মেজোর কম্পিউটারের অনেক ফোল্ডার। একটা ফোল্ডারের নাম সাঁওতাল। ইট ভাটায় যারা কাজ করে তাদের জন্য স্পেশাল ফোল্ডার এটা.. লোকগুলো সারা সপ্তাহ ধরে ভাটায় কাজ করে আর সোমবারে পিঠে একটা গামছা বেঁধে ছেলেকে সেই পিঠে রেখে বাজার করতে আসে। মেজোর দোকানে গান ভরতে আসে।

সাঁওতালদের মেয়েরা খুব কালো। তাই আমাদের সভ্য সমাজে কোনও পরিবারে কালো মেয়ে হলে, দারুণ একটা উপমা ব্যবহার করা হয়... মেয়েটা সাঁওতালদের মত দেখতে...। আমিও যে কালো মেয়ে পছন্দ করি তা মোটেই নয়... মাঝেমধ্যে সুন্দরী মেয়ে দেখলে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি... আমার যেন এমন একটা বৌ হয়... সারাটা জীবন বৌয়ের রূপ দেখেই কাটিয়ে দেব....

আমি বৌয়ের রূপ দেখে কাটিয়ে দিলেও এই সাঁওতালরা তা পারেনা... ইট ভাটাতে কাঁদা মাখতে একটা চাকার মত জিনিস ব্যবহার করা হয়। সেই চাকাটা একটা গরু টানে... যেদিন গরু অসুস্থ থাকে, সেদিন এদেরই এক জনকে কোমরের সঙ্গে দড়ি বেধে টানতে হয়। একদিন এক মেয়েকেও এইভাবে দড়ি টানতে দেখেছি.... সাঁওতালরা মানুষ না, সাঁওতালরা জন্তু জানোয়ার।

বিহার বা ঝাড়খণ্ড  থেকে এরা যখন ইট ভাটায় কাজ করতে আসে অনেক টাকা দাদন নেয়। ফলত সেই টাকা পরিশোধ করলেও খাতায় কলমে আর শোধ হয়না। বৌ-বাচ্চা সহ সকলে পরিশ্রম করে। সাঁওতালদের বাচ্চাগুলোকে দেখলে বোঝা যায় না এরা মানুষের বাচ্চা....

মেজোর দোকানে বসলে আমি মাঝেমধ্যে মোবাইলে গান ভরে দিই। সাঁওতালরা বেশ ইংলিশে বলে

"বুলু ফিলম হ্যা?"

কিছু রাঁচি গান, আর ঘোমটা পরা মেয়েদের খ্যামটা নাচ দিলেই ওরা সন্তুষ্ট...  আর কেউকেউ চায়লে অন্যপ্রকার ফিলোম ও দিতে হয়....

এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাঁওতালদের অবশ্যই ভূমিকা আছে.... ওরা না এলে হাট বন্ধ হয়ে যাবে, বাজারে লোকজনের ভিড় চোখে পড়বে না। সর্বোপরি ব্যবসায়ীরা হাতে থুতু দিয়ে টাকাও গুনতে পারবে না। তবু ওরা অসভ্য, ওরা বর্বর....।

মেজোর দোকানে অনেক বাঙালী লোকজন আসে। তারা রবীন্দ্র সঙ্গীত নেন, দেশাত্মবোধক গান, ভক্তিগীতি, শ্যামা সঙ্গীত সবই নেন। শেষে জিজ্ঞেস করেন এইচ.ডি হবে? ব্রেজার্স? আচ্ছা বাংলা হবে? ইন্ডিয়ান? 

বুলু ফিলোমের এত ডাইভারসিটি এরা হয়তো জানেনা... তবু ভাল লাগে... সাঁওতালরা অসভ্য অথচ ইংরেজি জানে... সাঁওতালরা ইংরেজি জানে...