ভীতু বাচ্চা..........

আমি ক্লাস এইটে পড়ি। আজ আমার স্কুলে রেজাল্ট বেরোবে। খুব চিন্তায় আছি।
দোতলার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। নীচে একটা মেয়ে সাইকেল রেখে ক্লাসের ভিতরে ঢুকল। আমি ভাবছি আমার রেজাল্ট কেমন হবে তার প্রেডিকশন করা দরকার। আসলে কেমন হবে সেটা বড় কথা নয়, আমার বন্ধুর থেকে বেশি পাচ্ছি কি না সেটাই বড় কথা। ও যদি ফেল করে তবে আমি ফেল করলেও কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা ও আমার থেকে বেশি পেয়ে গেলে। আমার রোল নম্বর চার আর ওর তিন।
তক্ষুনি আমার মাথায় বুদ্ধি এল একটা। আমি পকেটে রাখা লিচু লজেন্সটা উপর থেকে নীচে সাইকেলের সিটে ফেলব। যদি ওটা সাইকেলের সিটে লাগে তাহলে আমি ওর থেকে বেশি পাব, আর না লাগলে কম পাব। আমি তাক করে ছুড়লাম। ওটা কিছুটা সিট ছুঁই ছুঁই করে নীচে পড়ে গেল। পরীক্ষা সফল হল না।
আবার অন্য পরীক্ষা দরকার।

ক্লাসের ভিতর থেকে গোলমেলে আওয়াজ আসছে, কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম। কেউ বা কারা বুলাদিকে খেপাচ্ছে। বুলাদি আমার ক্লাসে নতুন ভর্তি হয়েছে। ওর নাম বর্ণালি।মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছে। ওর কথায় আলাদা একটা টান আছে। একটু মোটা, আর মুখটা টিভির 1097 এর বিজ্ঞাপনের বুলাদির মত গোলগাল। তাই ওকে আমরা বুলাদি বলেই ডাকি।

আজ আমার ওকে বুলাদি বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে না। না জানি বুলাদি বলে কত পাপই করেছি। আজ যদি বন্ধুর থেকে আমি কম নম্বর পাই তবে নির্ঘাত বর্ণালি কে বুলাদি বলার পাপের ফল।

সামনে আর একটা মেয়ে সাইকেল নিয়ে এগিয়ে আসছে। ও এইমাত্র স্কুল গেট পার করল। ওর হাতে বিলিতি আমড়া মাখা। আমার দেখেই জিভে জল এল। মেয়েটার শাড়িতে আমড়ার নুনঝালের দাগ জড়াল।
ওকে নিয়ে এ বার আমার রেজাল্টের ভবিষ্যদ্বাণী হোক। আমি চু-উ-উ-উ-উ-উ........করতে থাকব। ও সাইকেল স্ট্যান্ডে আসা পর্যন্ত যদি আমি দম ধরে থাকতে পারি তবেই আমি বন্ধুর থেকে বেশি নম্বর পাব আর না পারলে কম।
কিছু দুর আসার পর মেয়েটা একটা ছেলের সঙ্গে গল্প শুরু করল। আমি আর দম ধরে রাখতে পারলাম না, দম ছেড়ে দিলাম, তবে কী এ বার হেরে গেলাম?

স্যার রেজাল্ট নিয়ে আসছেন। আমার বুক ঢিপঢিপ করছে।
যে দিন ডায়েরি নিয়ে আমি আমার প্রথম গার্লফ্রেন্ডকে প্রোপজ করতে যাই আর বাজারের মধ্যে সে ডায়রি ছুড়ে ফেলে দেয়, সে দিনও এত টেনশন হয়নি।
স্যার রোল কল করছেন আর রেজাল্ট দিচ্ছেন। তিন নম্বর রোল রেজাল্ট পেল, পাঁচশো ছত্রিশ । এবার আমার পালা। খুব ভয় লাগছে। স্যার নাম ডাকলেন, আমি এগিয়ে গেলাম। পাঁচশো তেত্রিশ।

আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে এ বারের পুজোটা মাটি হয়ে গেল। আমি পুজোয় আর নাচব না। আমি চোরপুলিশ খেলার চোর হয়ে রইলাম আর বন্ধু রাজা। আমার চোখে জল। এ যেন দুর্গা পুজোর বোধনের আগেই বিসর্জনের সুর।
"শিশে কি উমার  পিয়ার কি আখির মিশাল ক্যা,
টুটা জো দিল কিসিকা,তো হ্যায়রাত কি বাত ক্যা"।
মনে হচ্ছে বুলাদির পা ধরে ক্ষমা চাই।
ভগবান তিনটে নম্বরের জন্য এ বারের পুজোটাই মাটি করে দিল!