরা আমার মতই গর্দভ, তাই স্যার আমাকেই ভরসা করলেন... দাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে বললেন...

তেমন কিছু না... অত্যন্ত ঠাণ্ডাগরম লাগার কারণে এই বিপত্তি...  যাক্! কিছুটা নিশ্চিত হওয়া গেল...আমি কিছু ওষুধপাতি কিনে ওর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম....

খুব বড় বাড়ি হলে... অথবা বাড়ির সোফা খুব বড় হলে... কিংবা লোকজনের পরিমাপ আমার থেকে বড় হলে আমি বড় কনফিউজড হয়ে যাই, ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা কোথায় বসা উচিত....  আমাকে কিছুক্ষণ বসে থাকতে বলা হল... তারপর চা-কফি-মিষ্টি...

শেষে বাড়ি ফেরার সময়ে নরম করে একটা থ্যাংকস...  আর তার সাথে অতিরিক্ত 'আই অ্যাম সরি'......

আমরা দিনে প্রায় হাজার-হাজার লোকের সাথে মিলিত হই, সবাই যে ভাল তা নয়... তবে এও অনেকসময় ঘটে... প্রাথমিক কিছু খারাপ লক্ষণ দেখলেই আমরা অনেককে এড়িয়ে যেতে থাকি... তাদের মধ্যেকার মহত্ত্ব, দয়াশীলতা, ভাল-মানুষ অনাবিষ্কৃত রয়ে যায়.... আর এখনকার দিনে! আমরা চোখ বন্ধ করে কাউকেই যেন ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারিনা.... তবে এটা দরকার.. ভীষণভাবে দরকার.........