অষ্টাদশী না হলে পড়বেন না...

দীপিকা পোলের মাঝখানে দুটো পা ছড়িয়ে ছড়িয়ে নাচছে।
টিভিতে গান হচ্ছে...
"ম্যা লাভলি হু তৈয়ার"
বাপন আপনের দোকানে সাইকেলের 'পামচার' ঠিক করছে। পিড়ির উপর বসে হলুদ রঙের কোটো'টা থেকে আঠার মত কি একটা বার করে একটা টিউবের কাটা অংশে প্রলেপ লাগিয়ে জল ভর্তি  বালতি থেকে ফুটো টিউব'টা বার করে তাতে আচ্ছা করে 'সেটিং' করে দিল।বাপন এবার আপনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে টিউবের উপর বারবার হাতুড়ির বাড়ি মারতে লাগলো।শালা মাসের দশ তারিখ হতে চললো এখনো টাকা দেওয়ার নাম নেই!যে আঠারোশো টাকা পাই তার তিনশো শেফালিকে চুমু খেতে লাগে।শেফালির তেমন কোন চাহিদায় নেই।শুধু বলে একদিন চল'না হোটেলে গিয়ে চুমু খাই।আমবাগানে এই সন্ধ্যায় কে কখন দেখে ফেলবে!
বাকি টাকা বুড়ি মায়ের ওষুধ, ভাই'এর পড়াশোনার খরচ আর  বাজারের মাসিক ধার মেটাতেই ফুরিয়ে যায়।এমাসে আবার শেফালির জন্মদিন। ওকে একটা ইমিটিশনের হার কিনে দিতে হবে।নয়লে প্রত্যেক বিকেলের চল্লিশ মিনিট বাথরুমে কাটাতে হবে।

বাপনের 'চিরদিনি তুমি যে আমার' সিনেমা টা হেব্বি লেগেছিল। ওটা তো ওর জীবনের গল্প।সিনেমাটা যখন চলে ও ইস্টাইল করে বুকে নীল কালি দিয়ে শেফালির নাম লিখেছিল।মদন মাঝে মধ্যে বাপন'কে খুন ভাও খাওয়াই।বলে ভাই তোকে পুরো সারুপ খানের মত লাগছে।দীপিকার গান'টা এখনো বাজছে। টিভির দিকে তাকিয়ে বাপন একবার দীপিকাকে দেখে নেই।আহাঃ 'মাল'টা কি সেক্সি'।
শেফালি যদি এমন হত!পুরো খাজে খাজে কামড়।

মদন নতুন মোবাইল কিনেছে।অনেক ভিডিও গান ভরেছে। এক একেক বার একেক'টা চালায়।
'আমার নতুন গাড়ি....
'তোকে রডে.......বাজাবো।
পানু'কাকার দোকান থেকে ফোর জিবি বিদেশি সিনেমা ভরতে মাত্র চল্লিশ টাকা নেই।সাথে দেশি ফ্রি।বাপন মদনকে মানা করেছে,বেশী দেখিস না।এগুলো খুব বাজে নেশা!কিন্ত কে কার কথা শোনে!

বাপনের ভাই পড়াশোনাই তুখোড়। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত প্রতি ক্লাসে প্রথম হয়েছে।ওর নাম স্বপন। স্বপন যখন আপন'কার দোকানের  সামনে দিয়ে স্কুলে যায় সাদা জামা আর নীল হাফ প্যান্ট পরে।বাপন মুগ্ধ দৃষ্টিতে ভাই'এর দিকে চেয়ে থাকে।বাবা না থাকার দুঃখ'টা ও কখনো ভাইকে পেতে দেয়নি।যখন যাই চেয়েছে,তাই সাধ্য মত চেষ্টা করেছে ভাই কে দেওয়ার। এই তো এবছর যখন স্বপন ক্লাসে প্রথম হ'ল সাতদিন জল খাবারের টাকা বাঁচিয়ে ও ভাইকে ঝটপট ইংরেজি আর অঙ্ক বই কিনে দিল।ও জানে অঙ্ক আর ইংরেজি ছারা জীবন বৃথা।নিজে কোনদিন পড়াশোনা করেনি,তাই পড়ানোর মর্ম বোঝে।পাড়ার যারা পড়াশোনা করে তাদের ও সম্মান দেয়।মুখ থেকে বিড়ির শেষ অংশ টা ফেলে দেয়।
মা আর বেশীদিন বাজবেনা।এটা বাপন জানে।আপন কাকার দোকানে ওভারডিউটি করে মায়ের জন্য ফল কিনে নিয়ে যায়।আপেল পেয়ারা বেদানা।বাপনের ভালোবাসার পুরোটাই ওর ভাইকে জুরে।শেফালিকেও ভালোবাসে।কিন্ত শিক্ষিত ভাই'এর প্রতি শ্রদ্ধাবোধের কাছে নিজের প্রেম নিতান্তই তুচ্ছ।ও জানে, আর পোসেনজিতের বই দেখে বাকিটা শিখেছে....
সব ভায়েরাই শিক্ষিত হলে আলাদা হয়ে যায়,আলাদা সংসারে একা থাকতে পছন্দ করে।তাও ওর ভায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বিন্দুমাত্র কমেনি।

আজ সকাল থেকেই বাপনের মন টা কেমন খারাপ লাগছে,কিন্ত কেন খারাপ তা জানা নেই। আপন'কা এমাসের টাকাটা এখনো দেইনি।ওদিকে মায়ের শরীর টাও দিন দিন খারাপ হতে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে একবার মায়ের শরীর খারাপ হয়েছিল মা বুকটা ধরে স্থির দৃষ্টিতে বসে পড়েছিল। পরে হাসপাতালের  দাক্তারবাবু জানায় হার্ট অ্যাটাক।আজ বাড়ি থেকে চা মুড়ি খেয়ে বেড়োনো সময় মায়ের বমি হচ্ছিল,রক্ত বমি।এসব দেখেশুনে বাপনের আর ভালোলাগেনা।জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা আসে।মা মরছেও না,আর বেচে থেকে বাপন কে মেরে যাচ্ছে।

বাপনের ফোন বেজে ওঠে..
'ভজ গৌড়াঙ্গ,কহ গৌড়াঙ্গ,লহ গৌড়াঙ্গের নামরে।'
দেবের টা,এই গানটা বাপনের ফেভারিট।
হ্যালো দাদা!
ওপার থেকে স্বপনের গলা।
হ্যা ভাই বল,কি হয়েছে?তোর গলা এত শুখনো লাগছে কেন?
ওপার থেকে কান্নার গলা ভেসে আসে...
দাদা,মা আর নেই।
তুই আপন'কাকার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে এক্ষুনি বাড়ি ফের.....
বাড়িতে দাক্তার কাকা বসে আছে,উনার টাকা এখনো শোধ করা হয়নি।।
বাপন ফোন'টা ছুরে ফেলে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।।