তখন ক্লাস টুয়ে পড়ি। বইতে পড়েছি ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার জন্য তাপের প্রয়োজন। আমার বাড়ির পিছনে একটা কুলগাছ ছিল। কুলগাছে ছিল টুনটুনি পাখির বাসা। তাতে বর্ষাকালে দুটো ডিম পেড়েছিল টুনটুনি। আমি একটা ডিম তুলে নিয়ে রোজ সন্ধ্যায় ওটা হারিকেনের উপর রাখতাম। যে ডিমটা বাসায় ছিল সেটা ফুটে বাচ্চা হল, কিন্তু আমার হারিকেনের উপরে রাখা ডিম এত তাপ পেল অথচ বাচ্চা হল না। সে দিনই বইএর উপর আমার ভরসা উঠে গিয়েছিল। বুঝেছিলাম বইয়ে সব মিথ্যে লেখা থাকে।

যে ডিমটা থেকে বাচ্চা হয়েছিল সেই বাচ্চাটা ওর মায়ের মতোই দেখতে। ওর মা না থাকলে আমি ওকে তুলে নিতাম হাতে, তার পর আদর করতাম। ভাইয়ের জন্য রাখা আমুল দুধের কৌটো খুলে ওকে খাওয়াতাম। আমি ভাবতাম পাখিকে ডাল ডিম আর মাছ খাওয়ালে পাখিও বোধ হয় আমাদের মত মানুষ হয়ে যাবে, কথা বলবে, হাটবে, স্কুলে যাবে।
বেশ কয়েক দিন ভাত ডাল খাওয়ানোর পর দেখলাম পাখি কথা বলতে পারছে না, আমাদের মতো বড় হচ্ছে না। সে দিনই আমার ভাবনার প্রতি নিজের ভরসা উঠে গিয়েছিল।