অর্পিতা আজ রাতের সঙ্গে মিশে গেছে, বরের ঠোটের সাথে নিজের গালের এক মশামাছির সম্পর্কের সমীকরণ হয়ে আমার সামনের এক বিমূর্ত জিজ্ঞাসা চিহ্ন।

অর্পিতা কিন্তু আগাগোড়া বেশ মোটা। হয়তো মোটা বলেই বেশিবেশি পছন্দ হত অর্পিতাকে, ছেড়ে যাওয়ার ভয় কম হত। কোথায় বা যাবে অর্পিতা? কেইবা ওকে পছন্দ করবে??
অর্পিতার প্রতি আমার মুগ্ধতার বেশ কিছু কারণ ছিল...বাম, বিজেপি বা ডানপন্থী ভাবধারা নিয়ে ও যখন কথা বলত.... আমি শুনতাম। অর্পিতা খুব সুন্দর গালাগাল দিত... মেয়েদের মত মেয়েলিপনা করে সঙ্কোচে নয়....ছেলেদের মত 'ব' 'চ' যোগে নির্দ্বিধায় গালি।
আগে আমি আর অর্পিতা একইসঙ্গে পড়তে যেতাম। আমাদের দেখে অনেকেই শিষ্টতা ভুলে শিস দিত, অর্পিতা ওদের দিকে তাকাতে বারণ করত। শক্ত করে আমার হাতটা ধরে আমায় রাস্তা পার করে দিত। বাড়ি ঢুকে যাওয়ার আগে আমায় গুড নাইট বলত.... এই গুড নাইটের পরিবর্তে আমার কী বলা উচিত, আমি জানতাম না। আমি বলতাম 'থ্যাংকস'।

অর্পিতাদের একটা বড় দোকান ছিল। দোকানে স্ট্রবেরি কেক, চানাচুর, বিস্কুট, ক্যাডবেরি সবই বিক্রি হত। ওর ওই অসুরতুল্য গোঁফদাড়ি সম্পন্ন বাবা'টা না থাকলে, আমার ব্যাগ এ লুকিয়ে খাবার ভরে দিতে দেখেছি অর্পিতাকে। আমি জিজ্ঞেস করতাম..... একে কী ভালবাসা বলে?
ও বলত 'না'..... 'এগুলোকে বলে চুলকানি'।

ইচ্ছা হলেই গঙ্গার ধারে বসে অর্পিতার গালে চুমু খাওয়া যাবে এমন কোনও সহজ নিয়ম ছিলনা। ওর যতক্ষণ না ইচ্ছে হচ্ছে ততক্ষণ ওসব বারণ। মুটির কত ঘ্যাম! তবু আমি অর্পিতাকে ভালবাসতাম.... ওর গলার কখনো মৃদু স্বরে রবীন্দ্রসংগীত, কখনো 'সাম্যবাদী' ভাবধারা আবার কখনও বাংলা গালাগাল.... আমায় মুগ্ধ করত।

আজ আমি কোথাও যাবনা। আজ অর্পিতার বিয়ের আপলোড করা ছবিগুলো দেখতে বসেছি। অর্পিতার বর ব্যাঙ্কার। কী একটা ওভারসিজ ব্যাঙ্কে চাকরি করে শুনেছি.... ও কী অর্পিতাকে সামলাতে পারবে???? অর্পিতাটাও সাংঘাতিক গা-ছাড়া টাইপের, বিয়ের ছবিতে পেটটা দেখা যাচ্ছে.... এই ছবিটা আপলোড করার কী দরকার ছিল? নাকি ইচ্ছে করেই....?

এইতো..! কভার ফোটো... ছেলেটা কিস করছে অর্পিতার গালে... এই গাল একদিন আমার ক্যানভাস ছিল....কিস করার ছবিটা দিল ক্যানো? তবে কী শুধু আমায় দ্যাখাতে! কষ্ট দিতে!
অর্পিতা আজ সারারাত খিস্তি দে আমায়..... আমি পারিনি... পারিনি কথা রাখতে।