" আয় তবে সহচরী
তোরে একটু এন্টারটেইন করি "

সত্যি কথা বলতে আমি মোটেই ভয় পাইনা। তা যতটাই ব্যঙ্গার্থক অথবা অবমাননাকর হোক না কেন।

জীবনের বড় সাধ ছিল ছোট লাইন অর্থাৎ ন্যারোগ্যাজ ট্রেনে চাপার। তখন কলেজে পড়ি, একটা ট্রেনিং এর জন্য বর্ধমান যেতে হয়েছিল। এইতো সুবর্ণসুযোগ! কবে এই ট্রেন বিলুপ্ত হয়ে যায়! তাই আগেভাগে জীবনের শখটা পুরণ করে নিই। ট্রেনে উঠলাম।

ট্রেন যেমন গতিতে ছুটছে তাতে মনে হয়েছিল গ্রামের গরুর গাড়ি অথবা রিক্সও এর থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন। তবু জানালার বাইরের চোখ জুড়নো ধান খেত, ধানের আগার সাদাটে শিষ দেখে কেমন যেন জীবনানন্দ দাশ এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।

দ্যাখ ভাই, জীবনানন্দ দাশ থাকলে বনলতা সেন আসবেই। তো আমি জানালার ধারে বসে আছি, আর প্রকৃতির রূপে আবিষ্ট হচ্ছি। আমার পাশে হঠাৎ একজন একটা ভেড়া নিয়ে উঠল। ভেড়াটা চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কানের মাথা এমনভাবে খাচ্ছিল যে নিজেকেই ওই প্রজাতিভুক্ত একটি প্রাণী বলে মনে হচ্ছিল। হঠাত ট্রেন থামলো। হ্যাঁ, ডিয়ার মেসোমশায়! 'পিঙ্ক লিপ্স' গোলাপি বেশে 'ঐশ্বরিয়া রায় সমন্বিত চোখ' বিশিষ্ট এক মহিয়সী ' লা বেল ডাম সাঁ মার্সি'।

যাক, জীবন আমার ধন্য! রথ দ্যাখা কলা বেচা একসাথে হবে এবার। উৎফুল্লতাই মন ভরে আসছিল। মেয়েটি আমার সামনের সিটে বিরাজমান হোলেন। হরেকৃষ্ণ! জয় রাধে গোবিন্দ!

সুন্দরী মেয়েদের সাথে কথা বলতে মোটেই অভ্যস্ত নই আমি। তাই আগ বাড়িয়ে কিছুই বলতে চাইনি, অপেক্ষা করছিলাম সে কিছু বলে বোধহয়!
মৎস্যহীন পুকুরে ছিপ ফেলে সারাদিন ঠুঁটোজগন্নাথ হয়ে বসে থাকার পর মনে হয়েছিল এ এক অনাবাদী জমিতে আমি জৈবসার ছিটাচ্ছি।
যখন চেতনার বিকাশ ঘটল, বুঝলাম অনেক দেড়ি হয়ে গিয়েছে, আর এক স্টেশন পর আমাকে নামতে হবে!

তৎপরতার সাথে পিঠের ব্যাগ থেকে ডায়েরির পাতা ছিঁড়ে পেন দিয়ে ফোন নাম্বার লিখে সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগলাম। এইতো! ট্রেন থামছে, ধীরে ধীরে মনের সাহস অন্তরে সঞ্চারিত করতে লাগলাম। সুযোগ ও পেলাম। আমার হাতের চিরকুট টি তার হাতে গুঁজে দিলাম।

বলুন ডিয়ার মেসোমশায়! গল্পের শেষাংশ ক্যামন হতে পারে?

জানেন এত দুঃখ পেয়েছিলাম, কী আর কইবো!
"সখী ভালবাসা কারে কয়"
সেতো আমার ভাগ্যে নয়।

চিরকুট আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে তিনি আমায় কহিয়াছিল 'ইহা লইয়্যা আমি কী করিব?'

সেই যে সুন্দরী নারীর প্রতি এ মনে ভীতির সঞ্চার হলো, জানেন! আজও ট্রেনে-ট্রামে-বাসে কারও সামনে দাঁড়াতে ভয় হয়।
ভগবান! দেয় তো সবাই, নেয় কে?

© Sudip Sen
19/Oct/15