জীবনে মাত্র তিনবার প্রথম হয়েছি।শ্রেণীকক্ষের তৃতীয় চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থান গুলো সর্বদা আমার অধীকারে থাকতো।এমনকি ষষ্ট সপ্তম। মামা বলতো দশ পেরোলেই সর্বনাশ।
যেবার প্রথম তিনের মধ্যে নাম আসতো না,আমি বেশ কিছু কারণে দুঃখ পেতাম। দুঃখটা স্থান দখলের প্রেক্ষিতে নয়,বরং বন্ধুরা যখন পুরস্কার বিতরণী সভায় ঢ্যাং ঢ্যাং করে আমার সামনে দিয়ে 'বিশ্বক্যুইজ সমগ্র' অথবা 'সেরা বিজ্ঞানীদের জীবনি' নিয়ে পুরস্কারের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব জাহির করত। নিজেকে গল্পের রবার্ট ব্রুস মনে হত, যে মাকড়সার জাল বোনা দেখে, আর পরাজয়ের গ্লানি মাথা পেতে নেয়।
সেসময় মনে হত আমি বড় হলে ক্লাসে যারা চতুর্থ অথবা পঞ্চম হয় তাদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করব, প্রথম তিনজন এ পুরস্কার পাবেনা।
এবার ধর বাড়িতে আত্মীয় এলে জিজ্ঞেস করে
'কি হয়েছো?'
ফিফথ অথবা সিক্সথ।
তারপর তারা নাক সিটকাতো।
বুঝতে পারতাম, এই ফিফথ সিক্সথ বড় বিশ্রী শোনাই।
তারপর আবার,যখন দ্বিতীয় হওয়া বন্ধুর সাথে এই চতুর্থ স্থানাধীকারি অধম নিকট আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে যেত (যে বাড়ির কর্তা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক)। নারকেল নাড়ু দিয়ে মুড়ি খাওয়াতে খাওয়াতে জিজ্ঞেস করতো...
কি হয়েছো?
বীরপুরুষ বন্ধু হুঙ্কার ছেরে বলতো
'দ্বিতীয় '! 'দ্বিতীয়'!
আর আমি, লিক হয়ে চুপসে পড়া বেলুনের মত বলতাম....
'চতুর্থ '....
তারা সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো, হুল্লোড় শুরু করতো।আমি মনে মনে ভাবতাম.. এ বাড়ির বোধহয় সকলেই প্রথম হয়। হাসি থামিয়ে বলতো, তোমাদের বাড়ি কলাগাছের তেয়র আছে? একটা মর্তমান কলাগাছের তেয়র দিয়ে যেতে পারবে?
আমি চোখ কান বুজে মাথা নত করতাম।
তুমি ভগবাণে বিশ্বাস কর? নাস্তিক! ক্ষতি নেই?
বিজ্ঞানে নিশ্চয় বিশ্বাস রাখো!
আমি এখনো ভরসা রাখি, ভগবাণ একসময় সব হিসেব ঠিক ই মিলেয়ে দেয়। আসা আর যাওয়ার মাঝের এই রঙ্গমঞ্চ,এখানে তোমাকে কালি মেখে অভিনয় করতে হয়। সং সাজতে হয়। বুকে মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে এক গাল মুচকি হেসে ভাল থাকার অভিনয় করে যেতে হয়।
আমার এখনো আস্থা 'নিত্যতা সুত্রের' উপর। আচ্ছা এসব কথা থাক...Let's Come to the Point..
সত্যিই, আমরা বড় Rank এ বিশ্বাসী। র্যাংক এর ইঁদুর দৌড় পরিণত হয় কাঁকড়া দৌড়ে।তখন কেও কার-ও থেকে এগিয়ে যাওয়ার থেকে, বিবেচনার বিষয় হয়ে দাড়ায় কে কাকে কতটা পিছিয়ে ফেলতে পারে। প্রতিযোগিতায় জয়ের নেশায় মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে ফেলার। এখন এরকম ঘটছে। অথচ আমার সময়ে এরকম ছিলনা। দ্বিতীয় হওয়া বন্ধুর সাথে আমার প্রাপ্ত নম্বরের পার্থক্য ছিল মাত্র তিন। আমার বাবা আমায় প্রায়শই মনে করিয়ে দিত সেই তিন নম্বরের পার্থক্যের কথা। তখন আমি বুঝতেই পারতাম না, এটা বলা মানে আমাকে বাবা পরোক্ষভাবে মনে
করিয়ে দিচ্ছে পড়তে বসার কথা।
বাবা আমাকে কখনোই সেভাবে পড়াশোনার জন্য জোর করেনি। শুধু একবার মনে করিয়ে দিত তিন নম্বরের পার্থক্য, আর আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পড়তে বসতাম। এখন যদিও কৌশল টা বুঝতে পারি।
বোকা থাকার বেশ কিছু সুবিধা আছে,অথবা পরীক্ষাতে প্রথম তিনে না আসার ও অনেক উপকারিতা আছে; সেই অর্থে তুমি কখনোই নিজের প্রতি অতিরিক্ত আস্থা আনতে পারবেনা, যা তোমাকে অধঃপতনে চালিত করবে। আবার, হারতে হারতেই তুমি মানসিক ভাবে এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে যে, যেকোন বড় রকমের ঝড় ঝঞ্জা সহ্য করার ক্ষমতা তোমার মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে।
আমরা ক্লাসের সেই তৃতীয়, চতুর্থ অথবা পঞ্চম হওয়া ছাত্র,যারা ঠকতে ঠকতে শিখি,আর হারতে হারতে জিতি।
যেবার প্রথম তিনের মধ্যে নাম আসতো না,আমি বেশ কিছু কারণে দুঃখ পেতাম। দুঃখটা স্থান দখলের প্রেক্ষিতে নয়,বরং বন্ধুরা যখন পুরস্কার বিতরণী সভায় ঢ্যাং ঢ্যাং করে আমার সামনে দিয়ে 'বিশ্বক্যুইজ সমগ্র' অথবা 'সেরা বিজ্ঞানীদের জীবনি' নিয়ে পুরস্কারের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব জাহির করত। নিজেকে গল্পের রবার্ট ব্রুস মনে হত, যে মাকড়সার জাল বোনা দেখে, আর পরাজয়ের গ্লানি মাথা পেতে নেয়।
সেসময় মনে হত আমি বড় হলে ক্লাসে যারা চতুর্থ অথবা পঞ্চম হয় তাদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করব, প্রথম তিনজন এ পুরস্কার পাবেনা।
এবার ধর বাড়িতে আত্মীয় এলে জিজ্ঞেস করে
'কি হয়েছো?'
ফিফথ অথবা সিক্সথ।
তারপর তারা নাক সিটকাতো।
বুঝতে পারতাম, এই ফিফথ সিক্সথ বড় বিশ্রী শোনাই।
তারপর আবার,যখন দ্বিতীয় হওয়া বন্ধুর সাথে এই চতুর্থ স্থানাধীকারি অধম নিকট আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে যেত (যে বাড়ির কর্তা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক)। নারকেল নাড়ু দিয়ে মুড়ি খাওয়াতে খাওয়াতে জিজ্ঞেস করতো...
কি হয়েছো?
বীরপুরুষ বন্ধু হুঙ্কার ছেরে বলতো
'দ্বিতীয় '! 'দ্বিতীয়'!
আর আমি, লিক হয়ে চুপসে পড়া বেলুনের মত বলতাম....
'চতুর্থ '....
তারা সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো, হুল্লোড় শুরু করতো।আমি মনে মনে ভাবতাম.. এ বাড়ির বোধহয় সকলেই প্রথম হয়। হাসি থামিয়ে বলতো, তোমাদের বাড়ি কলাগাছের তেয়র আছে? একটা মর্তমান কলাগাছের তেয়র দিয়ে যেতে পারবে?
আমি চোখ কান বুজে মাথা নত করতাম।
তুমি ভগবাণে বিশ্বাস কর? নাস্তিক! ক্ষতি নেই?
বিজ্ঞানে নিশ্চয় বিশ্বাস রাখো!
আমি এখনো ভরসা রাখি, ভগবাণ একসময় সব হিসেব ঠিক ই মিলেয়ে দেয়। আসা আর যাওয়ার মাঝের এই রঙ্গমঞ্চ,এখানে তোমাকে কালি মেখে অভিনয় করতে হয়। সং সাজতে হয়। বুকে মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে এক গাল মুচকি হেসে ভাল থাকার অভিনয় করে যেতে হয়।
আমার এখনো আস্থা 'নিত্যতা সুত্রের' উপর। আচ্ছা এসব কথা থাক...Let's Come to the Point..
সত্যিই, আমরা বড় Rank এ বিশ্বাসী। র্যাংক এর ইঁদুর দৌড় পরিণত হয় কাঁকড়া দৌড়ে।তখন কেও কার-ও থেকে এগিয়ে যাওয়ার থেকে, বিবেচনার বিষয় হয়ে দাড়ায় কে কাকে কতটা পিছিয়ে ফেলতে পারে। প্রতিযোগিতায় জয়ের নেশায় মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে ফেলার। এখন এরকম ঘটছে। অথচ আমার সময়ে এরকম ছিলনা। দ্বিতীয় হওয়া বন্ধুর সাথে আমার প্রাপ্ত নম্বরের পার্থক্য ছিল মাত্র তিন। আমার বাবা আমায় প্রায়শই মনে করিয়ে দিত সেই তিন নম্বরের পার্থক্যের কথা। তখন আমি বুঝতেই পারতাম না, এটা বলা মানে আমাকে বাবা পরোক্ষভাবে মনে
করিয়ে দিচ্ছে পড়তে বসার কথা।
বাবা আমাকে কখনোই সেভাবে পড়াশোনার জন্য জোর করেনি। শুধু একবার মনে করিয়ে দিত তিন নম্বরের পার্থক্য, আর আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পড়তে বসতাম। এখন যদিও কৌশল টা বুঝতে পারি।
বোকা থাকার বেশ কিছু সুবিধা আছে,অথবা পরীক্ষাতে প্রথম তিনে না আসার ও অনেক উপকারিতা আছে; সেই অর্থে তুমি কখনোই নিজের প্রতি অতিরিক্ত আস্থা আনতে পারবেনা, যা তোমাকে অধঃপতনে চালিত করবে। আবার, হারতে হারতেই তুমি মানসিক ভাবে এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে যে, যেকোন বড় রকমের ঝড় ঝঞ্জা সহ্য করার ক্ষমতা তোমার মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে।
আমরা ক্লাসের সেই তৃতীয়, চতুর্থ অথবা পঞ্চম হওয়া ছাত্র,যারা ঠকতে ঠকতে শিখি,আর হারতে হারতে জিতি।
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন