শিক্ষকমহাশয়দের প্রতি আমি অসীম শ্রদ্ধাশীল। ইহজগতের খুব কম শিক্ষক আছেন, যাঁরা আমায় ভালবাসেননি। স্কুল কলেজের অনেক শিক্ষকের সাথে এখনও যোগাযোগ আছে, দেখা হলেই কথা হয়। আমি সত্যিই মানি বাবা-মায়ের পরে শিক্ষকের স্থান। যেটুকু শেখা, সবই তাঁদের সাহচর্যে।
তবে এখন যখন লোকাল ট্রেনের ভিড়ে গালাগাল সহযোগে তাস খেলা শিক্ষক দেখি, আমার মনে হয় এঁদের স্কুলে পড়াতে না পাঠিয়ে সংশোধনাগারে পাঠানো উচিত।
আমার মনে পড়ে যায় ধনঞ্জয় স্যারের কথা।
ধনঞ্জয় স্যার তখনও চাকরি পাননি। রোজ দুটো ব্যাচ পড়াতেন। একটাতে আমরা পড়তাম আর একটাতে আমাদের নীচু ক্লাসের ছেলেমেয়েরা পড়ত। ধনঞ্জয় স্যার বড্ড পাংচুয়াল ছিলেন, সঠিক সময়ে পড়াতে বসতেন। আমাদের বসার জায়গাগুলো ফিক্সড ছিল। ধনঞ্জয় স্যারের টুলের বাঁ পাশে কামিনী বসত। কামিনীর পিঠে হাত রেখে ধনঞ্জয় স্যার আমাদের ইতিহাস বোঝাতেন।
শাহজাহানের সাতটা স্ত্রীর মধ্যে মমতাজ ছিলেন চতুর্থ, শাহজাহান মমতাজের স্বামীকে হত্যা করেন তাকে লাভ করার জন্য, মমতাজ চোদ্দতম সন্তান প্রসবের সময় মারা যান, মমতাজের মৃত্যুর পর শাহজাহান তার বোন কে বিবাহ করেন।
আমরা ভাবতাম স্যার কত জ্ঞানী! স্যারের পুরো ইতিহাস রপ্ত, কখনও বোঝার চেষ্টা করিনি স্যার আমাদের চোখের আড়ালে ইতিহাস সৃষ্টি করছেন।
কামিনীর বাড়িতে কিছু সমস্যা ছিল, সাংসারিক জীবনে সুখ ছিল না। কামিনী চোখ লাল করে স্যারের সাথে মনের দুঃখ ভাগ করে নিত। স্যার ওর চোখের জল মোছাতেন, তারপর হাত দুটো ধরে কী সব বোঝাতেন! হাত ধরার পর্ব শেষ হলে ওর গলা ধরতেন, গালটা মুখের কাছে এগিয়ে নিতেন, কানে কানে কী বলতেন! আমার মনে হতো, (শুধু আমার না টিউশনের সকলের মনে হতো) ধনঞ্জয় স্যার কামিনীর গালে চুমু খাচ্ছেন। কিন্তু অনেক সময় নিজের চোখকেও বিশ্বাস করা যায় না। স্যার কোনও দিন এমন কাজ করতে পারেন নাকি?
আমরা যারা স্যারের সাপ্তাহিক মূল্যায়নে ভাল ফল করতাম, ধনঞ্জয় স্যার সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে আমাদের জন্য স্পেশাল ক্লাস নিতেন। সেখানে কামিনী যেত, নীচু ক্লাসের রাগিণীও আসত। সন্ধ্যার অন্ধকারে যে দিন কারেন্ট চলে যেত দেখতাম রাগিণীকে স্যার কামিনীর থেকেও বেশি ভালবাসেন।
আমার সন্দেহ হতো! স্যার কী ছেলেদের ভালবাসেন না! তারপর মনে মনে ভাবতাম স্যার তো নিজেই ছেলে। ছেলে আবার কোনও দিন ছেলেকে ভালবাসে নাকি!
রমেনের কাছে একদিন শুনলাম স্যার নাকি কামিনীর বাড়িতে পড়াতে যান। রমেনকে বললাম স্যার যে দিন আবার কামিনীর বাড়িতে পড়াতে যাবেন আমায় বলিস, আমিও যাব।
সে দিন সত্যিই বড্ড অবাক হয়ে গিয়েছিলাম আপত্তিকর অবস্থায় স্যারকে দেখে। নিজের চোখ বুজে ফেলেছিলাম। লজ্জাজনক পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য স্যার তৎক্ষণাৎ বলেছিল রমেন আর তুই? পড়াশোনা একদম করছিস না। বাড়িতে জানাব?
স্যারের এই মিথ্যাভাষণ আমাদের সমস্ত সমীকরণের সমাধান মিলিয়ে দিয়েছিল। বুঝতে পেরেছিলাম সব স্যার, স্যার নয়। রাগিণীকে স্যার ভালবাসতেন, তা অন্য এক বন্ধুর মুখে শুনতে পাই।
শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার পর স্যার রাগিণীকে বিয়েও করেন। কামিনীরও অন্য জাগায় বিয়ে হয়ে যায়।
এখনও অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা টিউশন পড়ানো ছাত্রীকে বিয়ে করেন। এর জন্য আমার কোনও প্রতিবাদ নেই। ভাল লাগা ভালবাসা যে কোনও ভাবেই হতে পারে।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই গাছেরও খাব আবার তলারও কুড়োব ...এই মনোভাবটা বড্ড খারাপ।
ছাত্ররাও তো শিক্ষক হবে! আপনার মেয়ের সাথে কেউ এমন করলে সহ্য করার ক্ষমতা আছে তো! এ রকম চলতে থাকলে আমার কেমন যেন গোটা শিক্ষক জাতির প্রতি বিশ্বাস উঠে যায়।
ধনঞ্জয় বাবুর সাথে আমার স্টেশনে কিংবা বাজারে প্রায়শই দেখা হয়। কিন্তু কোনও কথা হয় না।
হয়তো উনিই লজ্জা পান, কিংবা আমি........
তবে এখন যখন লোকাল ট্রেনের ভিড়ে গালাগাল সহযোগে তাস খেলা শিক্ষক দেখি, আমার মনে হয় এঁদের স্কুলে পড়াতে না পাঠিয়ে সংশোধনাগারে পাঠানো উচিত।
আমার মনে পড়ে যায় ধনঞ্জয় স্যারের কথা।
ধনঞ্জয় স্যার তখনও চাকরি পাননি। রোজ দুটো ব্যাচ পড়াতেন। একটাতে আমরা পড়তাম আর একটাতে আমাদের নীচু ক্লাসের ছেলেমেয়েরা পড়ত। ধনঞ্জয় স্যার বড্ড পাংচুয়াল ছিলেন, সঠিক সময়ে পড়াতে বসতেন। আমাদের বসার জায়গাগুলো ফিক্সড ছিল। ধনঞ্জয় স্যারের টুলের বাঁ পাশে কামিনী বসত। কামিনীর পিঠে হাত রেখে ধনঞ্জয় স্যার আমাদের ইতিহাস বোঝাতেন।
শাহজাহানের সাতটা স্ত্রীর মধ্যে মমতাজ ছিলেন চতুর্থ, শাহজাহান মমতাজের স্বামীকে হত্যা করেন তাকে লাভ করার জন্য, মমতাজ চোদ্দতম সন্তান প্রসবের সময় মারা যান, মমতাজের মৃত্যুর পর শাহজাহান তার বোন কে বিবাহ করেন।
আমরা ভাবতাম স্যার কত জ্ঞানী! স্যারের পুরো ইতিহাস রপ্ত, কখনও বোঝার চেষ্টা করিনি স্যার আমাদের চোখের আড়ালে ইতিহাস সৃষ্টি করছেন।
কামিনীর বাড়িতে কিছু সমস্যা ছিল, সাংসারিক জীবনে সুখ ছিল না। কামিনী চোখ লাল করে স্যারের সাথে মনের দুঃখ ভাগ করে নিত। স্যার ওর চোখের জল মোছাতেন, তারপর হাত দুটো ধরে কী সব বোঝাতেন! হাত ধরার পর্ব শেষ হলে ওর গলা ধরতেন, গালটা মুখের কাছে এগিয়ে নিতেন, কানে কানে কী বলতেন! আমার মনে হতো, (শুধু আমার না টিউশনের সকলের মনে হতো) ধনঞ্জয় স্যার কামিনীর গালে চুমু খাচ্ছেন। কিন্তু অনেক সময় নিজের চোখকেও বিশ্বাস করা যায় না। স্যার কোনও দিন এমন কাজ করতে পারেন নাকি?
আমরা যারা স্যারের সাপ্তাহিক মূল্যায়নে ভাল ফল করতাম, ধনঞ্জয় স্যার সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে আমাদের জন্য স্পেশাল ক্লাস নিতেন। সেখানে কামিনী যেত, নীচু ক্লাসের রাগিণীও আসত। সন্ধ্যার অন্ধকারে যে দিন কারেন্ট চলে যেত দেখতাম রাগিণীকে স্যার কামিনীর থেকেও বেশি ভালবাসেন।
আমার সন্দেহ হতো! স্যার কী ছেলেদের ভালবাসেন না! তারপর মনে মনে ভাবতাম স্যার তো নিজেই ছেলে। ছেলে আবার কোনও দিন ছেলেকে ভালবাসে নাকি!
রমেনের কাছে একদিন শুনলাম স্যার নাকি কামিনীর বাড়িতে পড়াতে যান। রমেনকে বললাম স্যার যে দিন আবার কামিনীর বাড়িতে পড়াতে যাবেন আমায় বলিস, আমিও যাব।
সে দিন সত্যিই বড্ড অবাক হয়ে গিয়েছিলাম আপত্তিকর অবস্থায় স্যারকে দেখে। নিজের চোখ বুজে ফেলেছিলাম। লজ্জাজনক পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য স্যার তৎক্ষণাৎ বলেছিল রমেন আর তুই? পড়াশোনা একদম করছিস না। বাড়িতে জানাব?
স্যারের এই মিথ্যাভাষণ আমাদের সমস্ত সমীকরণের সমাধান মিলিয়ে দিয়েছিল। বুঝতে পেরেছিলাম সব স্যার, স্যার নয়। রাগিণীকে স্যার ভালবাসতেন, তা অন্য এক বন্ধুর মুখে শুনতে পাই।
শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার পর স্যার রাগিণীকে বিয়েও করেন। কামিনীরও অন্য জাগায় বিয়ে হয়ে যায়।
এখনও অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা টিউশন পড়ানো ছাত্রীকে বিয়ে করেন। এর জন্য আমার কোনও প্রতিবাদ নেই। ভাল লাগা ভালবাসা যে কোনও ভাবেই হতে পারে।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই গাছেরও খাব আবার তলারও কুড়োব ...এই মনোভাবটা বড্ড খারাপ।
ছাত্ররাও তো শিক্ষক হবে! আপনার মেয়ের সাথে কেউ এমন করলে সহ্য করার ক্ষমতা আছে তো! এ রকম চলতে থাকলে আমার কেমন যেন গোটা শিক্ষক জাতির প্রতি বিশ্বাস উঠে যায়।
ধনঞ্জয় বাবুর সাথে আমার স্টেশনে কিংবা বাজারে প্রায়শই দেখা হয়। কিন্তু কোনও কথা হয় না।
হয়তো উনিই লজ্জা পান, কিংবা আমি........
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন