বাথরুমটা মশাদের জন্য বানিয়েছি। তাই মাঝেমধ্যে হুট করে ঢুকে পড়লে অনুপ্রবেশকারী ভেবে কামড় দেয়। মশার কামড় মেয়েদের কটু কথার থেকেও যন্ত্রণাদায়ক; কামড় খাওয়ার অনেক পরেও তার রিঅ্যাকশন থাকে। মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য দেশের যুবকদের প্রশিক্ষণ দিলে মন্দ হয়না, এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। আগডুম বাগডুম দেশে মশা রপ্তানি করলে দেশের জাতীয় আয় বাড়বে। আগডুম বাগডুম একটি উন্নতশীল দেশ, মশা ওদের প্রধান খাদ্য। ভাতের সঙ্গে মশা ভাজা, মশার চাটনি, মশার সুপ এমনকি খাওয়ার শেষে কাঁচা মশা... ওই দেশের লোকে সবই লোক খায়।

আমার বাঁহাতের কনুই তে এজটা মশা বসেছে। মশাটার পেটের দিকটাই সাদা রঙ করা, এটা আর্টিস্ট মশা, এর ছবি চড়া দামে বিক্রি হয় বাজারে... কিন্তু এই মশার আমার রক্ত খাওয়া উচিত নয়... আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলাম... কনফিডেন্টলি একে মারতে হবে।

প্রথমপ্রথম যখন মশার কয়েল আসে আমি বাথরুমে জ্বালাতাম। মশারাও আমার মত, অল্পকিছুতেই মাথা ঘুরে পড়ে.. বেশ কিছুক্ষণ কয়েল জ্বলার পর যখন সব মশা গুলো মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ত... আমি কয়েলের আগুনটা ওদের মুখের কাছে ধরতাম... হাল্কা করে একটা আওয়াজ হত... পটাশ! এভাবেই মশাগুলো মারা যেত...

আর্টিস্ট মশাটা বেশ সান্তিতে আমার রক্ত চুষছে, আমি ষড়যন্ত্র করে ফেলেছি, চোখ বুজে ভগবান কৃষ্ণের নাম স্মরণ করে  সজোরে এক থাপ্পড় মেরে দিলাম। ভগবানের নাম নিয়ে কোনও কাজ করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে নিরানব্বই শতাংশ, আমি একপ্রকার নিশ্চিত যে মশা মারতে সক্ষম হয়েছি।জোরে থাপ্পড় মারার ফলে দুহাতেই কিছুটা যন্ত্রণা শুরু হয়েছে... আমি ধীরেধীরে চোখ খুললাম... না! কোনও মশা মরেনি... কিছুটা দুঃখ এবং হতাশ হয়ে আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম।

পেট দিয়ে মারাত্মক কিছু ব্যাঙ ডাকছে। খিধে পেলে এরকম অনেক ব্যাঙ আমার পেটে লাফঝাঁপ দেয়, খুব খিধে পেলে ডাকে... আমি প্যানটিন শ্যাম্পুর ডিব্বাটা নিয়ে মাথায় ঘষতে লাগলাম.... মেয়েরা শ্যাম্পু করলে বোঝা যায়, সুমিষ্টঘ্রাণ বেরোয়, ছেলেদের বেরোয় না... কেন বেরোয়না তা জানিনা... হয়তো বেরোলেও খেয়াল করিনা খুব একটা... এই শ্যাম্পুটা পৃথিবীর সব থেকে খারাপ শ্যাম্পু... ভুয়া কোম্পানি...  প্রোডাক্ট রিভিউ তে এমনই লিখেছিলাম, আরও লিখেছিলাম... এর থেকে মাথায় গোবর মাখলে বেশি ফ্যানা হয়। কোম্পানির তরফ থেকে কোনও প্রত্যুত্তর আসেনি... মোটামুটি পঁচাত্তর গ্রাম শ্যাম্পু নিয়ে খুব করে মাথায় ঘষলাম, তাও ফ্যানা হলনা, বরং চুল চ্যাটচ্যাটে আঠালো হতে থাকল ... আমার কান্না এসে গেল... ভাবছিলাম কোন জম্মে এমন পাপ করে তার ফল ভোগ করছি!
মনে হচ্ছিল চৌবাচ্চায় চোখমুখ গুঁজে ডুবি থাকি।

মাথা ঠান্ডা রেখে ঘরে ঢুকলাম, তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে শ্যম্পুর ডিব্বাটা হাতে নিলাম, মেল আইডি খুঁজে আজ আর একটা প্রোডাক্ট রিভিউ দেব...
গত দুসপ্তাহ ধরে শ্যাম্পু করে একদিনও ফ্যানার দেখা পাওয়া যায়নি... বরং বারংবার চুলে জট পাকিয়েছে, দ্বিগুণ পরিমাণে তেলচিটে, চ্যাটচ্যাটে আঠালো  হয়েছে...

এই তো এম.আর.পি লেখা, ম্যানুফ্যাকচারিং ডেটও ঠিক আছে... কিন্তু একি! এ তো কন্ডিশনার!

আজ আমার ভাত খেতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে এক সপ্তাহ উপোষ করে থেকে মরে যাই...