বৈদ্যুতিক তারের উপর দিয়ে মেঘগুলো একে অপরের গায়ে গা লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল.... তখন সূর্যটা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে... আমার চোখেমুখে ঘাম, গায়ে দুর্গন্ধনাশক পারফিউমের সুগন্ধি বাতাসের নাইট্রোজেন, অক্সিজেন আর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সঙ্গে কত অনুপাতে মিশছে তা জল্পনা করার চেষ্টা করছিলাম...
খুব রোগা লাগছে কী! হ্যাঁ ভিডিও কল এ পিসতুতো দিদি তাই তো বললো.. তৎক্ষণাৎ প্লে-স্টোরে সার্চ.. দুতিনটে ওয়ার্কয়াউট এর অ্যাপ ডাউনলোড করে নিলাম... ব্যাস! এবার আমার টুয়েলভ প্যাক...
অনলাইন এ কিছু অর্ডার দিলে যতক্ষণ হাতে না পাচ্ছি, মনটাকে কিছুতেই সংবরণ করতে পারিনা.. মনে হয় একবার ক্যুরিয়ার আই.ডি চেক করে দেখি বাড়ির দুয়োরে নাকি দিল্লির ইকম হাব এ.... খুব বেশি দেরি হলে কাস্টোমার কেয়ারে ফোন... আর ইংলিশে বকবকানি....
এমনই এক কথোপকথন চলাকালীন সময়ে কখন যে আমার পাশে রহমত এসে দাঁড়িয়েছিল, আমি খেয়াল করিনি... ইংরেজি শুনে বেশ কিছুটা বিস্মিত... হওয়াটাই স্বাভাবিক.... কথা শেষে ফোনটা কেটে দিলাম...
- চিনতে পারছিস?
- হ্যাঁ.. রহমত বল.. কী করিস আজকাল?
- তুলোর ব্যবসা... কলকাতা থেকে পাইকারি কিনে ভাগলপুরে বেচতে যাই....
- বিহারে! তুলো বেচতে বিহারে?
- হুমম... তোদের মত তো আর হতে পারলাম না...
- রহমত তুই বিয়ে করেছিস?
- কী যে বলিস! বিয়ে করব না! এখন তো শ্বশুরবাড়ি চললাম.... আমার তিন মেয়ে... বড় টা কেজি টু'তে পড়ে... ও আবার ওই ক্লাসে ফার্স্ট হয়...
- ফার্স্ট হয়! খুব ভাল! খুব ভাল! পড়াশোনা করাবি... খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে আপোষ করবি কিন্তু পড়াশোনার সঙ্গে একদম নয়... ওকে কে পড়ায়! ওর মা?
- না.. ওর মা সেভেন পাস... পিড়াইফোট মাসটার আসে পড়াতে...
- ও... আচ্ছা... কিন্তু তিন মেয়ের পড়াশোনা চালানো, তাদের সঠিকভাবে মানুষ করা কিন্তু বেশ কঠিন কাজ...
- হুমম... এখন বুঝতে পারছি.... তখন ছেলের জন্য টিরাই করছিলাম...
- এবার দেখ... আমরা একইসঙ্গে পড়েছি... তুই সাংসারিক হয়ে গেলি.. আর আমাকে এখনও স্টুডেন্ট বলতে পারিস... আসলে 'তোদের মত' বলে কিছু হয়না... আমরা একই অবস্থায় আছি যে যার নিজের যন্ত্রণা বুকে চেপে... আমরা সকলেই একই পথের পথিক... খুব বেশি বৃষ্টি হলে, অথবা বন্যা হলে তুই যেমন তুলো বেচতে যেতে পারবি না...সেরকম আমারও অনেক সমস্যা রয়েছে, হয়তো তোকে বলে বোঝানো যাবে না...
- আচ্ছা... ট্রেন ঢুকে গিয়েছে... আমি গেলাম...
রহমতের ট্রেন তখন স্টেশন ছেড়ে অনেক দূরে... আমার মোবাইলে শেয়ারমার্কেটের অ্যাপ টা খোলা... মনটা পড়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণের প্রোবাবিলিটিস, অ্যাসামশনের উপর... এবারের ভাষণে পাকিস্তান না এলে... এবারে ভাষণে অস্ত্র আমদানি না এলে... এবারের ভাষণে বিদেশনীতি, কূটনীতি সব কিছুর পরিবর্তে শুধুমাত্র অর্থনীতি এলে... অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে... শেয়ার মার্কেটে অনেকটা টাকা লাভ হলে দূরে... মাকে নিয়ে অনেক দূরে কোথাও বেড়াতে যাব....
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন