আজ আমি একটা মেয়ে দেখতে এসেছি। বেশ কিছুক্ষণ ধরে একটা ঘরে বসে আছি, টিভিতে বাংলা সিরিয়াল চলছে।

মেয়ে দেখা মানে আমার একটা আনন্দ এবং বিনোদনের দিন। সেদিন নিজেকে একজন মহানপণ্ডিত মনে হয়, কারণ আমি বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি। এই যেমন, তোমার নাম কী? বাড়িতে কে কে আছে? ঝিঙেপোস্ত রাঁধতে জানো? বলতো জিঙেপোস্ত রান্নাতে ক্যানো হলুদ দেওয়া হয়না?

এইদিনগুলো আমার নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করার পক্ষে একটি আদর্শ দিন। এর আগে আমিও বেশ কয়েকটা ইন্টার্ভিউ দিয়েছি। সেখানে আমায় বিভিন্ন  প্রশ্ন করা হয়েছে.... শেক্সপিয়ারের ডার্কলেডি, সনেটের ইয়াংম্যান, আর গ্রাজুয়েশনের পরের বছর গুলো কিভাবে কাটিয়াছি.... প্রেম করেছি কিনা, ক্যানো করিনি, কোনও মেয়ে ক্যানো পছন্দ করেনা? আমার দোষত্রুটি......এই সমস্ত কথা আমার মনে পড়ে আমি যেদিন কোনও মেয়ে দেখতে যাই।

আজ দুপুরে আমি খাইনি, তার একটাই কারণ....
মেয়ে দেখতে গেলে ভালমন্দ খাওয়া যায়। মেয়েপক্ষের বাবা-মা স্নায়বিক দৌর্বল্যগ্রস্ত হয়ে আদর আপ্যায়ন করে। তাদের অসহায় অবস্থা আমায় উৎফুল্ল করে।

প্রথমেই প্লেটে সাজিয়ে আমাদের মিষ্টি দেওয়া হল। বেশ তৃপ্তির সাথে টপাটপ রসগোল্লা মুখে ভরলাম। অতঃপর লম্বা ঢেকুর তুলে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন মেয়ে আসবে......

মেয়েটা এসেই ঝপাং করে খাটে বসে পড়ল। বেশ আওয়াজ হল, খাটটা নড়ে উঠলো, বিছানার চাদর এলোমেলো হয়ে গেল। ম্যানারিজম জানেনা... এই মেয়ে ম্যানারিজম জানেনা।

মেয়েটার বর্ণনা দেওয়ার মত তেমন কিছুই নেই। একটা চাপা নাক, বোঁচা। গায়ের রঙ কিছুটা চটের বস্তার মত। হলুর রঙের শাড়ি পরেছে, ফুলহাতা ব্লাউজ। মুখের একপাশ চুল দিয়ে ঢাকা।

মানুষের মন সন্দেহপ্রবণ। চুল সরাতে বলা হল। নাজানি কোনও খুঁত ঢাকছে কিনা!
আমি প্রশ্ন করা শুরু করলাম, বায়োডাটা অনুযায়ী কয়েকটা বেসিক প্রশ্ন করা হল, কত সালে মাধ্যমিক পাস? উচ্চমাধ্যমিকে কোন সাবজেক্ট এ ব্যাক? ইতিহাসের জনক কাকে বলা হয়?

বোঝা গেল মেয়েটির ঘটে ত্যামন কিছু নেই। মাধ্যমিক পাসের সালই ঠিকঠাক বলতে পারছেনা, আর ইতিহাসের জনক.....!

এরপর কিছু সহজ প্রশ্ন করা হল। দেবের সিনেমা দেখে কিনা? কোন নায়ক বেশি পছন্দ শাহারুখ না সালমান খান.... শেষ শাহারুখের কোন সিনেমা দেখেছে.... শেষ প্রশ্নের কোনও উত্তর পাওয়া গেলনা। তারপর জিজ্ঞেস করা হল 'শারুপ' খানের যেকোনও একটি সিনেমার নাম....  বলতে পারেনি।

এই মেয়ে সত্যিই বোকা। দেখেই যে পছন্দ হয়ে যাবে অর্থাৎ চটপট রাতারাতি বিয়ে করে নিয়ে যাওয়ার মত মেয়ে সে নয়। এসব ভাবতে ভাবতে ভাবতে চা এল। চা খেতে খেতে উপযুক্ত উত্তর ভাবতে লাগলাম, পাত্রীপক্ষকে মতামত জানানো দরকার। না!.... সরাসরি পছন্দ হয়নি সেটা জানানোই সবচেয়ে ভাল হবে।
পকেটে একশ আট টাকা ছিল, একশ টাকা মেয়ের হাতে গুঁজে দিয়ে আমি বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলাম। বেচারা মেয়ের বাবা অনেক আয়োজন করেছে, বেশকিছু টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে, এরকম পরিবারে একশ টাকা মানে অনেক....।

দেখুন, সত্যি কথা বলতে কী পাত্রপক্ষের মেয়ে পছন্দ হয়নি। ভোঁতা নাক, গায়ের রঙ খুব একটা ফর্সা নয়, সর্বোপরি বুদ্ধিশুদ্ধি খুবই কম। মেয়ের বাবা দুঃখ পেয়েছিল, হয়তো আমার সামনে চোখের জল ফেলতে পারেনি।

আমাদের অটোটা ধোঁয়া ছেড়ে সামনের দিকে এগোচ্ছে, কালোকালো সব ধোঁয়া আমার চোখেমুখে লাগছে। নিজেকে ক্যামন অপবিত্র পিশাচ মনে হচ্ছে। একদিন আমাকেও  কোনও পাত্রীপক্ষ দেখতে আসবে... হয়তো পছন্দ হবেনা.. রোগা, সামনে চুল কম অথবা আরও ভয়ংকর কোনও খুঁত....  মুমূর্ষু হয়ে পড়লাম। আমার বমি পাচ্ছে... আমার ভয় করছে... ভগবান আমায় ক্ষমা করো...।

Sudip Sen
31/01/16