#একটি_আষাঢ়ে_গল্প
বাস্ট, ওয়েস্ট, হিপ্স, থাই, নেক স্লীভ আর ইনসীমের সঠিক মাপ নেওয়ার পর শরৎ সেগুলো দোকানের প্যাড-এ সঠিকভাবে লিখতে থাকে। আগে মাপ নেওয়ার কাজগুলো রঞ্জিত করত। কিছুদিন যাবৎ ফিটিংসের অনেক কুখ্যাতি রটেছে।পুজোর বাজারে একটু খ্যাতির বিড়ম্বনা দেখা গেলে 'ফ্যাশান হাউজ এন্ড ম্যাচিং সেন্টার' বন্ধ করে দিতে হবে। এমনিতেই রেডিমেড পোষাকের যে রমরমা বাজার তার সাথে পেরে ওঠা কঠিন। তারপর অনলাইন শপিং এর ডিসকাউন্ট আছে,বৈচিত্র্যময়তা আছে। দোকানের কারিগররা পশ্চিমী পোষাক বানাতে সক্ষম নয়।
- দাদা আমার রিসিভ কপিটা? আর কবে পাব? একটু তাড়াতাড়ি করবেন প্লিজ।
- এই নিন।সেকেন্ড অক্টোবরে একবার দোকানের নম্বরে ফোন করে জেনে নেবেন।
গ্রাহক দোকানের পলিথিন হাতে মুড়ে গাড়িতে উঠল। আজ-কাল দোকানে অনেক ভীড় জমছে। অনেক পরিচিত অপরিচিত লোক আসছে। কাল বিকেলে মাধুরী এসেছিল। মাধুরীর মেয়েটা ওর মতই চঞ্চল হয়েছে। ছটফট করতে করতে দোকানের গনেশ ঠাকুরটাই তুলে নিচ্ছিল! অনেক বুঝিয়ে সেটা ফেরৎ নেওয়া গিয়েছে। মাধুরী মেয়ের গালে একটা থাপ্পড় কষিয়েছিল।
মাধুরীকে নিয়ে আশ্বিনের সন্ধ্যায় শরৎ এর মনে এক মন খারাপের মেঘ জমেছিল, মনে পড়ছিল ক্লাস টুয়েলভের সেই চড়ের কথা। তখন 'তুই' অথবা কখনও 'তুমি' বলে ডাকতো। আজ সেই মাধুরী শরতকে আপনি বলে সম্বোধন করছে।
- আপনি জানেন না, অনেক বাড় বেড়েছে, একদম কথা শোনেনা।
মাধুরীর সেই দীপ্তিময় চোখ! আর চোখে আগের মতই তেজস্ক্রিয়তা! মাধুরীর হাতে চড়-থাপ্পড় খাওয়ার অভ্যাস শরতেরও আছে। মেয়েটা কিছুতেই রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না। অথচ ভালোবাসার সময় ততটাই কোমল, ততটাই নির্মল নিষ্কলুষ।
মাধ্যমিকে স্টার পাওয়ার পর মাধুরী জিজ্ঞেস করেছিল কী চাও? ছয়শ পঁচিশটা চুমু। সেদিন শরতের বাড়ি কেও ছিলনা। টুম্পা আর মাধুরী গেট খুলে শরতের বাড়ি ঢোকে। টুম্পা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। মাধুরী দেড়ঘন্টা পর ঘর থেকে বেড়িয়ে হেঁসেছিল... চেঁচিয়ে বলেছিল জানিস শরৎ আমার শরীরের কোনও অংশে চুমু খাওয়া বাদ দেয়নি।
শরতের অনেক ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। একটা সময় বড় লাঠি নিয়ে পাড়ার সাপ-ব্যাঙ খুঁজে খুঁজে মারত। দস্যিপনা গুন্ডাপনাই ওর সাথে কেউ পেরে উঠতো না। পাড়ার বাকি ছেলে বেশ সমীহ করে চলতো। এইট, নাইন টেনের পড়াশোনাটা বেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবেই হয়েছিল। মাধ্যমিকে স্টার পাওয়ার পর সবে বাঁধ সাধলো।
ইচ্ছে ছিল আর্টস নিয়ে পড়ার, বাবা-মা সায়েন্স চাপিয়ে দিয়েছিল। ক্লাস টুয়েলভের অঙ্ক পরীক্ষাতে কিছুতেই সময় কাটছিল না। কিছু পারবেনা বুঝতে পেরে একঘন্টা পর পরীক্ষার হল থেকে বেড়িয়ে সিনেমা হলে ঢুকেছিল। সিনেমার কোনও গল্প ছিল না। হলের বাইরের 'A' লেখা পোস্টারের মেয়েটাকে বড্ড মনে ধরেছিল, তাই সিনেমা দেখা!
হলের ভিতরে এক অদ্ভুত কান্ড ঘটেছিল, সিটের ওপরে কেমন যেন চ্যাটচ্যাটে আঠালো কিছু একটা ওর প্যান্টের পিছনে লেগেছিল। হলের পরিদর্শনকারী বলেছিল নাকের পোটা, সিট চেঞ্জ করে দিয়েছিল।
অথচ তখন মাধুরী ছিল, ভালোবাসা ছিল। ফুটবল আর ক্রিকেট খেলার মাঝের সময়টুকু মাধুরীর। মাধুরীর লোকসমক্ষে চুমু খেতে কোনও আপত্তি ছিলনা। নিজস্ব ব্যাকরণ মেনে চলতো। মেয়েটা সত্যিই ভালবাসতো।
দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টাই শরতের উচ্চমাধ্যমিক পাস। মাধুরী তখন কলেজের সেকেন্ড ইয়ার। কত নতুন বন্ধু, এঁদের ই কেউ হয়তো মাধুরীর বয়ফ্রেন্ড। অনেকসময় ব্যার্থতা মানুষকে একে অপরের থেকে দুরে সরিয়ে দেয়। নীচু মন মাথাচাড়া দিয়ে উপরে ওঠার সাহস পাইনা। মাধুরী কয়েকবার চেষ্টা করেছিল শরতের সাথে কথা বলার। শরতের মনে হয়েছিল নেহাত সহানুভূতি, মাধুরীর অনুকংপা।
বাবা-মায়ের বড় স্বপ্ন ছিল শরতকে নিয়ে। ছেলে বড় হবে, চাকরি করে খাওয়াবে। টালির বাড়ি একদিন ছাদ হবে। মোটরসাইকেল কিনে বাবা-মাকে পিছনে বসিয়ে রাস্তাঘাটে বেরোবে। অথচ কিছুই পুরণ হয়নি। ক্লাস টুয়েলভের পর ফিজিক্স অনার্স নিয়ে পড়া শুরু করেছিল। অথচ কিছুতেই মন বসতোনা পড়াই। মাধুরীর কথা বড্ড মনে পড়ে। কেমন আছে? ওর বয়ফ্রেন্ড কী শরতের মতই ভালবাসে মাধুরীকে? পায়ের বুড়ো আঙুলে চুমু খায়?
ফিজিক্সের কোনও ইকুয়েশন মিলত না। মাঝে মধ্যে বিড়ির মশলায় গ্যাঁজা মিশিয়ে টানত। ফিজিক্স আর হবেনা।
পরের বছর কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে ভর্তি হলেও, সঠিকভাবে কেমিস্ট্রির সিলেবাসটা জানা হয়নি।
অথচ বাবা-মা জানার চেষ্টা করেছিল শরতের মনের সিলেবাস, কোনও লাভ হয়নি। ছেলেটা দিনদিন বদ্ধমাতালে পরিণত হচ্ছে, মাঝে মধ্যে বাবার গায়েও হাত তোলে।
তিনবছর পার হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পাসের, অথচ কলেজের পড়া এক বিন্দুও এগোয়নি। শেষমেশ স্থির হলো ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হবে। হলো। অথচ পড়ার মানসিকতা নেই।
হঠাৎ একদিন বাবার হার্ট অ্যাটাক হলো, বাঁচানো গেলো না বাবাকে।
ধরাকাছা পরে কম্বলের আসনের ওপরে বসেছিল শরৎ। হঠাৎ মাধুরীর বিয়ের কার্ড এলো। জীবনের সবকিছু অলৌকিক ঘটনাই যেন এমন অপ্রত্যাশিত, প্রত্যেক মূহুর্তে নতুন চমক অপেক্ষা করে।
- সুখি হোক মাধুরী, ওর সুখই তো আমার সুখ।
মাধুরীর বর স্কুলের টিচার, বেশ মার্জিত ভদ্রলোক।
বাবার মৃত্যুর স্মৃতির সৎকারের পর জীবন বিমার কিছু টাকা পাওয়া যায়। ইংলিশ অনার্সের পরীক্ষাও দেওয়া হয়নি। ক্লাস টুয়েলভের পর থেকেই জীবন যেন এক জাগায় দাঁড়িয়ে আছে,বদ্ধ স্টেশনের ধারের ডোবার মত। মনে যত রাজ্যের আগাছার জন্ম দেয়। কেউ ট্রেন থেকে প্রিয়ডের পেপার ছুরে ফেলে, কেউ ওই জল দিয়েই আপদকালিন শৌচকর্ম সারে। মানুষের কাছে অসহ্য হয়ে উঠছিল দিনদিন। মদ-বিড়ির টাকাও হাতপেতে চাইতে হয় মায়ের কাছে, ভরসা একটাই মৃত বাবার ইন্সুরেন্সের টাকা। ভালোবাসা অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছিল, বাবা মারা গিয়েছিল, বাবার স্বপ্ন মারা গিয়েছিল। বিড়ি ধরাই শরৎ। বিড়ির শেষ অংশটা পুড়ে ঠোঁট পুড়তে বসেছে অথচ এখনও তা টের পাচ্ছে না শরৎ।অথচ পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। কিছুই আর নিজের নেই। নিজের সত্ত্বা হারিয়ে ফেলেছে শরৎ। এবার ভাবতে হবে, ভাবতে হবে নতুন কিছু।
না! আর পড়াশোনা হবে না! বাবা মারা যাবার পর জীবনের একটা রাস্তা খুলে দিয়ে গিয়েছিলেন। ওই টাকাতেই আজকের এই ম্যাচিং সেন্টার।
জীবনের কোনও ইকুয়েশনই তো আর মিললো না, তাই শাড়ি-ব্লাউজ-ব্রা মিল করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চায় শরৎ।
বাস্ট, ওয়েস্ট, হিপ্স, থাই, নেক স্লীভ আর ইনসীমের সঠিক মাপ নেওয়ার পর শরৎ সেগুলো দোকানের প্যাড-এ সঠিকভাবে লিখতে থাকে। আগে মাপ নেওয়ার কাজগুলো রঞ্জিত করত। কিছুদিন যাবৎ ফিটিংসের অনেক কুখ্যাতি রটেছে।পুজোর বাজারে একটু খ্যাতির বিড়ম্বনা দেখা গেলে 'ফ্যাশান হাউজ এন্ড ম্যাচিং সেন্টার' বন্ধ করে দিতে হবে। এমনিতেই রেডিমেড পোষাকের যে রমরমা বাজার তার সাথে পেরে ওঠা কঠিন। তারপর অনলাইন শপিং এর ডিসকাউন্ট আছে,বৈচিত্র্যময়তা আছে। দোকানের কারিগররা পশ্চিমী পোষাক বানাতে সক্ষম নয়।
- দাদা আমার রিসিভ কপিটা? আর কবে পাব? একটু তাড়াতাড়ি করবেন প্লিজ।
- এই নিন।সেকেন্ড অক্টোবরে একবার দোকানের নম্বরে ফোন করে জেনে নেবেন।
গ্রাহক দোকানের পলিথিন হাতে মুড়ে গাড়িতে উঠল। আজ-কাল দোকানে অনেক ভীড় জমছে। অনেক পরিচিত অপরিচিত লোক আসছে। কাল বিকেলে মাধুরী এসেছিল। মাধুরীর মেয়েটা ওর মতই চঞ্চল হয়েছে। ছটফট করতে করতে দোকানের গনেশ ঠাকুরটাই তুলে নিচ্ছিল! অনেক বুঝিয়ে সেটা ফেরৎ নেওয়া গিয়েছে। মাধুরী মেয়ের গালে একটা থাপ্পড় কষিয়েছিল।
মাধুরীকে নিয়ে আশ্বিনের সন্ধ্যায় শরৎ এর মনে এক মন খারাপের মেঘ জমেছিল, মনে পড়ছিল ক্লাস টুয়েলভের সেই চড়ের কথা। তখন 'তুই' অথবা কখনও 'তুমি' বলে ডাকতো। আজ সেই মাধুরী শরতকে আপনি বলে সম্বোধন করছে।
- আপনি জানেন না, অনেক বাড় বেড়েছে, একদম কথা শোনেনা।
মাধুরীর সেই দীপ্তিময় চোখ! আর চোখে আগের মতই তেজস্ক্রিয়তা! মাধুরীর হাতে চড়-থাপ্পড় খাওয়ার অভ্যাস শরতেরও আছে। মেয়েটা কিছুতেই রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না। অথচ ভালোবাসার সময় ততটাই কোমল, ততটাই নির্মল নিষ্কলুষ।
মাধ্যমিকে স্টার পাওয়ার পর মাধুরী জিজ্ঞেস করেছিল কী চাও? ছয়শ পঁচিশটা চুমু। সেদিন শরতের বাড়ি কেও ছিলনা। টুম্পা আর মাধুরী গেট খুলে শরতের বাড়ি ঢোকে। টুম্পা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। মাধুরী দেড়ঘন্টা পর ঘর থেকে বেড়িয়ে হেঁসেছিল... চেঁচিয়ে বলেছিল জানিস শরৎ আমার শরীরের কোনও অংশে চুমু খাওয়া বাদ দেয়নি।
শরতের অনেক ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। একটা সময় বড় লাঠি নিয়ে পাড়ার সাপ-ব্যাঙ খুঁজে খুঁজে মারত। দস্যিপনা গুন্ডাপনাই ওর সাথে কেউ পেরে উঠতো না। পাড়ার বাকি ছেলে বেশ সমীহ করে চলতো। এইট, নাইন টেনের পড়াশোনাটা বেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবেই হয়েছিল। মাধ্যমিকে স্টার পাওয়ার পর সবে বাঁধ সাধলো।
ইচ্ছে ছিল আর্টস নিয়ে পড়ার, বাবা-মা সায়েন্স চাপিয়ে দিয়েছিল। ক্লাস টুয়েলভের অঙ্ক পরীক্ষাতে কিছুতেই সময় কাটছিল না। কিছু পারবেনা বুঝতে পেরে একঘন্টা পর পরীক্ষার হল থেকে বেড়িয়ে সিনেমা হলে ঢুকেছিল। সিনেমার কোনও গল্প ছিল না। হলের বাইরের 'A' লেখা পোস্টারের মেয়েটাকে বড্ড মনে ধরেছিল, তাই সিনেমা দেখা!
হলের ভিতরে এক অদ্ভুত কান্ড ঘটেছিল, সিটের ওপরে কেমন যেন চ্যাটচ্যাটে আঠালো কিছু একটা ওর প্যান্টের পিছনে লেগেছিল। হলের পরিদর্শনকারী বলেছিল নাকের পোটা, সিট চেঞ্জ করে দিয়েছিল।
অথচ তখন মাধুরী ছিল, ভালোবাসা ছিল। ফুটবল আর ক্রিকেট খেলার মাঝের সময়টুকু মাধুরীর। মাধুরীর লোকসমক্ষে চুমু খেতে কোনও আপত্তি ছিলনা। নিজস্ব ব্যাকরণ মেনে চলতো। মেয়েটা সত্যিই ভালবাসতো।
দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টাই শরতের উচ্চমাধ্যমিক পাস। মাধুরী তখন কলেজের সেকেন্ড ইয়ার। কত নতুন বন্ধু, এঁদের ই কেউ হয়তো মাধুরীর বয়ফ্রেন্ড। অনেকসময় ব্যার্থতা মানুষকে একে অপরের থেকে দুরে সরিয়ে দেয়। নীচু মন মাথাচাড়া দিয়ে উপরে ওঠার সাহস পাইনা। মাধুরী কয়েকবার চেষ্টা করেছিল শরতের সাথে কথা বলার। শরতের মনে হয়েছিল নেহাত সহানুভূতি, মাধুরীর অনুকংপা।
বাবা-মায়ের বড় স্বপ্ন ছিল শরতকে নিয়ে। ছেলে বড় হবে, চাকরি করে খাওয়াবে। টালির বাড়ি একদিন ছাদ হবে। মোটরসাইকেল কিনে বাবা-মাকে পিছনে বসিয়ে রাস্তাঘাটে বেরোবে। অথচ কিছুই পুরণ হয়নি। ক্লাস টুয়েলভের পর ফিজিক্স অনার্স নিয়ে পড়া শুরু করেছিল। অথচ কিছুতেই মন বসতোনা পড়াই। মাধুরীর কথা বড্ড মনে পড়ে। কেমন আছে? ওর বয়ফ্রেন্ড কী শরতের মতই ভালবাসে মাধুরীকে? পায়ের বুড়ো আঙুলে চুমু খায়?
ফিজিক্সের কোনও ইকুয়েশন মিলত না। মাঝে মধ্যে বিড়ির মশলায় গ্যাঁজা মিশিয়ে টানত। ফিজিক্স আর হবেনা।
পরের বছর কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে ভর্তি হলেও, সঠিকভাবে কেমিস্ট্রির সিলেবাসটা জানা হয়নি।
অথচ বাবা-মা জানার চেষ্টা করেছিল শরতের মনের সিলেবাস, কোনও লাভ হয়নি। ছেলেটা দিনদিন বদ্ধমাতালে পরিণত হচ্ছে, মাঝে মধ্যে বাবার গায়েও হাত তোলে।
তিনবছর পার হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পাসের, অথচ কলেজের পড়া এক বিন্দুও এগোয়নি। শেষমেশ স্থির হলো ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হবে। হলো। অথচ পড়ার মানসিকতা নেই।
হঠাৎ একদিন বাবার হার্ট অ্যাটাক হলো, বাঁচানো গেলো না বাবাকে।
ধরাকাছা পরে কম্বলের আসনের ওপরে বসেছিল শরৎ। হঠাৎ মাধুরীর বিয়ের কার্ড এলো। জীবনের সবকিছু অলৌকিক ঘটনাই যেন এমন অপ্রত্যাশিত, প্রত্যেক মূহুর্তে নতুন চমক অপেক্ষা করে।
- সুখি হোক মাধুরী, ওর সুখই তো আমার সুখ।
মাধুরীর বর স্কুলের টিচার, বেশ মার্জিত ভদ্রলোক।
বাবার মৃত্যুর স্মৃতির সৎকারের পর জীবন বিমার কিছু টাকা পাওয়া যায়। ইংলিশ অনার্সের পরীক্ষাও দেওয়া হয়নি। ক্লাস টুয়েলভের পর থেকেই জীবন যেন এক জাগায় দাঁড়িয়ে আছে,বদ্ধ স্টেশনের ধারের ডোবার মত। মনে যত রাজ্যের আগাছার জন্ম দেয়। কেউ ট্রেন থেকে প্রিয়ডের পেপার ছুরে ফেলে, কেউ ওই জল দিয়েই আপদকালিন শৌচকর্ম সারে। মানুষের কাছে অসহ্য হয়ে উঠছিল দিনদিন। মদ-বিড়ির টাকাও হাতপেতে চাইতে হয় মায়ের কাছে, ভরসা একটাই মৃত বাবার ইন্সুরেন্সের টাকা। ভালোবাসা অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছিল, বাবা মারা গিয়েছিল, বাবার স্বপ্ন মারা গিয়েছিল। বিড়ি ধরাই শরৎ। বিড়ির শেষ অংশটা পুড়ে ঠোঁট পুড়তে বসেছে অথচ এখনও তা টের পাচ্ছে না শরৎ।অথচ পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। কিছুই আর নিজের নেই। নিজের সত্ত্বা হারিয়ে ফেলেছে শরৎ। এবার ভাবতে হবে, ভাবতে হবে নতুন কিছু।
না! আর পড়াশোনা হবে না! বাবা মারা যাবার পর জীবনের একটা রাস্তা খুলে দিয়ে গিয়েছিলেন। ওই টাকাতেই আজকের এই ম্যাচিং সেন্টার।
জীবনের কোনও ইকুয়েশনই তো আর মিললো না, তাই শাড়ি-ব্লাউজ-ব্রা মিল করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চায় শরৎ।
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন