সেক্টর থ্রী, এফ.সি ব্লক। সামনে একটা চায়ের দোকান। একটা বুড়ি এই দোকানের মালকিন। সাধারণত এই চৌক পাউরুটি গুলোর বাজার দাম তিনটাকা, অগত্যা ছ'টাকা দিয়ে একটা পাউরুটি আর ছ'টাকা দিয়ে দুটো কলা আর একটা লাড্ডু কিনলাম... দাম ছ'টাকা। মোট হল আঠারো টাকা।
আজকের দিনে দু'টাকা ফেরত পাওয়া কঠিন। অগত্যা দুটো লজেন্স কিনলাম।

এই লজেন্স টা না নিলেও কোনও ক্ষতি হত না। দুটাকা ছেড়ে দেওয়া যেত। কিন্তু না। এইভাবে ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়ে গেলে ওদেরও ফেরত দেওয়ার ইচ্ছে হবেনা। এখনকার সব জিনিসপত্রের দাম এরকম, রাউন্ড ফিগার। এই ধরুন আপনি লোকাল ট্রেনে এক প্লেট ঘুগনি খাবেন.... তো আপনাকে পাঁচটাকা দিতে হবে... কিংবা দুটো নিতে হবে। নয়লে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বিভিন্ন বাকবিতণ্ডা শুরু... উভয়পক্ষ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য নিদারুণভানে তর্ক করে যাবে।

সল্টলেক আমার একদম অপছন্দের জায়গা। আমার মনে হয় এটা একটা শ্মশানঘাট। সচরাচর মানুষজন চোখে পড়ে না। মানুষ দেখা গেলেও মনে হয় তাদের সঙ্গে কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই। ক্যামন যেন ফাঁকাফাঁকা জনশূন্য একটা এলাকা। কলকাতার অন্যান্য  জায়গার মত এখানে স্ট্রীট ফুড পাওয়া যায় না। আর যেসব খাবার পাওয়া যায় তা বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে দেখার মত, খাওয়ার মত একদমই নয়।
এছাড়াও পকেটের দিকেও তাকাতে হয়।

অনেকদিন বাসে বা ট্রেনে 'মানুষ চেনার সহজ উপায়' বা 'প্রেমে পড়ার হাজার টিপ্স' টাইপের বই দেখেছি। আমারও ওরকম একটা চটিবই লেখার অনেক শখ। দাম হবে দশটাকা আর বই এর নাম হবে 'বেকারের হাজার সুবিধা'।

এই যেমন ধরুন আমি যখন কারও সঙ্গে বেড়াতে যাই, তারা জানে আমি বেকার। আমার পকেটের একটাকাও খরচা হয়না। এটাকে কী বলা হয়...? দয়া? 'দয়া' শব্দটা সাংঘাতিক স্পর্শকাতর। একদম ভিতর থেকে লাগে।

আমি যে বাড়িটার সামনে এখন দাঁড়িয়ে আছি সেটা বাড়ি না একটা জাহাজ... বলা কঠিন। হয়তো বাড়ির মালিক ভেবেছিলেন একটা জাহাজ তৈরি করে বসবাস করবেন। কিন্তু জাহাজ যে এইভাবে টাইটানিকের মত ডুবে যাবে তা হয়তো তিনি আন্দাজ করতে পারেননি। না হয়েছে বাড়ি... না জাহাজ।

আমার সামনে দিয়ে একটা হলুদ ট্যাক্সি চলে গেল। একটা ভুটানি যুবা হাতটা বার করে দাঁড় করালো।
আমি ট্যাক্সিতে কম চাপি। আমার জীবনে কলকাতায় আমি মোটে তিনবার ট্যাক্সিতে চেপেছি। তিনদিনই সাথে অনেক লাগেজ ছিল। একা একা ট্যাক্সিতে চাপতে গায়ে লাগে, মনে হয় অযথা অর্থের অপচয়।

আচ্ছা! এখানে আর কতক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করব...। ভাবছি একটু এগিয়ে যাই...কিংবা কাউকে জিজ্ঞেস করি কতক্ষণ অন্তর এখানে বাস আসে....।

এই মেয়েটাকে কী জিজ্ঞেস করা যাবে..? জিন্স টপ... গলাতে স্কার্ফ, একটা অন্যধরণের জ্যাকেট... হাতে ইয়াব্বড় একটা মোবাইল। দেখেই মনে হচ্ছে অত্যন্ত ব্যস্ত, যদিও অনেক সময় মানুষ ব্যস্ততা দেখাই....  ব্যস্ততা একটা বাহ্যিক রূপ... নারীদের সৌন্দর্যবর্ধক অলংকার।

নাহ্! একে জিজ্ঞেস না করাই ভাল... ঠিকঠাক ক্লাস ম্যাচ হচ্ছেনা। আমি বরং আরেকটু হাঁটি সামনে কোনও অটোওয়ালা বা সমপ্রজাতিভুক্ত কাউকে পেলে তাকেই জিজ্ঞেস করব.....

Sudip Sen
26/01/'16
আচ্ছা! প্রজাতন্ত্র মানে কী?