বুঝলেন দাদামশায়রা! বেকার কিনা! তাই প্রাইমারি টেট দেওয়ার লোভটা সংবরণ করতে চাইলেও পরিবার আর পরিস্থিতির চাপে কিছুতেই সেই অনিচ্ছা প্রকাশ করতে পারিনা।
দেখুন ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস এ পাস করা সহজ, কিন্তু এরাজ্যের প্রাইমারি টেট এর লিখিত পরীক্ষাতে পাস করা অতটাও সহজ নয়। এটা একটা সিস্টেমেটিক ওয়েতে হয়। কেমন?
এই যেমন ধরুন, কয়েকবারের চেষ্টাতেও পরীক্ষা বাতিল করা সম্ভব হয়নি। তাতে যে কারও কোনো লাভ হয়নি তা কিন্তু মোটেই বলা যাবে না।
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সকলেই জেনে গিয়েছেন গত বছরের প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাতে কি হয়েছিল, বাড়ির ছাগল, গরু এমনকি পাতিহাঁস টাও চাকরি পেয়েছে। কিভাবে পেয়েছে তা বলার সাহস আমার নেই। কিন্তু যে ইচ্ছেটা আছে সেটা বলেই ফেলি।
দেখুন, গাছে ফুল ফুটলে যেমন ভ্রমর আসে ঠিক তেমনি টেটের আগে দালাল চক্রে রাজ্য ছেয়ে গিয়েছে। আচ্ছা, আগেরবার যে প্রশ্নপত্র চুরি গিয়েছিল এবারও যাবেনা তার কোনও গ্যারান্টি আছে? দেখুন সত্যি কথা বলছি, কানাঘুষো যা শুনলাম, তাতে পাঁচলাখ টাকায় পুরো সলিড সেটিং। শুধু তাই নয় কিন্তু, পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত, পরীক্ষার আগের দিন অর্থাৎ আজ রাতে উত্তরপত্র সমেত প্রশ্নপত্র বিলি হবে।
যে বা যারা এই কান্ডের সাথে জড়িত তারা মোটেই রিস্ক নিতে চান না। কালকের প্রশ্নপত্রের সাথে আজকে রাতের প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়া গেলে সোমবার সকালে কুড়ি হাজার জমা দিতে হবে, বাকি চার লাখ আশি চাকরি পাওয়ার পর।
আচ্ছা কেউ যদি টাকা না দেয়? আপনাকে আপনার যাবতীয় মার্কশীট এবং অ্যাডমিট কার্ড জমা রাখতে হবে। আর ঠিক এই জাগায় বিভ্রান্তি!
সরকার যদি পরীক্ষার রেজাল্ট না ঘোষনা না করে? অথবা প্রশ্নপত্রের মত উত্তরপত্রও যদি চুরি হয়ে যায়! তাহলে জমা রাখা ডকুমেন্টস এর কী হবে?
পচ্চিমবঙ্গে এভাবেই পিরাইমারির চাকরি হয় বুঝলেন! কেউ এভাবে চাকরি পেলে খারাপ লাগেনা। খারাপ লাগাটা অন্য জাগায়।
পাড়ার মৃত্যুঞ্জয় মাস্টার, যথেষ্ট নামডাক আছে। শিক্ষিত হিসেবে লোকে সম্মান ও করে। দীর্ঘদিন চাকরির চেষ্টা করে যাচ্ছে অথচ পাচ্ছে না। হঠাৎই একদিন শোনা গেল পাড়ার হাটুর বয়সি হেটো কুমার কলকাতা পুলিশের কনস্টেবলের চাকরির পেয়েছে। হেটো কুমারের চাকরিতে সবার চোখে চমক লাগে। হেটো চাকরি পেলো আর মৃত্যুঞ্জয় মাস্টার চাকরি পেলো না!
পরে জানা গেলো হেটো কনস্টেবলের পরীক্ষাতে 'চোরাই বার্তা ' পদ্ধতি অবলম্বন করে চাকরি পেয়েছে। আরেব্বাস! আগে শুধু নকল করে পরীক্ষাতে পাস করা যেত, এখন চাকরিও পাওয়া যায়!
হেটো কুমারের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় মাস্টারকে সবাই যখন বলে 'পাড়ার হেটো চাকরি পেলো আর তুমি কি করছো? '
তখন খারাপ লাগে। মৃত্যুঞ্জয় মাস্টারের কথা ভেবে খারাপ লাগার থেকেও বেশি খারাপ লাগে ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে। পাড়ার ছাগল গরু চাকরি পেয়ে বাচ্চাদের কী শেখাবে? তারা যে পড়াতে গিয়ে ক্লাসের মেয়েদের গায়ে হাত দেবেনা তার ই বা কী গ্যারান্টি আছে? সেই ভীতি থেকে শিশুটির পরবর্তী জীবনে পুরুষের প্রতি ঘৃণা তৈরি হবে না তারই বা কী গ্যারান্টি আছে?
প্রাইমারি শিক্ষা যথোপযুক্ত হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। ভিতের উপর বাড়ির ধারণ ক্ষমতা নির্ধারিত হয়। এই বয়সে 'নকল করে চাকরি পাওয়া' শিক্ষকের কাছে শিশুরা কী শিখবে? শিক্ষকের সামনে ছাত্র নকল করলে তিনি নিষেধ করার সাহস পাবেন তো? নিজের অন্তরাত্মার কাছে ব্যক্তিত্ব ছোট হয়ে যাবে নাতো?
স্কুলে সাইকেল দিন, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী যা ইচ্ছে তাই প্রকল্প চালু করুন, কিন্তু এসব করতে গিয়ে শিক্ষার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে কিনা তার উপর ও তো নজর রাখতে হবে! সব জাগায় কী আর 'ছেলে পাঠিয়ে' কাজ সারা যায়?
অনেকদিন আগে পড়েছিলাম "কাঁচা ইট পাকা হয় পোড়ালে তা আগুনে।" যুব সমাজ সত্যিই এসব দেখেশুনে পুড়ে পাকতে শুরু করেছে, এরপর কোনোদিন একটা একটা অবসাদ একগুচ্ছ হয়ে যদি বিস্ফোরণ ঘটায় সেদিন ঠ্যাকাতে পারবেন তো??
©www*sudipsen*net
দেখুন ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস এ পাস করা সহজ, কিন্তু এরাজ্যের প্রাইমারি টেট এর লিখিত পরীক্ষাতে পাস করা অতটাও সহজ নয়। এটা একটা সিস্টেমেটিক ওয়েতে হয়। কেমন?
এই যেমন ধরুন, কয়েকবারের চেষ্টাতেও পরীক্ষা বাতিল করা সম্ভব হয়নি। তাতে যে কারও কোনো লাভ হয়নি তা কিন্তু মোটেই বলা যাবে না।
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সকলেই জেনে গিয়েছেন গত বছরের প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাতে কি হয়েছিল, বাড়ির ছাগল, গরু এমনকি পাতিহাঁস টাও চাকরি পেয়েছে। কিভাবে পেয়েছে তা বলার সাহস আমার নেই। কিন্তু যে ইচ্ছেটা আছে সেটা বলেই ফেলি।
দেখুন, গাছে ফুল ফুটলে যেমন ভ্রমর আসে ঠিক তেমনি টেটের আগে দালাল চক্রে রাজ্য ছেয়ে গিয়েছে। আচ্ছা, আগেরবার যে প্রশ্নপত্র চুরি গিয়েছিল এবারও যাবেনা তার কোনও গ্যারান্টি আছে? দেখুন সত্যি কথা বলছি, কানাঘুষো যা শুনলাম, তাতে পাঁচলাখ টাকায় পুরো সলিড সেটিং। শুধু তাই নয় কিন্তু, পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত, পরীক্ষার আগের দিন অর্থাৎ আজ রাতে উত্তরপত্র সমেত প্রশ্নপত্র বিলি হবে।
যে বা যারা এই কান্ডের সাথে জড়িত তারা মোটেই রিস্ক নিতে চান না। কালকের প্রশ্নপত্রের সাথে আজকে রাতের প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়া গেলে সোমবার সকালে কুড়ি হাজার জমা দিতে হবে, বাকি চার লাখ আশি চাকরি পাওয়ার পর।
আচ্ছা কেউ যদি টাকা না দেয়? আপনাকে আপনার যাবতীয় মার্কশীট এবং অ্যাডমিট কার্ড জমা রাখতে হবে। আর ঠিক এই জাগায় বিভ্রান্তি!
সরকার যদি পরীক্ষার রেজাল্ট না ঘোষনা না করে? অথবা প্রশ্নপত্রের মত উত্তরপত্রও যদি চুরি হয়ে যায়! তাহলে জমা রাখা ডকুমেন্টস এর কী হবে?
পচ্চিমবঙ্গে এভাবেই পিরাইমারির চাকরি হয় বুঝলেন! কেউ এভাবে চাকরি পেলে খারাপ লাগেনা। খারাপ লাগাটা অন্য জাগায়।
পাড়ার মৃত্যুঞ্জয় মাস্টার, যথেষ্ট নামডাক আছে। শিক্ষিত হিসেবে লোকে সম্মান ও করে। দীর্ঘদিন চাকরির চেষ্টা করে যাচ্ছে অথচ পাচ্ছে না। হঠাৎই একদিন শোনা গেল পাড়ার হাটুর বয়সি হেটো কুমার কলকাতা পুলিশের কনস্টেবলের চাকরির পেয়েছে। হেটো কুমারের চাকরিতে সবার চোখে চমক লাগে। হেটো চাকরি পেলো আর মৃত্যুঞ্জয় মাস্টার চাকরি পেলো না!
পরে জানা গেলো হেটো কনস্টেবলের পরীক্ষাতে 'চোরাই বার্তা ' পদ্ধতি অবলম্বন করে চাকরি পেয়েছে। আরেব্বাস! আগে শুধু নকল করে পরীক্ষাতে পাস করা যেত, এখন চাকরিও পাওয়া যায়!
হেটো কুমারের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় মাস্টারকে সবাই যখন বলে 'পাড়ার হেটো চাকরি পেলো আর তুমি কি করছো? '
তখন খারাপ লাগে। মৃত্যুঞ্জয় মাস্টারের কথা ভেবে খারাপ লাগার থেকেও বেশি খারাপ লাগে ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে। পাড়ার ছাগল গরু চাকরি পেয়ে বাচ্চাদের কী শেখাবে? তারা যে পড়াতে গিয়ে ক্লাসের মেয়েদের গায়ে হাত দেবেনা তার ই বা কী গ্যারান্টি আছে? সেই ভীতি থেকে শিশুটির পরবর্তী জীবনে পুরুষের প্রতি ঘৃণা তৈরি হবে না তারই বা কী গ্যারান্টি আছে?
প্রাইমারি শিক্ষা যথোপযুক্ত হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। ভিতের উপর বাড়ির ধারণ ক্ষমতা নির্ধারিত হয়। এই বয়সে 'নকল করে চাকরি পাওয়া' শিক্ষকের কাছে শিশুরা কী শিখবে? শিক্ষকের সামনে ছাত্র নকল করলে তিনি নিষেধ করার সাহস পাবেন তো? নিজের অন্তরাত্মার কাছে ব্যক্তিত্ব ছোট হয়ে যাবে নাতো?
স্কুলে সাইকেল দিন, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী যা ইচ্ছে তাই প্রকল্প চালু করুন, কিন্তু এসব করতে গিয়ে শিক্ষার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে কিনা তার উপর ও তো নজর রাখতে হবে! সব জাগায় কী আর 'ছেলে পাঠিয়ে' কাজ সারা যায়?
অনেকদিন আগে পড়েছিলাম "কাঁচা ইট পাকা হয় পোড়ালে তা আগুনে।" যুব সমাজ সত্যিই এসব দেখেশুনে পুড়ে পাকতে শুরু করেছে, এরপর কোনোদিন একটা একটা অবসাদ একগুচ্ছ হয়ে যদি বিস্ফোরণ ঘটায় সেদিন ঠ্যাকাতে পারবেন তো??
©www*sudipsen*net
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন