দেওয়ালে লেলিন, স্ট্যালিন আর স্বামী বিবেকানন্দের ছবি লাগানো। নীরব এদের ভগবান মানে আর রোজ সন্ধেয় প্রদীপ দেখায়।
যখন প্রদীপ জ্বলে সামনে আলো থাকে আর পিছনে অন্ধকার, কিছু ক্ষণ আলো জ্বলার পর ক্ষীণ হয়ে নিভে যায়। যেভাবে মানুষের স্মৃতি মহামানবের ভাবনায় জন্মদিনের ক্ষণিকের অতিথিরূপে আসে,স্কুল কলেজ ছুটি থাকে, সরকারি কর্মীরা দরকারি প্রয়োজনে মহানন্দে দিন কাটায়। দোসরা অক্টোবর, এভাবেই প্রতিবছর গান্ধীজি আনন্দিত হন, তিনি জন্মে মানুষকে একটা অতিরিক্ত ছুটি দিতে পেরেছেন।তাঁর জীবন সার্থক।
নীরবের ভাই ধীরব নাইনে পড়ে। সামনে পরীক্ষা। নীরব ভাইকে বারবার বলেছে, পড়লে ভাল করে পড়। না পারলে রাজ চক্রবর্তীর কাছে 'টুকলি বিদ্যা' শেখ। দক্ষিণের বিষয়, বাঙালির সেন্টিমেন্ট,বিয়ে অথবা দেবদাস ফ্লেভার দিয়ে কী ভাবে হিটম্যাসিন খুলতে হয় এ বিষয়ে ওঁর জুড়ি মেলা ভার।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যমেধার সন্তান হয়ে কোনও লাভ নেই। চাকরি খুঁজতে খুঁজতে বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবে, আর বাচ্চার বন্ধুরা দাদু বলে ডাকবে। ওর ভাই মাথা নীচু করে শোনে, কোনও উত্তর দেয় না।
ছোট ভাই ক্লাস টুতে পড়ে,স্বভাবতই কৌতূহলী মন।
টিভি দেখে আর মাকে প্রশ্ন করে..
মা,জাপানি তেল দিলে কি সাপ মরে?
আচ্ছা! রকেট ক্যাপসুল খেলে কি খাটে চেপে মহাকাশে পাড়ি দেওয়া যায়?
মা অপ্রস্তুত অবস্থায় চ্যানেল পরিবর্তন করেন।
নীরবের সংসার দুই ভাই আর বাবা মাকে নিয়ে চলে যায়।
নীরব মধ্যবিত্ত বাঙালি ঘরের মধ্যমেধার বাংলা ইতিহাস ভুগোল পড়া ছেলে। কোন সাম্মানিক টাম্মানিক না,সিম্পলি পাস গ্র্যাজুয়েট। নীরবের বাবা নক্সাল, এখনও গরিব চাষিদের জড়ো করেন আর তাঁদের বোঝান। বলেন রাজ্যের অবস্থা সেই যুক্তফ্রন্টেই আটকে রয়েছে, কোনও উন্নতি হয়নি। তাই ছিটমহলের লোকেরা আর ওপার বাংলা ছেড়ে এপারে আসতে চাইছে না।এখানে নামে আছে উন্নয়ন, আর সংসদে সাংসদ দের মাথা অবনমিত।
সুযোগ পেলেই তিনি গান ধরেন 'মানুষ মানুষের জন্য' অথবা 'পথে এবার নেমো সাথী......'
নীরবের মা গৃহবধূ। মধ্যবিত্ত পরিবারের নিরানব্বই শতাংশ মা যেমন হন আর কি! রান্না করেন আর বাসন মাজেন।
নীরব এখনও বিপ্লবে মেতে আছে। লেলিন স্ট্যালিনে। তবে ওর পথটা আলাদা।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে যদি কিছু থাকে,তা হল জীবনে শিক্ষক হওয়া। বেশ কয়েক বার পরীক্ষায় বসলেও উত্তীর্ণ হতে পারেনি। শেষ বার উত্তীর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত ফাইনাল লিস্টে নাম ওঠেনি। এই নিয়ে কলেজে স্কোয়ারে ধর্ণাও দিয়েছে, কোনও লাভ হয়নি।
সেসময় আন্দোলন চলাকালীন ওর মধ্যে এক অদ্ভুত জেদ চড়ে বসে। পুতুল নিয়ে খেলার। এমনিতেই দেখতে শুনতে বেশ ভাল, আর উচ্চতা এবং শারীরিক গঠন বেশ আকর্ষণীয়। দেখলেই চোখ জুড়োয়। তাই মেয়েদের আপন করতে ওর খুব একটা সময় লাগে না। ও দেখেছে, গড়ে বাহান্ন সেকেন্ডের বেশি কোনও মেয়েই নেয় না ওর জালে আটকাতে। রোজ রাতে নতুন প্রেম জন্মায়, আর একটা করে তাজমহলের মৃত্যু হয়। আর সেই তাজমহলের মূল্যবান পাথর বেচে ওর জীবন দিব্যি চলে যায়।প্রেম মানে ওর কাছে প্যাঁচপ্যাঁচানি কাঁদা।
রেডবুকের প্রতি ওর এখনও শ্রদ্ধা আছে। মাঝে মধ্যেই চিল্লিয়ে ওঠে, কৃষক-শ্রমিক-মহিলা ঐক্য জিন্দাবাদ। কৃষক আন্দোলনের সময়ের মত এখন সুদখোর মহাজন দেখা যায় না।তাই পিছন দিয়ে ছোরা চালানোর প্রয়োজন হয় না।
পরিবর্তে সাম্যবাদ বজায় রাখতে যারা সমতাবিধানের বিরূদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, সেই বাবুসাহেবদের মেয়েরা ওর এক মাত্র লক্ষ্য। মেতে উঠেছে প্রেম প্রেম খেলায়।
গত রাতে রিক্তাকে নিয়ে খেলেছিল। যে টাকা পাওয়া গেছে রাতে তা পৌঁছে গেছে দীনেশ রায়ের কাছে। গ্রামঞ্চলে বন্যার ত্রাণকার্যে সেই টাকা লেগেছে। দীনেশ অবশ্য পুরো ভিডিওগ্রাফি করে ইমেলে পাঠিয়েছে। এখনকার দিনে কাউকে বিশ্বাস হয় না।
আজ যে আসবে তার ভালোবাসার প্রয়োজন নেই, আছে চাহিদা। আগে থেকেই কন্ট্যাক্ট হয়ে গিয়েছে। কোনও ভিডিও করে ব্লাকমেল করার দরকার নেই।
কাজ খতম,তারপর টাকা। আজকের টাকা পৌঁছে যাবে নীলেশের কাছে, গ্রামে কিছু টিউবওয়েল আর শুদ্ধ পানীয়জলের ব্যবস্থা করার দরকার।
মনিকা আসে, প্রাথমিক আলাপচারীতার পর নীরব দ্রুত নিজেকে উন্মুক্ত করতে থাকে।মনিকার মধ্যে কোন উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, বরং মন মরা।
তাহলে আজ কি লেট হবে? টাকা পৌঁছতে দেড়ি হয়ে যাবে..নীরব চিন্তিত হয়ে পড়ে।
মনিকা এবার উঠে দাঁড়ায়, টাকা বার করে।
তোমায় আমি ঠকাতে চাই না। আজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে । আমার ভাই গত বছর মারা গিয়েছে।
জানো...ওরও তোমার মত ঠোঁটে তিল ছিল, গালে ব্রণ আর হাতে বালা। তোমার মতই উচ্চতা। তুমি আমার ভাই হবে?
কথা বলতে বলতেই মনিকা টাকা বার করে নীরবের হাতে দেয়। নীরব বুঝতে পারেনা কি করবে...
অকস্মাৎ দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে..
যখন প্রদীপ জ্বলে সামনে আলো থাকে আর পিছনে অন্ধকার, কিছু ক্ষণ আলো জ্বলার পর ক্ষীণ হয়ে নিভে যায়। যেভাবে মানুষের স্মৃতি মহামানবের ভাবনায় জন্মদিনের ক্ষণিকের অতিথিরূপে আসে,স্কুল কলেজ ছুটি থাকে, সরকারি কর্মীরা দরকারি প্রয়োজনে মহানন্দে দিন কাটায়। দোসরা অক্টোবর, এভাবেই প্রতিবছর গান্ধীজি আনন্দিত হন, তিনি জন্মে মানুষকে একটা অতিরিক্ত ছুটি দিতে পেরেছেন।তাঁর জীবন সার্থক।
নীরবের ভাই ধীরব নাইনে পড়ে। সামনে পরীক্ষা। নীরব ভাইকে বারবার বলেছে, পড়লে ভাল করে পড়। না পারলে রাজ চক্রবর্তীর কাছে 'টুকলি বিদ্যা' শেখ। দক্ষিণের বিষয়, বাঙালির সেন্টিমেন্ট,বিয়ে অথবা দেবদাস ফ্লেভার দিয়ে কী ভাবে হিটম্যাসিন খুলতে হয় এ বিষয়ে ওঁর জুড়ি মেলা ভার।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যমেধার সন্তান হয়ে কোনও লাভ নেই। চাকরি খুঁজতে খুঁজতে বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবে, আর বাচ্চার বন্ধুরা দাদু বলে ডাকবে। ওর ভাই মাথা নীচু করে শোনে, কোনও উত্তর দেয় না।
ছোট ভাই ক্লাস টুতে পড়ে,স্বভাবতই কৌতূহলী মন।
টিভি দেখে আর মাকে প্রশ্ন করে..
মা,জাপানি তেল দিলে কি সাপ মরে?
আচ্ছা! রকেট ক্যাপসুল খেলে কি খাটে চেপে মহাকাশে পাড়ি দেওয়া যায়?
মা অপ্রস্তুত অবস্থায় চ্যানেল পরিবর্তন করেন।
নীরবের সংসার দুই ভাই আর বাবা মাকে নিয়ে চলে যায়।
নীরব মধ্যবিত্ত বাঙালি ঘরের মধ্যমেধার বাংলা ইতিহাস ভুগোল পড়া ছেলে। কোন সাম্মানিক টাম্মানিক না,সিম্পলি পাস গ্র্যাজুয়েট। নীরবের বাবা নক্সাল, এখনও গরিব চাষিদের জড়ো করেন আর তাঁদের বোঝান। বলেন রাজ্যের অবস্থা সেই যুক্তফ্রন্টেই আটকে রয়েছে, কোনও উন্নতি হয়নি। তাই ছিটমহলের লোকেরা আর ওপার বাংলা ছেড়ে এপারে আসতে চাইছে না।এখানে নামে আছে উন্নয়ন, আর সংসদে সাংসদ দের মাথা অবনমিত।
সুযোগ পেলেই তিনি গান ধরেন 'মানুষ মানুষের জন্য' অথবা 'পথে এবার নেমো সাথী......'
নীরবের মা গৃহবধূ। মধ্যবিত্ত পরিবারের নিরানব্বই শতাংশ মা যেমন হন আর কি! রান্না করেন আর বাসন মাজেন।
নীরব এখনও বিপ্লবে মেতে আছে। লেলিন স্ট্যালিনে। তবে ওর পথটা আলাদা।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে যদি কিছু থাকে,তা হল জীবনে শিক্ষক হওয়া। বেশ কয়েক বার পরীক্ষায় বসলেও উত্তীর্ণ হতে পারেনি। শেষ বার উত্তীর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত ফাইনাল লিস্টে নাম ওঠেনি। এই নিয়ে কলেজে স্কোয়ারে ধর্ণাও দিয়েছে, কোনও লাভ হয়নি।
সেসময় আন্দোলন চলাকালীন ওর মধ্যে এক অদ্ভুত জেদ চড়ে বসে। পুতুল নিয়ে খেলার। এমনিতেই দেখতে শুনতে বেশ ভাল, আর উচ্চতা এবং শারীরিক গঠন বেশ আকর্ষণীয়। দেখলেই চোখ জুড়োয়। তাই মেয়েদের আপন করতে ওর খুব একটা সময় লাগে না। ও দেখেছে, গড়ে বাহান্ন সেকেন্ডের বেশি কোনও মেয়েই নেয় না ওর জালে আটকাতে। রোজ রাতে নতুন প্রেম জন্মায়, আর একটা করে তাজমহলের মৃত্যু হয়। আর সেই তাজমহলের মূল্যবান পাথর বেচে ওর জীবন দিব্যি চলে যায়।প্রেম মানে ওর কাছে প্যাঁচপ্যাঁচানি কাঁদা।
রেডবুকের প্রতি ওর এখনও শ্রদ্ধা আছে। মাঝে মধ্যেই চিল্লিয়ে ওঠে, কৃষক-শ্রমিক-মহিলা ঐক্য জিন্দাবাদ। কৃষক আন্দোলনের সময়ের মত এখন সুদখোর মহাজন দেখা যায় না।তাই পিছন দিয়ে ছোরা চালানোর প্রয়োজন হয় না।
পরিবর্তে সাম্যবাদ বজায় রাখতে যারা সমতাবিধানের বিরূদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, সেই বাবুসাহেবদের মেয়েরা ওর এক মাত্র লক্ষ্য। মেতে উঠেছে প্রেম প্রেম খেলায়।
গত রাতে রিক্তাকে নিয়ে খেলেছিল। যে টাকা পাওয়া গেছে রাতে তা পৌঁছে গেছে দীনেশ রায়ের কাছে। গ্রামঞ্চলে বন্যার ত্রাণকার্যে সেই টাকা লেগেছে। দীনেশ অবশ্য পুরো ভিডিওগ্রাফি করে ইমেলে পাঠিয়েছে। এখনকার দিনে কাউকে বিশ্বাস হয় না।
আজ যে আসবে তার ভালোবাসার প্রয়োজন নেই, আছে চাহিদা। আগে থেকেই কন্ট্যাক্ট হয়ে গিয়েছে। কোনও ভিডিও করে ব্লাকমেল করার দরকার নেই।
কাজ খতম,তারপর টাকা। আজকের টাকা পৌঁছে যাবে নীলেশের কাছে, গ্রামে কিছু টিউবওয়েল আর শুদ্ধ পানীয়জলের ব্যবস্থা করার দরকার।
মনিকা আসে, প্রাথমিক আলাপচারীতার পর নীরব দ্রুত নিজেকে উন্মুক্ত করতে থাকে।মনিকার মধ্যে কোন উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, বরং মন মরা।
তাহলে আজ কি লেট হবে? টাকা পৌঁছতে দেড়ি হয়ে যাবে..নীরব চিন্তিত হয়ে পড়ে।
মনিকা এবার উঠে দাঁড়ায়, টাকা বার করে।
তোমায় আমি ঠকাতে চাই না। আজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে । আমার ভাই গত বছর মারা গিয়েছে।
জানো...ওরও তোমার মত ঠোঁটে তিল ছিল, গালে ব্রণ আর হাতে বালা। তোমার মতই উচ্চতা। তুমি আমার ভাই হবে?
কথা বলতে বলতেই মনিকা টাকা বার করে নীরবের হাতে দেয়। নীরব বুঝতে পারেনা কি করবে...
অকস্মাৎ দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে..
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন