- পাছায় লাথি মারলে চার আনা পয়সা বের করার মুরোদ নেই, আর তুই কিনা ঈশিতার সঙ্গে প্রেম করতে চাস? জানিস ওর বাবা তোকে চোদ্দবার কিনে আঠাশবার বাজারে বেচতে পারে। মেইনটেনান্স সামলাতে পারবি?
- জীবনের ছাব্বিশটা বছর প্রেম সংক্রান্ত গবেষণায় একান্তভাবে নিয়োজিত থাকার পর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার অবশ্যই কিছু কারণ আছে।
- ঈশিতা সংস্কৃত অনার্স, দেখতে সুন্দরি। যারা সংস্কৃত নিয়ে পড়ে তারা সাধারণত সংস্কৃতিসম্পন্ন হয়, বাক্যগঠনগত ভুল এবং মারাত্মক কিছু বানান ভুল থাকা সত্ত্বেও তোর চার্লাইনের কবিতাগুচ্ছ লাইক করতে পারে.... এর বাইরে কোনও কারণ থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
- ঈশিতার সবথেকে বড় গুণ ও ভালোবাসতে জানে। পড়ন্ত বিকেলের অন্ধকারাচ্ছন্ন অর্জুন গাছটার নীচে এই অন্ত্যজ অধম উদাসীন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে ও বুঝতে পারে, আজ 'মন খারাপ'। ওর হাতটা নিয়ে যখন আমার কপালের উপর দিয়ে চালনা করে, যখন আমার পিঠ চাপড়ে দেয় - তখন দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এল-নিনো থেমে যায়। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা শান্ত হয়ে পড়ে। পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ ভুলে আমি তখন সুচেতা। এই গুণটা আমার মায়ের ছিল জানিস, আমার মাসিরও।
- এক মিনিট দাঁড়া ভাই, চোখের নীচে জল এসে গেল। একটু রুমাল দিয়ে মুছে নিই। তুই শালা একটা মহা জ্যাদোর! যখনতখন ইমোশনাল করে দিস। আচ্ছা! এবার বল রুমা-ঝুমা-সোমা থাকতে ঈশিতা ক্যানো? বড়লোক ফ্যাক্টর আদৌ কী কোনও ভূমিকা রাখে ?
- একজন মানুষ নিজেকে তখনই অন্যের কাছে পুরোপুরিভাবে সঁপে দিতে পারে, যখন নিজের জীবনের চাওয়া-পাওয়ার কোনও হিসেব রাখতে হয়না। আমি যখন ঈশিতার সঙ্গে কথা বলি, তখন ওকে ভাবতে হয়না মায়ের কাশির ওষুধ শেষ, পরের মাসে বাবার বিপি কতটা বাড়বে, মাসকাবারি হিসেবের খাতাটাতে কত টাকা বাকি পড়েছে, প্রেমের সঙ্গে অভাবের ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক চিরন্তন। আসলে কী জানিস! প্রেম করার জন্য একটা সবুজ মনের খুব প্রয়োজন, শীতের সকালে উর্বর দোঁয়াশ মাটির উপর সবুজ ঘাস..... দেখেছিস কখনও?
- না ভাই দেখিনি। আমার গীতার মা টাকে যেদিন বিয়ে করলাম বড় ভালোবাসতো আমায়। উচ্চমাধ্যমিক পাস মেয়ে বিয়ে করলাম, কারণ তাদের মন সবুজ। নিষিক্ত, পরিণত, পরিপক্ব মনে যেদিন প্রেমের প্রথম অঙ্কুরোদগম ঘটলো বুঝে গিয়েছিলাম, সংসার মানে প্রেমের আকস্মিক জোয়ার ভাটা। এখন হয়তো সমস্ত প্রেম ক্ষয়িভূত হয়ে দায়িত্ববোধ এ পরিণত হয়েছে। কাল রাত দশটা বাজে, আমি গীতার মায়ের গায়ের উপর হাত রেখে শুয়েছিলাম, মাঝখানে গীতা। এই হাত রাখাটা ও টের পেয়েছিল কিনা জানিনা, ক্লান্ত শরীরে সত্যিই প্রেম আসেনা। হঠাত্ গীতা কুঁকিয়ে কেঁদে উঠলো, এটা গীতার খিদের কান্না.... বুঝতে পারি। আমূল দুধের কৌটা খুলে দেখি, দুধ নেই। গীতার মা আমায় আগেই জানাতে পারতো, কিন্তু জানায়নি। ও আমার সবই জানে... এটাও জানে তিনদিন কাজের টাকা পাওয়া যায়নি। গীতার মা ঘুম থেকে উঠলো... আমরা দুজন দুজনের নিরুপায় চোখের দিকে চেয়ে রইলাম.....হয়তো গীতার মা এখন আমার থেকেও আমার এই ছোটখাটো দুঃখকষ্ট গুলো বেশী ভালোবাসে।
প্রেম বিষয়টা কোনও গাণিতিক নিয়ম মানেনা বুঝলি!তবু, কখনও আমরা প্রেম করি, আর কখনও প্রেমের নামে বিলাসিতা।
Sudip Sen
08/02/16
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন