আমি মাছ খাইনা। ভাই ডিম খায়না। মা ছোট থেকেই মাংস খায়না,  আর বাবার খাওয়া দাওয়াই কোনও বাচবিচার নেই.... আমার ভেন্ডি ভাল লাগে, ভাই ভেন্ডি খায়না কিন্তু ঝিঙে খায়। ঝিঙে আমার দু-চোক্ষের বিষ। আমার ডাল খেতে ভাল লাগে, ভাই ডাল খায়না... মা-বাবা এই গরমে টকডাল পছন্দ করে... আমার টকডাল খুব একটা ভাল লাগেনা.....

এই সমস্ত পছন্দ অপছন্দ পাটিগণিতের নিয়মে ফেলে একটা গড় রান্না আমাদের বাড়িতে হয়। এই একদিনের রান্নার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে আমার মা অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী এবং ধৈর্যশীল একজন মানুষ... আর যেহেতু রান্নার সমীকরণ মা সঠিকভাবে মেলায়, তাই মা'কে বুদ্ধিমতী বলা চলে...

আমার বাবা অত্যন্ত পরিশ্রমী। বাবাকে রাগি বলা চলে তবে বদমেজাজি নন। বাবা সায়েন্স টায়েন্স খুব একটা বেশি বোঝে না, তবে যেটুকু বোঝে তার থেকে কোনও প্রশ্ন ধরলে আমি তার উত্তর গুগল সার্চ করেও মেলাতে পারিনা, ক্যুয়োরা তে জিজ্ঞেস করি।

ভারতবর্ষের কিছু কিছু বিষয় যেমন কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ভাগ করা,আমাদের বাড়িতেও মা-বাবার ডিপার্টমেন্ট ভাগ করা আছে। সাধারণত ছোটবেলায় শরীর-টরীর খারাপ হলে দাক্তারের কাছে মা নিয়ে যেত, বাজার-ঘাট যুগ্ম তালিকাভুক্ত এবং পড়াশোনা ছিল বাবার এক্তিয়ারে।

আমি পড়াশোনাতে বরাবরই খারাপ। হাতের লেখা পাঠোদ্ধার করতে জেমস প্রিন্সেপও ব্যর্থ হবে বলে আমার ধারণা... বাবার ভাষায় 'কাগের ঠ্যাঙ, বগের ঠ্যাং'।

আমি ছোট বেলায় বাবাকে অত্যন্ত ভয় পেতাম। এখনও পাই...  তবে এখন ভয়ের রঙ পরিবর্তিত হয়ে শ্রদ্ধাতে রূপান্তরিত হয়েছে।  বাবা যে খুব বেশি মারধোর করত তা মোটেই না, বরং মারত ই না... তবে যখন রেগে যেত বাবার চোখ লাল হয়ে যেত, সেই চোখ একটু বড়বড় করলে 'আমি আর নেই' এমন অবস্থা।

আমি যেটুকুই পড়াশোনা করেছি, বা করছি অথবা করার সাহস করছি তা বাবার জন্য। বাবা খুব ভাল শাসন করতে জানে, বাবার নিয়ম ছিল আদরের সময় আদর আর শাসনের সময় শাসন। বাবা রায় মশায়ের গল্প করত...  রায় মশায় বলত "মারলে লাঠির দাগ একদিন মিটবে, কিন্তু ছেলেমেয়ে একবার অমানুষ হয়ে গেলে......"

হয়তো কোমল সুরেও ছেলেমেয়ে শাসন করা যায়, তবে ব্যক্তিগতভাবে বাবার পদ্ধতিই আমার অধীকতর শ্রেয় বলে মনে হয়...

পৃথিবীর প্রত্যেকটা মা যদি আবেগ-আবদারের  প্রতীক হয়, বাবা অবশ্যই বাস্তবতার প্রতিমূর্তি।

বিঃদ্রঃ  খাওয়াদাওয়ার পারমুটেশন কম্বিনেশন নিয়ে বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই সন্ধি চলাকালীন এই লেখা....