#Nonfictional_Fiction

রাজনৈতিক আলোচনা সুচতুরভাবে এড়িয়ে যাওয়া সহজ, আলোচনাচক্রে অংশ নিয়ে যেকোনও স্থায়ী সমস্যা সমাধানের মনোভাবের বড্ড অভাব, তাই হয়তো আমাদের দেশটার আজ এই অবস্থা।

পড়াশোনা করেছি মানে শুধু জ্ঞান অর্জনেই তা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিৎ নয়। পাড়ার সব্জি বিক্রেতা আর একজন সুশিক্ষিত ছাত্রের সমীচীন পার্থক্য থাকা দরকার। সমাজ আমাদের কাছে অনেক কিছুই আশা করে। আমাদের চলাফেরা, কথাবলার ধরণ, বা ব্যক্তিত্বে শিক্ষার প্রভাব থাকা জরুরি। সার্বজনীনভাবে শিক্ষার ব্যাবহারিক প্রয়োগ জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই যেমন রাস্তার কল দিয়ে অনবরত জল বেরোতে থাকলে, কিংবা স্টেশনের ফ্যানটা অকারণে অনবরত ঘুরলে, অপচয় রোধ করতে তা বন্ধ করার দায়িত্ব আমাদেরই। শিক্ষিত  সমাজ মানে সমাজ সম্পর্কে কতটা সচেতন সেটাও নির্ধারিত হওয়া উচিৎ, নতুবা মাধ্যমিকের ছিয়াত্তর শতাংশের কতটা মূল্য আছে তাতে আমি সন্দিগ্ধ। ভাবা উচিৎ সমস্যা কোথায়?
সমস্যা কিন্তু অনেক জাগায়, যেমন শিক্ষার পদ্ধতিগত ত্রুটি। আমার বাবা ক্লাস ওয়ানে 'আতা গাছে তোতা পাখি' পড়েছে, আমিও তাই পড়েছি। আচ্ছা, তাহলে আমার ছেলেও কী তাই পড়বে? এবার ভাবতে হবে, বাবার সময় ইন্টারনেট কানেকশন ছিলনা, অথচ আমি নিজেই ব্লগ লিখি।
সময় যখন এগিয়েছে শিক্ষা কেন পিছিয়ে থাকবে?
আমরা যারা শিক্ষিত এবং থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার, ভাবতে হবে মানুষ ভুল থেকে শিক্ষা নেয় না! শিক্ষা নিলে, সমাজের অরাজকতার বিনাশসাধন না হলেও কিছুটা কমত।
জীবনের স্বাদ কখনোই পুরো পাওয়া সম্ভব নয়, অথচ জীবন অতিবাহিত করতে কর্মসংস্থান করা আবশ্যক। রুজিরোজগার যে কেউ যেমন ভাবেই করুক তাতে কোনো সমস্যা নেই, যদিনা সে একজন সচেতন নাগরিক হয়ে উঠতে পারে।
সমাজে শ্রেণীগত বৈষম্য নেই, স্কুল কলেজেও নেই। গ্রামের শতকরা ছিয়ানব্বই শতাংশ ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক স্কুলে পড়তে যায়। স্ট্যাটিস্টিক্যালি ঠিকঠাক, কিন্তু ভিতরের কথা কিছুটা অন্যরকম। যারা স্কুলে যাচ্ছে তারা কতটা যোগ বিয়োগ বা গুণ-ভাগ শিখতে পারছে? প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলের ক্লাস সেভেনে যা পড়ানো হয়, শহরের ক্লাস টুয়ে তাকে সেই সিলেবাস শেখানো হয়। এখানে আমার গ্রাম শহরের পাঁচবছরের পার্থক্য। আর আমরা এখনও ক্লাস ওয়ানে পড়ি 'ছোট খোকা বলে অ আ'।
রাজনীতি নিয়ে ভাবতে হবে, ভাবতে হবে টেট নিয়ে, আর ভাবতে হবে ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে।
ভাবতে হবে গ্লোবাল পিস ইন্ডেক্স এ ভারতে স্থান 143(I Love You Figure), গ্লোবাল হ্যাপিনেস ইন্ডেক্স এ 117, আর গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্স এ 55.
পৃথিবীর প্রত্যেকটা ঘটনা গতানুগতিক নয়, একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। এই যেমন পিস, হাঙ্গার, হ্যাপিনেস এর র‍্যাংক এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের দেশ ডিজিটাল করা প্রয়োজন। তাতে লাভ? শুধুই কী ফেসবুকের প্রোফাইল ডিজিটাল হবে? মোটেই তা নয় কিন্তু, এই পদ্ধতিতে আড়াই লক্ষের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হবে। তাতে আমার লাভ কী? ফ্রীতে পর্ণ ডাউনলোড করব?
মোটেই তা নয়, ইচ্ছে করলেই গ্রাম শহরের শিক্ষার ফাড়াক টা কিছুটা হলেও মেটানো যেতে পারে, এমনকি অনেক সহজে। স্কুলে অনলাইন ক্লাস চালু করা যেতে পারে, যেখানে সবধরণের ছাত্রছাত্রী উচ্চমানের শিক্ষকের সংস্পর্শে আসতে পারে। এতে সরকারের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত  খরচ ও কমবে এবং টেটের লোভ দেখিয়ে টাকা তোলার সুযোগও কমতে পারে (Newton's Third Law)..
তাই আমাদের ভাবতে হবে, আমরাই তো দেশের ভবিষ্যত।
"আমরা চঞ্চল আমরা অদ্ভুত, আমরা নতুন যৌবনের দূত"।

© Sudip Sen
13/Oct/15