সকালে দাঁত মাজছি। সূর্য যেমন পূর্বদিকে ওঠে এটা একটা চিরন্তন সত্য, আমার দাঁত দিয়েও রক্ত বেরোনো একটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা... কোনোদিন দুপুরে আপেল কিংবা কলা খেলে কামড় মারা জায়গাটাতে রক্তের দাগ না বসলে অবাক হই, তাহলে কী আমার মুক্তি?  সেরে গেলো?

দাঁত মাজনের ইংরেজি প্রতিশব্দ কোলগেট। সেই অর্থে সেনসোডাইন, পেপসোডেন্ট বা ডাবুর লাল সবই এক ধরণের কোলগেট। ছোটবেলাতে ম্যাথ শিখেছি, ইংরেজি পড়েছি, টুকটাক বাংলাটাও জানি কিন্তু জানিনা কীভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হয়... তাই ব্রাশ করলে মুখের বাইরে এমনভাবে ফ্যানা আসে যে দেখে যে কেউ ঘৃণা করতে বাধ্য হবে, সবার ফ্যানার রঙ সাদা, কিন্তু আমার মুখ দিয়ে লাল রঙের ফ্যানা বেরোয়...  আমি ভাবি সবার জীবন সাদাকালো আর আমার জীবনটা রঙিন...  তাই লাল ফ্যানা।

হাফপ্যান্ট পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছি। নিশা আর সুনিতা স্কুলে যাচ্ছে। নিশা বড়, ক্লাস সেভেনে পড়ে, সুনিতা ফোরে.... আমায় দেখে উইশ করল...
- 'গুড মর্নিং স্যার'।
- মর্নিং।
বলেই মনেমনে হাসলাম। এক কালে ওদের স্কুলটাতে পড়াতাম.....  'নিউ অক্সফোর্ড মডার্ণ ইংলিশ'। এখন আর পড়াতে যায় না, তবু স্যার বলছে... স্কুলের এই ম্যানারিজম মানতে ইচ্ছে করতো না, তবু প্রিন্সিপাল ম্যাডামের নির্দেশে মানতে হত। স্কুলে পড়ানোর সময় কাউকে মেরে হেসেও ফেলেছি বারকয়েক, আমাকে কিছুতেই কেউ রাগি স্যার মনে করত না.. বরং পিছনে বাচ্চা স্যার বলে ডাকত... আমাদের স্কুলটাতে একটা ম্যাডাম ছিলেন... অনেক বয়স্ক ম্যাডাম... উনার নাম ছিল 'ঠাকুমা আন্টি'..।

ভ্যাটার ফোন এলো। এই পৃথিবীর সর্বোত্তম বদমাশদের একটা তালিকা তৈরি করলে, ভ্যাটার নাম প্রথমে আসবে। ভ্যাটা ওর কাকার সঙ্গে গালাগাল দিয়ে কথা বলে, জ্যাঠতুতো ভাইকে বলে কানকির ছেলে। ওকে অনেক বুঝিয়ে বলেছি, তাতে কোনও লাভ হয়নি... ওর সেই এক গান... আমাকে আমার মত থাকতে দাও...।

ফোনটা রিসিভ করলাম...

- হ্যাঁ ভ্যাটা বল...
- তুই আজ কী মদ খাবি বল? আমার টাকায় খাওয়াবো... সাতটা বিয়ার অলরেডি খেয়ে ফেলেছি... রতন কে রাম দিয়েছি, ভদকা, হুয়েস্কি, ক্যাপ্টেন ...। তোর জন্য কী....?
- কী ব্যাপার ভ্যাটা? পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলি নাকি?
- তার থেকেও ভাল কিছু....।
- যে বৌদির সঙ্গে ফোনে কথা বলতিস, দেখা করলি?
- তার থেকেও আনন্দের..।
- কী হয়েছে বল তাহলে.... এই সাত সকালে মদ খাওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়... উপলক্ষ টা জানতে হবে তো?
- কাল রাত্রে ঠাকুমা মারা গেছে, ঘাট থেকে এইমাত্র ফিরলাম...  এখন 'পাটি' করছি...।

ফোনটা কেটে গেল, বোধহয় ব্যাটারি শেষ।

Sudip Sen
18 March 16