ল-র-ব-জ-হ
আমি আজ আটলান্টিক মহাসাগরে তিমি মাছ ধরতে এসেছি।
আমার বহু দিনের শখ ঘোড়ার ডিমের সঙ্গে বেসন মাখিয়ে তিমির মাংসের পকোড়া খাওয়ার। আজ আমার সে স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে, ভেবেই আমি আনন্দে আত্মহারা।
আমি ছিপ ফেলেছি, পাশ দিয়ে জাহাজ ভেসে যাচ্ছে। অনেক মেয়ে বিকিনি পড়ে সমুদ্রের ঢেউয়ে নিজের শরীর ভাসাচ্ছে। আমার কনসেনট্রেশন ব্যাহত হচ্ছে, আমাকে আরও মনযোগী হতে হবে। মহিষাসুরের মত একাগ্র চিত্তে ধ্যান করতে হবে। উর্বশী মেনকা আসে আর যায়, আমার আজ তিমি মাছ চাই-ই চাই। মনযোগী হলে তবেই আজ আমি ছিপে তিমি তুলতে পারব, আর আমার পকোড়া খাওয়ার সাধ পূরণ হবে।
আমি বড়শিগাঁথা চিংড়িমাছ সমুদ্রে ভাসালাম। নীল জলে ডুবছে বিদেশিনিদের কোমর। ইশ! আমি যদি আজ সমুদ্র হতাম! ইচ্ছে হয় কাছে গিয়ে বলি 'আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনি!'
বিদেশিনি কি বাংলা বোঝে? এই তো! আমার চার দিকে কত বিদেশিনি! এত দিন বলিউড, হলিউড আর কম্পিউটারে লুকোনো কেমিস্ট্রি ফোল্ডারে এরা শীতঘুম দিত। আজ জেগেছে। আমার কলকাঠি নড়ছে।
তিমি বোধ হয় টোপ গিলেছে। আমি সর্বশক্তি দিয়ে তিমি তোলার চেষ্টা করছি, পারছি না। আমার অসহায় অবস্থা দেখে লুকোনো ফোল্ডারের সব বিদেশিনি আমার কাছে এল। আমার হাতে হাত রাখল, তার পর সক্কলে মিলে তিমি মাছ ডাঙায় তুললাম। অদ্ভূত মুগ্ধতায় মন ভরে গেল।
এত স্পর্শের পরেও কেউ বলল না... 'বাড়িতে মা বোন নেই!' এদের দেশে বোধ হয় অভাব নেই, তাই মাতৃভূমি নিয়ে রেলের পাথর ছুড়তে হয় না! আমার দেশটা যদি এমন বড়লোক হতো, কত ভাল হতো! লোককে না খেয়ে মরতে হতো না, থালায় পান্তাভাত মেখে পেঁয়াজের চিন্তা করতে হতো না! হাসপাতালে প্রিয়জনকে ভর্তি রেখে টাকার অভাবে ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হতে হতো না।
আমার ইচ্ছে হল দেশটার আরও উন্নতি করার। প্রত্যেক বিদেশিনিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে আমি তিমিমাছ মাথায় করে ভারতবর্ষীয় লন্ডনে ফিরলাম।
পরের দিন আমার অর্থাভাব দেখা গেল। আমি তিমির একটা কান বেচে ইন্টারনেট প্যাক রিচার্জ করলাম। Oh My Dog! সব লুকোনো ফোল্ডারের বিদেশিনি আমার রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেছে! ও দেশের মেয়েরা বোধ হয় এদেশের মত না।
যারা আমার কাছ থেকে তিমির কান কিনে খেয়েছিল, প্রত্যেকের মধ্যে অদ্ভূত পরিবর্তন দেখে দিচ্ছে। পেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। সোনি টিভির সি.আই.ডি-দের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে জানা গেল তিমির শরীরে ইউরেনিয়াম আছে। যারা তিমির মাংস খেয়েছে তারা দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক একজন মূল্যবান সম্পদ। এবার দেশের ডিফেন্স খাতে বরাদ্দ কমবে আর এগ্রিকালচারে বাড়বে। কৃষি ঋণ মুকুব হবে আর কৃষক আত্মহত্যা কমবে। পাড়ার ছেলেরা ঘুষ দিয়ে আবার প্রাইমারি টেটে চাকরি পাবে। কি মজা!
আনন্দের মাঝেই কেমন বিষাদের সুর বাজে। আমি তিমি মাছ মাথায় করে যশোর রোডের আড়তে গেলাম। মিডিয়া ইতিমধ্যে আলোড়ন ফেলেছে, ইউরেনিয়াম তিমি এখন হেডলাইনে। জাপানি তেল আর রকেট ক্যাপসুলের বিজ্ঞাপন বন্ধ, আমার তিমিই সম্প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু। টাইমস অব ইন্ডিয়াতে বডি ম্যাসাজের বিজ্ঞাপন নেই, সেখানে ইউরেনিয়াম তিমির ছবি।
শেষ পাওয়া খবরে ওবামা, শি চিংপিং, ভ্লাদিমির পুতিন, ফ্রাঙ্কোইস হল্যান্ড সকলেই যশোর রোডের আড়তে আসছেন। কাশ্মীরে জঙ্গিহানা কমে গিয়েছে। পাকিস্তান নাকি রীতিমত ভয়ে পেয়ে গিয়েছে। মোদিকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনে জোর বাড়াতে আর দু’দিন অন্তর বিদেশ যেতে হয় না। এখন মোদির কাছেই ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন ছুটে আসছে।
আর আমার গার্লফ্রেন্ড যে আমাকে এখনও বয়ফ্রেন্ড ভাবে না, আর আমায় নিয়ে ইনসিকিউরিটিতে ভুগবেনা। আমি ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার কিনে ওকে নিয়ে অ্যামস্টারডাম বেড়াতে যাব।
আড়তে পৌঁছলাম। আমার চার দিকে মিডিয়া। বিবিসি, সিএনএন আইবিএন, এনডিটিভি। আমার বাঁ দিকে ওবামা ডান দিকে মোদি। তার পাশাপাশি বাকি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা। অদূরে আমার সেই গার্লফ্রেন্ড বসে...আনন্দে আমার চোখ দিয়ে জল বেরোচ্ছে।
তবে কী আমার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে?
আমি আজ আটলান্টিক মহাসাগরে তিমি মাছ ধরতে এসেছি।
আমার বহু দিনের শখ ঘোড়ার ডিমের সঙ্গে বেসন মাখিয়ে তিমির মাংসের পকোড়া খাওয়ার। আজ আমার সে স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে, ভেবেই আমি আনন্দে আত্মহারা।
আমি ছিপ ফেলেছি, পাশ দিয়ে জাহাজ ভেসে যাচ্ছে। অনেক মেয়ে বিকিনি পড়ে সমুদ্রের ঢেউয়ে নিজের শরীর ভাসাচ্ছে। আমার কনসেনট্রেশন ব্যাহত হচ্ছে, আমাকে আরও মনযোগী হতে হবে। মহিষাসুরের মত একাগ্র চিত্তে ধ্যান করতে হবে। উর্বশী মেনকা আসে আর যায়, আমার আজ তিমি মাছ চাই-ই চাই। মনযোগী হলে তবেই আজ আমি ছিপে তিমি তুলতে পারব, আর আমার পকোড়া খাওয়ার সাধ পূরণ হবে।
আমি বড়শিগাঁথা চিংড়িমাছ সমুদ্রে ভাসালাম। নীল জলে ডুবছে বিদেশিনিদের কোমর। ইশ! আমি যদি আজ সমুদ্র হতাম! ইচ্ছে হয় কাছে গিয়ে বলি 'আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনি!'
বিদেশিনি কি বাংলা বোঝে? এই তো! আমার চার দিকে কত বিদেশিনি! এত দিন বলিউড, হলিউড আর কম্পিউটারে লুকোনো কেমিস্ট্রি ফোল্ডারে এরা শীতঘুম দিত। আজ জেগেছে। আমার কলকাঠি নড়ছে।
তিমি বোধ হয় টোপ গিলেছে। আমি সর্বশক্তি দিয়ে তিমি তোলার চেষ্টা করছি, পারছি না। আমার অসহায় অবস্থা দেখে লুকোনো ফোল্ডারের সব বিদেশিনি আমার কাছে এল। আমার হাতে হাত রাখল, তার পর সক্কলে মিলে তিমি মাছ ডাঙায় তুললাম। অদ্ভূত মুগ্ধতায় মন ভরে গেল।
এত স্পর্শের পরেও কেউ বলল না... 'বাড়িতে মা বোন নেই!' এদের দেশে বোধ হয় অভাব নেই, তাই মাতৃভূমি নিয়ে রেলের পাথর ছুড়তে হয় না! আমার দেশটা যদি এমন বড়লোক হতো, কত ভাল হতো! লোককে না খেয়ে মরতে হতো না, থালায় পান্তাভাত মেখে পেঁয়াজের চিন্তা করতে হতো না! হাসপাতালে প্রিয়জনকে ভর্তি রেখে টাকার অভাবে ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হতে হতো না।
আমার ইচ্ছে হল দেশটার আরও উন্নতি করার। প্রত্যেক বিদেশিনিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে আমি তিমিমাছ মাথায় করে ভারতবর্ষীয় লন্ডনে ফিরলাম।
পরের দিন আমার অর্থাভাব দেখা গেল। আমি তিমির একটা কান বেচে ইন্টারনেট প্যাক রিচার্জ করলাম। Oh My Dog! সব লুকোনো ফোল্ডারের বিদেশিনি আমার রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেছে! ও দেশের মেয়েরা বোধ হয় এদেশের মত না।
যারা আমার কাছ থেকে তিমির কান কিনে খেয়েছিল, প্রত্যেকের মধ্যে অদ্ভূত পরিবর্তন দেখে দিচ্ছে। পেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। সোনি টিভির সি.আই.ডি-দের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে জানা গেল তিমির শরীরে ইউরেনিয়াম আছে। যারা তিমির মাংস খেয়েছে তারা দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক একজন মূল্যবান সম্পদ। এবার দেশের ডিফেন্স খাতে বরাদ্দ কমবে আর এগ্রিকালচারে বাড়বে। কৃষি ঋণ মুকুব হবে আর কৃষক আত্মহত্যা কমবে। পাড়ার ছেলেরা ঘুষ দিয়ে আবার প্রাইমারি টেটে চাকরি পাবে। কি মজা!
আনন্দের মাঝেই কেমন বিষাদের সুর বাজে। আমি তিমি মাছ মাথায় করে যশোর রোডের আড়তে গেলাম। মিডিয়া ইতিমধ্যে আলোড়ন ফেলেছে, ইউরেনিয়াম তিমি এখন হেডলাইনে। জাপানি তেল আর রকেট ক্যাপসুলের বিজ্ঞাপন বন্ধ, আমার তিমিই সম্প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু। টাইমস অব ইন্ডিয়াতে বডি ম্যাসাজের বিজ্ঞাপন নেই, সেখানে ইউরেনিয়াম তিমির ছবি।
শেষ পাওয়া খবরে ওবামা, শি চিংপিং, ভ্লাদিমির পুতিন, ফ্রাঙ্কোইস হল্যান্ড সকলেই যশোর রোডের আড়তে আসছেন। কাশ্মীরে জঙ্গিহানা কমে গিয়েছে। পাকিস্তান নাকি রীতিমত ভয়ে পেয়ে গিয়েছে। মোদিকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনে জোর বাড়াতে আর দু’দিন অন্তর বিদেশ যেতে হয় না। এখন মোদির কাছেই ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন ছুটে আসছে।
আর আমার গার্লফ্রেন্ড যে আমাকে এখনও বয়ফ্রেন্ড ভাবে না, আর আমায় নিয়ে ইনসিকিউরিটিতে ভুগবেনা। আমি ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার কিনে ওকে নিয়ে অ্যামস্টারডাম বেড়াতে যাব।
আড়তে পৌঁছলাম। আমার চার দিকে মিডিয়া। বিবিসি, সিএনএন আইবিএন, এনডিটিভি। আমার বাঁ দিকে ওবামা ডান দিকে মোদি। তার পাশাপাশি বাকি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা। অদূরে আমার সেই গার্লফ্রেন্ড বসে...আনন্দে আমার চোখ দিয়ে জল বেরোচ্ছে।
তবে কী আমার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে?
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন