গোপালকে বললাম,
- তা গোপাল, তুই তো রান এ ফার্স্ট হলি, তোকে এবারের সরস্বতী পুজোতে একটা বই উপহার দেব।
গোপাল বললো...
বই! বই দিয়ে কী হবে? বুনি ছিঁড়ে দেবে। তুমি বরং একটা কুরকুরে কিনে দিও আমায়। চা-এ চুবিয়ে খাবো।
বোনকেও দেব দু-এক কামড়।
আমি ভাবলাম সত্যিই তো, কথায় লজিক আছে। আমি শালা এত পড়েও কলেজ পাস করতে পারলাম না। গোপাল এইটুকু বাচ্চা আবার বই দিয়ে কি করবে!

অনেকেই জিজ্ঞেস করে আমি কোন ক্লাসে পড়ি?
ইয়ে মানে, পড়ি বলতে তেমন কিছুই নয়।
এগারোতে মাধ্যমিকে, বারোতে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েই পড়াশোনাতে বারোটা বাজলো। তেরো তে ফাস টিয়ার, চোদ্দো তে (ভ্যাটা খেলার ইয়ে মাস্টার নয়) সেগেন ডিয়ার। তারপর পনেরো তে এসে দেখি দুই ইয়ারেই সাপ্লি! পড়াশোনা ছেঁড়ে দিলাম।
তারমানে আমি উচ্চমাধ্যমিক পাস। তো যাইহোক, মাঝখানে ভেবেছিলাম কথাঞ্জলির উপর ক্রিটিকাল অ্যানালিসিস লিখব, তা আর হলো কৈ?
জেমস প্রিন্সেপ কে ডেকেছি। উনি এলেন না পাঠোদ্ধার করতে! আমার আর দোষ কোথায়?

গোপালের বাবা ফ্যান সাড়াতে পারে।
তো একদিন জিজ্ঞেস করলাম, গোপাল তোর বাবা ট্রেন চালাতে পারে? এলে পেলেন চালাতে পারে? জাহাজ চালাতে পারে?
গোপাল সবেতেই বলে হ্যাঁ।
একদিন জিজ্ঞেস করলাম, ইলেক্ট্রিক ট্রেনে ডিজেল ভরে তোর বাবা ধোঁয়া ছাড়িয়ে সেই ট্রেন চালাতে পারে?
গোপাল বলে হ্যাঁ।
আরেকদিক জিজ্ঞেস করলাম, তোর বাবা ঘোরার ডিমের মামলেট বানাতে পারে?
গোপাল বলে হ্যাঁ।
আরেকদিক জিজ্ঞেস করলাম, তোর বাবা সিংহের সিং দিয়ে বাঁশি বানাতে পারে?
গোপাল আবার বলে হ্যাঁ।
তারপর জিজ্ঞেস করলাম,
ট্রেনের চাকা লিক হয়ে গেলে তোর বাবা হাওয়া দিতে পারে?
এবার গোপাল চরম রেগে গেল, উল্টে জিজ্ঞেস করলো,

 - তুমি পারো?

গোপাল বেশ বুদ্ধিমান ছেলে, রোজ স্কুলে যায়। স্যার ওর আগ্রহ বাড়ানোর জন্য নানান প্রশ্ন করে।
সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে গোপাল বেজায় চোটে যায়। একদিন স্কুলের শিক্ষক গোপালকে জিজ্ঞেস করেছে...
- তা গোপাল, একটা গরুর কটা ঠ্যাং?
- ন্যাকা! একটা গরুর কটা ঠ্যাং জানো না হে!

স্যার, ধর! ধর!  করে চিল্লাচ্ছিল, গোপাল জানালা দিয়ে বেড়িয়ে পগার পার।

একদিন আমি ঘরে বসে পড়ছি। রাস্তা দিয়ে গোপাল যাচ্ছে, পাশাপাশি ওর স্কুলের সহপাঠিনী প্রিয়াঙ্কা। দুজনেই ক্লাস ওয়ানে পড়ে, অথচ গোপাল ওকে ইম্প্রেশ করার জন্য অনেক কিছুই করে। রোজ বিকেলে একটা নায়কোচিত ভাবমূর্তি নিয়ে খেলতে আসে। সব্বাইকে আদেশ দেয়। ওর সাঙ্গপাঙ্গ ওর দেওয়া আদেশ মাথা পেতে পালন করে। তো সেদিন দেখছি, গোপাল হাতটা ভাজ করে প্রিয়াঙ্কা কে কী যেন একটা দেখাচ্ছে!  কান খাড়া করলাম।

- দেখেছিস, আমার কেমন দেবের মত বুডি?

যাক, বোঝা গেল। মালটা প্রেমে পড়েছে।
আমি ওর প্রেমের ব্যাপারে কোনওদিন খুঁচায় নি।
একটু বয়স হলে তো আর কেউ প্রেম করে না! তখন প্রেমে পড়ার থেকে না হয় বেশি ভুলে থাকার অভ্যাস পালন করবে! তাই এই কচি বয়সে একটু চলুক।

বেশ ভালোই প্রেম চলছিল। বাঁধ সাধলো প্রিয়াঙ্কার বাবা মা। গোপালের বাবা এক্সপ্রেস ট্রেনে সেদ্ধ ডিম বেঁচে, আর প্রিয়াঙ্কা বেশ ভাল ঘরের মেয়ে। একদিন এমনই এক দুপুরে আমি ঘরে শুয়ে আছি। হঠাৎ চেঁচামেচির আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেল। চেয়ে দেখি গোপালের মাকে প্রিয়াঙ্কার মা যাচ্ছেতাই বলে অপমান করছে। গোপাল নাকি স্কুলে গিয়েও প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকিয়ে থাকে। আরও কিসব............
শেষ পর্যন্ত যা স্থির হলো, গোপাল আর এ মাঠে খেলতে আসবে না, একসাথে স্কুল যাবে না। এমনকি, আমার বাড়ির পিছনের রাস্তা দিয়ে আর যাতায়াত ও করবেনা, কারণ আমার বাড়ির পিছনেই প্রিয়াঙ্কার বাড়ি।

সেদিন গোপালকে ফুঁসতে দেখেছিলাম, দেখেছিলাম ওর চোখের রাগ, প্রিয়াঙ্কার প্রতি তীব্র ঘৃণা। বড্ড আফসোস হচ্ছিল সেদিন, এই বয়সেও এরা ঘৃণা শিখে গেল?