এই নিয়ে বিজয় বোস তৃতীয়বারের জন্য আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করতে এসেছে... বাড়ির সেজো মেয়ের বিয়ে... হঠাত করে দেখতে এসেই বিয়ে ঠিক হয়ে যায়... আজ দেখার তৃতীয় দিনের মাথায় বিয়ে....

তিনদিন ধরে ব্যাঙ্ক বন্ধ তাই টাকাপয়সা তোলা হয়নি... প্রথমবার এসে শুধুমাত্র ভাইকে নিমন্ত্রণ করে যায়... বাড়ির বড় জামাই টাকাপয়সা দিয়ে আশ্বস্ত করলে দ্বিতীয়বার আসে ভায়ের সঙ্গে আমাকেও বলতে... কাল রাতের বেলায় মায়ের হাতে হাত রেখে অনুতপ্ত হতে দেখেছিলাম...  মুখটা ছোট... চোখটা লাল... আর ধূসর রঙের  কতগুলো এলোমেলো চুল...

এই সকালে ক্লাবের ছেলেমেয়েরা পতাকা উত্তোলনের আয়োজনে ব্যস্ত...  স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে চারিদিকে দেশাত্মবোধক গানে মুখরিত... টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ...  উজালা.. দীনদয়াল উপাধ্যায় আরও কতশত যোজনা.... চারিদিকে উন্নতির সুর...

এমন সময় বিজয় বোস তৃতীয়বারের জন্য আমাদের বাড়িতে আসে... 

মায়ের হাতটা ধরেই কান্নাই ভেঙে পড়ে... মেজো জামাইটা টাকাপয়সা দেবে বলেছে জানিস! আজ রাতে তোরা সবাই যাস... আমি দরজার আড়াল থেকে নিষ্পাপ চোখদুটো দেখছিলাম...  কিছুক্ষণ পর আমার ভিতরকার আত্মাটাও ক্যামন যেন কেঁদে উঠলো... 

ক্লাবের পতাকাটা তখনও তোলা হয়নি... আমি তৎক্ষণাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে বিজয় দাদুকে দিয়ে পতাকা উত্তোলন করার পরিকল্পনা করলাম... এর থেকে বড় স্বাধীনতা সংগ্রামী আমাদের দেশে আর কেইবা আছে??

পতাকা যখন ধীরেধীরে উপরে উঠছে বিজয় দাদুর চোখে জল... লুঙ্গির উপরে শক্ত করে বাঁধা পুরনো গামছাটা বাতাসের দোলায় মৃদু দুলছে.....