এই সময়.......

ছোট থেকেই সরকারি স্কুলে পড়েছি। তখন পড়ার বই খাতা ছাড়াও একটা চট নিয়ে যেতে হত। যে দিন চট নিতে ভুলে যেতাম, মেঝেতে বসতে হতো। শীত কালে পেছন ঠান্ডা হয়ে যেত। বছরের একটা নির্দিষ্ট দিনে পোকা লাগা দুর্গন্ধময় চাল দিত স্কুল থেকে। আমি ওই চালের বস্তা ঘাড়ে করে বাড়ি পৌঁছতাম। নিজেকে বীরপুরুষ মনে হতো। জীবনের প্রথম অর্জিত সম্পদ মনে হতো ওই চাল।
স্কুলে বইয়ের সংখ্যা কম পড়ত। ক্লাস ফোরে মনে আছে, একটা ইংরেজি বই দু'জনকে শেয়ার করতে বলা হয়। আমার রোল নম্বর ছিল তিন আর চুমকির চার। দু'জন মিলে বইটা পড়তাম। পরীক্ষার ঠিক আগে আগে চুমকি বইটা হারিয়ে ফেলল। ইংরেজি পরীক্ষায় কত পেয়েছিলাম এখন আর মনে নেই।
তবে ক্লাস ওয়ানের কথা মনে আছে, আমি অঙ্কে একশোয় উনিশ পেয়েছিলাম। নম্বরের মাপকাঠি তখন বুঝতাম না। আনন্দে আত্মহারা হয়ে মাকে রেজাল্ট দেখিয়েছিলাম। মায়ের মুখ শুকনো দেখে বুঝেছিলাম, ফল আশানুরূপ হয়নি।
তার পর ক্লাস এইট। আমাদের হাইস্কুলের মেন বিল্ডিং এর পাশে একটা বট গাছ ছিল। বট গাছের পাশে বাথরুম। বাথরুমের পাশে ছেলেরা সাইকেল রাখত আর মেয়েরা সাইকেল গ্যারেজের পাশ দিয়ে পেছনের বিল্ডিংয়ে যেত। পেছনের বিল্ডিংটা ছিল মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত। ছেলেরা বটতলায় আড্ডা মারত। আর মেয়েদের দেখত। কেউ কেউ নতুন প্রেমের ডালমুট চিবোতো। চোখে ঘায়েল,মনে স্মাইল। স্কুলের বিল্ডিং এ বড় বড় হরফে লেখা ছিল SOTP..
আমি ভাবতাম কোন মূর্খের কাজ এটা? STOP বানানটাও ভুল লিখেছে! এরা পাশ করবে কী ভাবে?
পরে এক দিন দেখি মেয়েরা এটা নিয়ে আলোচনা করছে আর মুখ টিপে হাসছে। একজন আরেকজন কে বলছে 'এস ও টি.......P'।
সে দিন ও কিছু বুঝিনি। যে দিন ওটার মানে সত্যি করে বুঝলাম, মনে হয়েছিল যে লিখেছে সে আমার থেকে অনেকে উচ্চমাত্রার বুদ্ধিমান।
আজ যে সব প্রকৃত বন্ধু প্রকৃত অর্থেই কৃত্রিম, কথা হয় না। মেলে না তাদের সঙ্গে আর।
কিছু নতুন বন্ধু আছে যাদের সঙ্গে আমার এই 'স্ট্রাগলিং পিরিয়ড' চলছে। আর কিছু ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড, যারা প্রকৃত অর্থেই প্রকৃত।
ভাই, কি ভাবিস? স্ট্রাগলিং ফর এক্সিস্টেন্স?
নারে! আমরা এক্সিস্ট করি স্ট্রাগল করার জন্য।
কেউ সকালে পড়ায়, দুপুরে স্কুলে পড়িয়ে ফের বিকেলে বাড়ি এসে পড়াতে বসে। তার শুধু রাত দশটার পর ফাঁকা, ওই সময়েই যা কথা হয়।
কেউ বা সন্ধে গড়িয়ে অফিস যায়। রাত তিনটেয় অফিস থেকে ফিরে ঘুমোতে ঘুমোতে ভোর পাঁচটা বাজে। ঘুম থেকে উঠতে দুপুর একটা। আমি দুপুর একটাতে ওকে Good Morning উইশ করি। হ্যাঁ ভাই! ঠিক ধরেছিস,আমাদের কথা গ্রামাটিক্যাল সেন্স মানে না।
আমরা স্বাধীন দেশের  Emotional Fool নাগরিক। ভালবাসার ইচ্ছে হলেই WhatsApp এ পপ আপ পাঠাই। 'ভালবাসি'।
তবে এই ভালবাসার ব্যাপক অর্থ বোঝার ক্ষমতা রাখতে হবে। আমিও ভালবাসি, আর আমাকে না বাসলে 'আমি পরোয়া করি না।'
হ্যাঁ ভাই, ঠিক ধরেছিস। এটাই আমাদের লাইফ, এটাই ইউটোপিয়া। এখানে হিউমার আছে,আছে মানুষের দুঃখ, সংগ্রামের জন্য নিজেকে টিকিয়ে রাখা আছে,আছে যাদের সঙ্গে একাত্ম হতে পারি তাদের ভালবাসার ক্ষমতা। ট্রেনের ভিড়ে যখন WhatsApp এ পপ আপ আসে 'গট আ জব'......হেসে উঠি। লোকে ভাবে পাগল নাকি? অকারণে হাসে!
কি বলি বলতো?  হুমম্ সত্যিই আমরা পাগল!
আমরা নূতন যৌবনের দূত, আমরা চঞ্চল, আমরা অদ্ভুত...