#পঞ্চগ্রাম
১.
একসময় নীলকর সাহেবরা বলপূর্বক নীলচাষ করার জন্য গ্রামে কিছু আদিবাসী নিয়ে এসেছিল। তারপর থেকেই গ্রামের এক কোণে তারা বসতি স্থাপন করে। স্বাধীনতার পরেও তারা উত্তরপূর্ব ভারতে ফিরে যায়নি। কিছু শিক্ষিত সাধারণ লোক পাড়াটার নাম দিয়েছিল 'বুনোপাড়া'। তারপর মান্ডি যেদিন স্কুল শিক্ষকের চাকরি পেল, বুনো পাড়ার নাম রাতারাতি বদলে গেল... নতুন নাম 'বাঙাল পাড়া'...।
২..
ভগবান ডাঙায় হিন্দু মুসলিম উভয় জাতির বাস। গ্রামের সমস্ত লোকজন ঠিকানাতে গ্রাম+ডাকঘর ভগবান ডাঙা লিখত। একদিন রাজনীতিকে কেন্দ্র করে পাড়ায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগল.... তারপর থেকে হিন্দুরা ঠিকানাতে লিখত ভগবান ডাঙা আর মুসলিমরা লিখত ডাঙাপাড়া।
৩...
নসিব জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এখনও হামিদপুরর বাড়িতে ব্রাহ্মণ দিয়ে সরস্বতী পূজো করে। কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলে 'ঠাকুর কী তোদের একার নাকি?'.... আমার কিন্তু ওর ওপর এখনও রাগ আছে, একদিন কোরবানিতে ক্ষীর খাওয়ানোর নাম করে পায়েস খাইয়েছিল....
৪....
নতুনগ্রামে প্রথম যেদিন সাধুটা এল, গ্রামের লোকজন ভেবেছিল ক্ষেপা পাগল কিছু একটা হবে... অনেক পরে জানা গেল প্রজ্ঞাদাসজী বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, এবং গোল্ড মেডালিস্ট... রিসার্চের বিষয়বস্তু ছিল কার্ল মার্ক্স এবং নিম্বার্কীয়দর্শন... কার্ল মার্ক্সের অনেক কথায় শ্রীমদভাগবত গীতায় লেখা আছে....সেদিন বোঝাচ্ছিল, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই.......
৫.....
একদিন
সমস্ত নতুনগ্রাম নিউটাউন হবে, তারপর রাজারহাট, ইকোপার্ক আর গগনচুম্বী ফ্ল্যাট। 'একান্নবর্তী পরিবার' পরিবর্তিত হবে 'নিউক্লীয় ফ্যামিলি'তে... স্বতঃসিদ্ধ চার্লাইন আবার লেখা হবে....
"গ্রাম উঠে গিয়েছে শহরে
শূন্য ঘর, শূন্য গোলা,
জমি আছে পড়ে...
আগাছায় ভরেছে উঠোন।
সূর্য ঘাটে গিয়েছে কখন!"
Sudip Sen
28 Feb
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন