#পাঁচ_এ_পঞ্চবাণ......
১.
স্কুলের মাঠে টুয়েন্টি নাইন খেলছি। রঙ করেছি, তাই হিসেব রাখতে হচ্ছে কটা রঙ বেরোল। হঠাৎ বাপন এল হন্তদন্ত হয়ে...
- একটা চাকরি পেলে কী একজন মানুষকে স্মার্ট বলা যেতে পারে?
- তা কিছুটা পারে। ক্যানো?
- অনুকে প্রপোজ করেছিলাম, অনুস্মিতা। আমরা দুজনেই জিও পাস নিয়ে একই কলেজে পড়ি।
বললো.....
তোমার মত ছেলে আমি এক্সপেক্ট করিনা। একটু স্মার্ট, ইন্টেলিজেন্ট আর হ্যান্ডসাম...
রঙের হিসেব আমি রাখতে পারিনি, সেই বাজিতে হেরে গিয়েছিলাম।
২..
সেদিন স্কুলমাঠে শুভঙ্কর অনেক কেঁদেছিল। অনেকবার বুঝিয়ে বলেছি অগ্রদ্বীপে আমি থাকি কম, কিছুতেই মানছিল না।
'ওর সঙ্গে দেখা হলেও কথা বলিনা, চোখে চোখ পড়লেও এড়িয়ে চলি'।
চোখের জল আর মনের অভিমান নিয়ে এই সমস্ত অভিযোগ করছিল আমার বিরুদ্ধে।
শুভঙ্কর এখন নিয়মিত মদ খায়। কেইবা আছে ওর জীবনে এক পাঁচ বছরের ছেলে শুভম ছাড়া...
ক্লাস ইলেভেন এ প্রেম করে বিয়ে করেছিল ভগবতীকে। অভাবের সংসারে জানালা দিয়ে প্রেম পালিয়ে যায় শুনেছি.... গতবছর হঠাৎ করে ভগবতীর মাথা খারাপ শুরু হয়... মারা যায়....
শুভঙ্কর সত্যিই খুব কাঁদছিল, ভগবতীকে ঘাটে নিয়ে যাওয়ার দিন কোনও বন্ধুকে ও পাশে পায়নি।
৩...
আমাদের স্কুলটাতে ইংরেজি পড়াতেন অশোক কুমার সাহা মহাশয়। পড়ানোর সময় স্যারের কথা আটকে যেত... অনেকে স্যারকে পিছনে বলত অশোক তোতলা। আমিও ব্লাকবোর্ড'এ একদিন এই নামটা লিখেছিলাম 'অশোক তোতলা'। স্যার ডাস্টার দিয়ে মুছেছিলেন। তারপর থেকে স্যার আমাকে নটার সময় স্কুলে যেতে বলতেন, দুঘণ্টা আলাদা কোচিং দিতেন, গ্রামার শেখাতেন। সেবার বাংলাতে আমি বাহাত্তর পেয়েছিলাম, আর ইংরেজিতে সাতাত্তর।
একটা মানুষ একজনকে এভাবেই বদলাতে পারে... সেটা স্যার শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
৪....
ক্লাস এইটে ইন্দ্র পড়ত 'সি' সেকশন এ, আমরা পড়তাম 'এ' তে। মাধ্যমিকের সময় ও আমাদের সঙ্গে 'এ' তে চলে এলেও, টেস্ট পরীক্ষাতে কোয়ালিফাই করতে পারেনি। আমরা সব বন্ধুরা মিলে স্যারের হাতেপায়ে ধরে ওকে মাধ্যমিকে বসতে দেওয়ার অনুরোধ করি। উচ্চমাধ্যমিকে ভূগোলে তিরাশি পেলেও, মোট নম্বর যেহেতু পঁচাত্তর শতাংশ হয়নি, তাই ভূগোলে অনার্স পায়নি। অগত্যা ভূগোল পাস নিয়ে কাটোয়া কলেজে পড়াশোনা শুরু করে...
তারপর অনেক কটা বছর কেটে গেছে। ইন্দ্র ভূগোলে মাস্টার্স করেছে। আগেরদিন জি.আই.এস নিয়ে কথা বলছিল। এখন ইন্দ্রর একটাই টার্গেট নেট..সেট..পিএইচ.ডি।
ছেলেটার ছোট থেকেই ভূগোল নিয়ে পড়ার বড্ড শখ ছিল।
৫.....
অনুলেখা ম্যাডামকে স্টাফরুমে সিগারেট খেতে দেখেছি বারকয়েক। এমনকি ক্লাসে এসে সিগারেটের গন্ধও পেয়েছি। ম্যাডাম কী তবে মদও খান? খৈনি অথবা গুটখা? সত্যান্বেষণের জন্য মন উৎসুক হয়ে উঠলো। একদিন রবীন্দ্রপল্লিতে গেলাম, ম্যাডামের পাড়ায়।
সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম।
ম্যাডাম আনম্যারেড। বিয়ে করবেননা... এমনই স্থির করেছেন। ম্যাডামের বাড়িটার নাম 'জীবন দান'। পাশের পানবিড়ির দোকানদার বললো....
"ম্যাডামের তো এটা বাড়ি নয়, একটা অনাথাশ্রম বলা যেতে পারে, অনেক অনাথ শিশু এখানে বড় হচ্ছে"।
দোকানের ঝুলন্ত টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে একটা আর্টিকেল বেরিয়েছে..
'আ সিঙ্গেল মাদার অফ মেনি চিল্ডরেন্স।'
ম্যাডামের ছবিটা দেখে চিনতে দেরি হয়নি।
সেদিন জীবনের প্রথম সিগারেটটা ধরিয়েছিলাম। এভাবে আমিও যদি একজন অনুলেখা ম্যাডাম হতে পারি.... সেই আশায়.....।
Sudip Sen
29 Jan 17...
১.
স্কুলের মাঠে টুয়েন্টি নাইন খেলছি। রঙ করেছি, তাই হিসেব রাখতে হচ্ছে কটা রঙ বেরোল। হঠাৎ বাপন এল হন্তদন্ত হয়ে...
- একটা চাকরি পেলে কী একজন মানুষকে স্মার্ট বলা যেতে পারে?
- তা কিছুটা পারে। ক্যানো?
- অনুকে প্রপোজ করেছিলাম, অনুস্মিতা। আমরা দুজনেই জিও পাস নিয়ে একই কলেজে পড়ি।
বললো.....
তোমার মত ছেলে আমি এক্সপেক্ট করিনা। একটু স্মার্ট, ইন্টেলিজেন্ট আর হ্যান্ডসাম...
রঙের হিসেব আমি রাখতে পারিনি, সেই বাজিতে হেরে গিয়েছিলাম।
২..
সেদিন স্কুলমাঠে শুভঙ্কর অনেক কেঁদেছিল। অনেকবার বুঝিয়ে বলেছি অগ্রদ্বীপে আমি থাকি কম, কিছুতেই মানছিল না।
'ওর সঙ্গে দেখা হলেও কথা বলিনা, চোখে চোখ পড়লেও এড়িয়ে চলি'।
চোখের জল আর মনের অভিমান নিয়ে এই সমস্ত অভিযোগ করছিল আমার বিরুদ্ধে।
শুভঙ্কর এখন নিয়মিত মদ খায়। কেইবা আছে ওর জীবনে এক পাঁচ বছরের ছেলে শুভম ছাড়া...
ক্লাস ইলেভেন এ প্রেম করে বিয়ে করেছিল ভগবতীকে। অভাবের সংসারে জানালা দিয়ে প্রেম পালিয়ে যায় শুনেছি.... গতবছর হঠাৎ করে ভগবতীর মাথা খারাপ শুরু হয়... মারা যায়....
শুভঙ্কর সত্যিই খুব কাঁদছিল, ভগবতীকে ঘাটে নিয়ে যাওয়ার দিন কোনও বন্ধুকে ও পাশে পায়নি।
৩...
আমাদের স্কুলটাতে ইংরেজি পড়াতেন অশোক কুমার সাহা মহাশয়। পড়ানোর সময় স্যারের কথা আটকে যেত... অনেকে স্যারকে পিছনে বলত অশোক তোতলা। আমিও ব্লাকবোর্ড'এ একদিন এই নামটা লিখেছিলাম 'অশোক তোতলা'। স্যার ডাস্টার দিয়ে মুছেছিলেন। তারপর থেকে স্যার আমাকে নটার সময় স্কুলে যেতে বলতেন, দুঘণ্টা আলাদা কোচিং দিতেন, গ্রামার শেখাতেন। সেবার বাংলাতে আমি বাহাত্তর পেয়েছিলাম, আর ইংরেজিতে সাতাত্তর।
একটা মানুষ একজনকে এভাবেই বদলাতে পারে... সেটা স্যার শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
৪....
ক্লাস এইটে ইন্দ্র পড়ত 'সি' সেকশন এ, আমরা পড়তাম 'এ' তে। মাধ্যমিকের সময় ও আমাদের সঙ্গে 'এ' তে চলে এলেও, টেস্ট পরীক্ষাতে কোয়ালিফাই করতে পারেনি। আমরা সব বন্ধুরা মিলে স্যারের হাতেপায়ে ধরে ওকে মাধ্যমিকে বসতে দেওয়ার অনুরোধ করি। উচ্চমাধ্যমিকে ভূগোলে তিরাশি পেলেও, মোট নম্বর যেহেতু পঁচাত্তর শতাংশ হয়নি, তাই ভূগোলে অনার্স পায়নি। অগত্যা ভূগোল পাস নিয়ে কাটোয়া কলেজে পড়াশোনা শুরু করে...
তারপর অনেক কটা বছর কেটে গেছে। ইন্দ্র ভূগোলে মাস্টার্স করেছে। আগেরদিন জি.আই.এস নিয়ে কথা বলছিল। এখন ইন্দ্রর একটাই টার্গেট নেট..সেট..পিএইচ.ডি।
ছেলেটার ছোট থেকেই ভূগোল নিয়ে পড়ার বড্ড শখ ছিল।
৫.....
অনুলেখা ম্যাডামকে স্টাফরুমে সিগারেট খেতে দেখেছি বারকয়েক। এমনকি ক্লাসে এসে সিগারেটের গন্ধও পেয়েছি। ম্যাডাম কী তবে মদও খান? খৈনি অথবা গুটখা? সত্যান্বেষণের জন্য মন উৎসুক হয়ে উঠলো। একদিন রবীন্দ্রপল্লিতে গেলাম, ম্যাডামের পাড়ায়।
সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম।
ম্যাডাম আনম্যারেড। বিয়ে করবেননা... এমনই স্থির করেছেন। ম্যাডামের বাড়িটার নাম 'জীবন দান'। পাশের পানবিড়ির দোকানদার বললো....
"ম্যাডামের তো এটা বাড়ি নয়, একটা অনাথাশ্রম বলা যেতে পারে, অনেক অনাথ শিশু এখানে বড় হচ্ছে"।
দোকানের ঝুলন্ত টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে একটা আর্টিকেল বেরিয়েছে..
'আ সিঙ্গেল মাদার অফ মেনি চিল্ডরেন্স।'
ম্যাডামের ছবিটা দেখে চিনতে দেরি হয়নি।
সেদিন জীবনের প্রথম সিগারেটটা ধরিয়েছিলাম। এভাবে আমিও যদি একজন অনুলেখা ম্যাডাম হতে পারি.... সেই আশায়.....।
Sudip Sen
29 Jan 17...
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন