মা কালির দিব্যি বলছি... প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে... তবু ফেসবুকে ডায়েরি লিখতে বসেছি...
সারাদিনে যা জার্ণি গেল তা বলে বোঝানো কঠিন... এই হাওড়া-কাটোয়া লোকাল ধরে বাড়ি ফেরাটা এখন বেশ পরিশ্রমসাধ্য কাজ বলে মনে হচ্ছে... আরে বাপু! আমি গান শুনতে শুনতে বেশ আরামসে ফিরছিলাম, বাধ সাধল পাশের কাকু... সে ঘুমে ঢলতে ঢলতে বারকয়েক আমার গায়ের উপর পড়ল... ঘুমন্ত মানুষকে জাগান তো দূরের কথা, বিরক্ত করাই মহাপাপ... তাসত্ত্বেও আমার এই পাপিষ্ঠ মনকে কিছুতেই শান্ত রাখতে পারলাম না... ইচ্ছে করেই দু-একবার নিজের শরীরকে পিছিয়ে নিলাম, কাকু ঘুমের মধ্যে প্রায় পড়ে যাবে এমন অবস্থা... তারপর কোনওমতে নিজেকে সামলে নিলেন..
এইবার কাকুর ধ্যান ফিরল... আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল... আমিও কাকুর দিকে তাকিয়ে দাঁত ছড়ালাম.... এইবার আলাপ-পরিচয় পর্ব...
কি করি... কোথায় থাকি... কোথায় যাচ্ছি... বাড়ি থেকে কী খেয়ে বেরিয়েছিলাম... কেন টিফিন ক্যারি করিনা... কেন ছাতা নিয়ে বেরোয় নি... জলের বোতল এত ছোট কেন...? হাজারো প্রশ্ন........
আমার ট্রেনের সাময়িক আত্মীয়দের খুব পছন্দ হয়... এমন অনেক আত্মীয় আছে যারা ট্রেনে বাসে তৈরি হয়েছে... একবার তো আস্ত মালগাড়ি চালকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ফেলেছিলাম... আত্মীয়তা তৈরির কোনও গোপন চাবিকাঠি নেই... শুধুমাত্র অপর জনের কথা মন দিয়ে শোনো... ব্যাস্!....
কাকু মেয়ের জন্য বাংলা অনার্সের টিউশন স্যার খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন... বুঝলাম, নিজের চাকরি নিয়েও কিছুটা সমস্যায় রয়েছেন... তার উপর স্ত্রীর শরীর খারাপ...(একটা গোপন টিপ্স... নিজের জীবনের ঝুঁট ঝামেলা নিয়ে কথা বলো, নিজের সমস্যার কথা আন্তরিকতার সঙ্গে অপরকে জানাও... অজান্তে অপরের অনেক কাছে পৌঁছে যাবে...) এইসবের মাঝেই কাকু আমার নাম্বার চেয়ে বসলেন... দিয়ে দিলাম...
বাড়িতে খেতে বসেছিলাম... বর্ষাতে সর্ষে ইলিশ... সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসলে, নিত্যনতুন টপিক নিয়ে আলোচনা চলে... আজকের টপিক একটু আধুনিক, সময়োপযোগী... ভাই এর বক্তব্য, আমদের বিয়ের সময় কখনও মেয়েপক্ষ আমাদের প্রতি অমত হবেনা, অপছন্দ করবেনা... আমরা সুন্দর... :p
বক্তব্যের সঙ্গে নিজের পরিচিত বিশ্বাস আর প্রত্যয়ে একমত হতে পারিনি... নিজের সৌন্দর্য আমি তো জানি...!
খাওয়াদাওয়া শেষ... বিছানা প্রস্তুত.... জাস্ট ঘুমোতে যাব এমন সময় কাকুর ফোন এল...
- বাড়ি পৌঁছেছ? তোমার জ্বর কি কমেছে?
না ঘুমিয়ে এতটা বড় রচনা কেন লিখলাম??
ভাই... পৃথিবীতে এখনও অনেক সত্যি লুকিয়ে আছে... আনাচে-কানাচে অনেক সত্যিকারের মন লুকিয়ে আছে, অনেক মহৎ আত্মা লুকিয়ে আছে... যারা আমাদেরকে বাহ্যিক সৌন্দর্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করেনা... আত্মার বিনিময়ে আত্মীয়তা তৈরি করে... তাঁরা জানে বৃহৎ আত্মার কাছে বর্ণ, শারীরিক গঠনগত বৈষম্য অত্যন্ত ক্ষুদ্র...
একটা ব্যাপারে দুঃখ থেকে গেল... ফোনটা আগে এলে ভাইকে বলতে পারতাম আমাকে দেখে কেউ অপছন্দ করতেই পারে... কিন্তু কথাবার্তা বলে, আত্মীয়তা তৈরি করে আমাদের অনেককে অপছন্দ করা কঠিন......।।।।
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন