একটা দিন, একটা ভাবনা

একটু বেরোতেই হবে, কয়েকটা অকাজ করা বাকি আছে। জুতোজোড়া বার করে দেখি ফিতের কাছে ছেঁড়া। আবার! এই তো গত শুক্রবার সেলাই করলাম, ঋণ শোধ করলাম এই সপ্তাহে। দাঁড়াও গল্পটা একটু বলি.......
ব্যান্ডেল স্টেশনে দমবন্ধ ভিড়ে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে দেখি ব্যাগের প্রথম চেনটা কাটা। যাহ ব্বাবা!
এখন কি করি! ব্যাগ হাঁ করে আছে,যেন রসোগোল্লা গিলবে। আমি চেপেচুপে হাতে নিলাম। পাশ দিয়ে এক সুন্দরী মেয়ে যাচ্ছিল। আমি সুন্দরীদের থেকে সর্বদা দুরত্ব বজায় রাখি। তাই সুন্দরীর সাথে পর্যাপ্ত দুরত্ব পরিমাপ করতে করতে বুঝতেই পারিনি পাশে থাকা ষন্ডাকৃতি লোকের সঙ্গে ধাক্কা খাব। ধাক্কা সামলে নিয়েছিলাম, কিন্তু মাঝখান থেকে জুতোজোড়া গেল ছিঁড়ে। কি করি! পুরো অসহায় অবস্থা। ছেঁড়া ব্যাগ আর জুতো নিয়ে ঘষটে ঘষটে এগোচ্ছি।
পথে এক জন জুতো সারাইকারি পেয়ে গেলাম। ভাগ্যিস উনি ছিলেন,মান সম্মান বেঁচে গেল। সাদা বাংলায় মুচিকাকু, কিন্তু ওঁর সম্পর্কে শব্দটা ব্যবহার করে মন চায় না। কাকু তিন টাকা চাইলেন।  আমি একশো টাকা বার করে দিলাম। ভয় লাগছিল, কাকা আবার তেড়ে মারতে আসবেন নাতো?
কাকা টাকা দেখে বললেন, পরের দিন দিও।
আমি অবাক! এখনও এ সব মানুষের সন্ধান মেলে!
আসলে ক্যাটাগরি বা শ্রেণিবিন্যাস আমরা সংখ্যাগুরু 'অমানুষেরা' করি। মানুষ সর্বদা মানুষই থাকে। হিউম্যানিটি, মোরালিটি, ---এথিকস এ সব মানুষের অন্তরের ব্যাপার। মুচি, মেথর, ব্রাহ্মণ নির্বিশেষে তা চোখে পড়ে। ট্রেনে উঠে ভাবছিলাম, দেশ তো বদলাচ্ছে , রাজ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। ভাষার পরিবর্তন হয়না কেন? ডাকগুলোর পরিবর্তন হয় না কেন? আসলে ওই মানুষটার প্রতি এক রকম মুগ্ধতা কাজ করছিল।
তাই এ সব ভাবনার উদয়।
যাই হোক, এখনও আমরা এই ধরনের মানুষকে বিন্দুমাত্র সম্মান দেখাতে লজ্জা পাই। আজ যারা লেখা পড়ছো, এর পর থেকে ওদের দেখে নাক সিঁটকানোর আগে যদি আমার লেখা তোমাদের এক বারও মনে পড়ে, তা হলে এ লেখা সার্থক।  আর যদি না মনে পড়ে,আমি নেহাত সময় নষ্ট করলাম।