আমার অনেকটা বয়স হয়েছে। কীভাবে প্রমাণ দিই! কিছুদিন আগে বিকেলে স্টেশনের দিকে হাটতে গেছি, আমার বন্ধু তার মেয়েকে ডেকে বলছে, সোনাই! কাকুকে প্রণাম করো...

কিছুদিন আগে পিসতুতো দাদার মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছি... দাদার মেয়ে তার ছেলের প্রথম শ্রেণীর রেজাল্টটা আমার হাতে ধরিয়ে তাকে বলছে, এটা দাদু হয়.. তোর ওই দাদু আর আমি একইসঙ্গে পড়তাম। দাদুর কাছে দুটো ইংরেজি শিখে নে।

আকার অথবা আকৃতিগতভাবে আমি এখনও কলেজের স্টুডেন্ট বলে চালাতে পারি। বিশেষকরে তাড়াহুড়ো অথবা অনীহার কারণে যখন ট্রেনে দুটো স্টেশনের পরেই নামতে হয়, আর আমি টিকিট কাটতে ভুলে যায়, তখন কোনও টি.টি.ই আমার টিকিট চেক করতে এলে দিব্যি বলে দিই আমি স্টুডেন্ট। আর তারা সেটা বিশ্বাসও করে নেই। কখনও তারা আমায় জিজ্ঞেস করে বায়ুর চাপ কোন যন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়? জলের রাসায়নিক সংকেত কী? সঠিক উত্তর পেয়ে তারা বুঝতে পারে আমি উচ্চ মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়ার মত ছাত্র, আর কলেজে পড়লে তিন বছরেই ডিগ্রী পাস, নো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।

আমার সামনের কয়েকটা চুল পাকা। শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আমি দাদু কিনা জানিনা... অথবা স্কুলে পড়া সেই বাচ্চাটি কি আমি! তাও নই।

তবে ছোটবেলায় আমায় মা সম্পর্কে একটা অন্যরকম ধারণা ছিল। আমি ভাবতাম মা মানে শৈশবে ব্রেস্ট ফিডিং, কৈশরে চেন কাটা স্কুলের ব্যাগে স্টীলের টিফিনে খাবার ভরে দেওয়া.. আর তারপর ধীরেধীরে মায়ের প্রয়োজনীয়তা কমে আসে..

কিন্তু এখন, আমার এই দাদু হয়ে যাওয়া বয়সে কখনই মনে হয়না আমার মায়ের প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে... বিশেষকরে ফোনে যখন বন্ধুরা জানতে চায় রাত তিনটেই বাড়ি পৌঁছনোর পর ঘরের দরজা কে খুললো? আমি তাদের কিভাবে বোঝায় আমার মা চিন্তা করে.. সে ঝড়ের রাতে টর্চ নিয়ে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আমার ফেরার জন্য আপেক্ষা করে....তার পরেও জিজ্ঞেস করে কী খাবো.. ডিম ভাজতে হবে কিনা...!

মা দিবস, বাবা দিবস, গার্লফ্রেন্ড দিবস, ব্রেক আপ দিবস এই সবে আমি বিশ্বাস রাখিনা, তবে রাত দশটায় চেয়ার ছেড়ে উঠে জল খেতে বিরক্তবোধে যখন মাকে পড়ার টেবিলে জলের গ্লাসটা এগিয়ে দিতে বলি... তখন এত কথা বলতে হয়না... লিখতেও হয়না... ক্যামন যেন স্পন্টেনিয়াসলি টাইপ হতে থাকে.....