প্রিয়তমা,
              শব্দের কারসাজিতে এ চিঠি লিখতে বসে দেখি আমার ঘরের পিছনের কচুগাছের সবুজপত্র  হলদেটে আঁকার ধারণ করেছে। সম্পর্কের সুস্থতা বজায় রাখতে আমরা যে দুরত্ব তৈরি করেছি, তা কয়েকশো আলোকবর্ষ দিয়েও পরিমাপ করা সম্ভব নয়। অথচ, আজও যখন তোমার কথা ভাবতে বসি, অদ্ভুতভাবে কিশলয় তুলসীর তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে আসে। মৃত প্রণয়ের হৃদয়স্পন্দন আমি আজও শুনতে পাই। তোমায় আজও ভালোবাসি, তাই নিত্যদিনের ভুলে যাওয়ার অভ্যাসের সাথে সংগ্রাম করে আমি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। সম্পর্কের কুসংস্কারে আমি বিশ্বাসী নই।
সূর্য যখন স্বার্থপরতার মোহে তোমার শরীরের ঘাম ঝড়াচ্ছিল , দ্বিপ্রহরের আলোয় আলতো করে রুমাল এগিয়েছিলাম। অথচ সেদিন চৈত্রমাস ছিলনা। নিষ্পলক নীলিমাই কোনও গাঙচিল ওড়ে নি। আমার প্রেমের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ভিড় করেনি রাস্তার চিল-শকুনেরা। তবু বলতে পারো আমরা কেন নিজেদের হারিয়েছি?
যে সম্পর্কের গভীরতা পরিমাপযোগ্য কোনও ফ্যাদোমিটার আবিষ্কৃত হয়নি এ ধরণিতে, তা কেন সুউচ্চ মহাকাশ থেকে ভোকাট্টা হয়ে মাটিতে পড়বে?

বড্ড জানতে ইচ্ছে করে, তুমি কী এখনও আমায় নিয়ে ভাবো? কেমনভাবে এক নির্জন বন্ধ্যা উপত্যকায় শতশত মৃত মনের পাশে কিভাবে বেঁচে আছি? ভাবো দুপুরে খেয়েছি কিনা? কিংবা খাওয়ার পরের ওষুধপাতি না খেয়ে মরতে বসেছি কিনা?
আমি সত্যিই ভাবতে চাইনা, ভাবতে চাইনা বাঁগালের ব্রণটা বেড়েছে কিনা? ফুস্কুড়ি গুলো মিলিয়ে গিয়েছে নাকি প্রকট হয়েছে? তোমার বর্তমান আমার মত এতটাই পাগল কিনা? তিনবেলা দায়িত্ব নিয়ে 'খেয়েছো কিনা' জিজ্ঞেস করে ন্যাকাপনা করে কিনা!
অথচ অপ্রত্যাশিতভাবে অজ্ঞাতে চলে আসো আমার অন্তরে। জেনে রেখো কালও হারিয়েছিলাম আজও হারায় আবার ভবিষ্যতেরও যেকোনও দিনেই হাজারবার নিজেকে হারাতে পারি তোমার চোখে। আর আমার মন! সর্বদা চিরকিশোরের প্রথম প্রেমের মত তোমার অপেক্ষাই দিন গোনে।
ভোলার ব্যর্থ অভ্যাস শুধু তোমার কারণে, তুমি ভুলেই থাকো আর তোমার সুখ-ই আমার সুখ।
চিঠির স্বল্প পরিসরে অন্তহীন এক আকাশ অব্যক্ত  কথা ধরেনা। তাই বিগত দিনের স্মৃতিচারণ হলুদ খামে ভরে নামঠিকানাহীন পরিচয়ের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিতে চাই।
অন্তিম চিঠির অবশিষ্ট শব্দগুলো যখন লিখছি ঘরের পিছনের কচুপাতাটা ধূসর রঙ নিয়ে কেমন যেন নুইয়ে পড়েছে। আমারও চোখ বুজে আসছে।
ডাক এসেছে। ঘুমোতে যেতে হবে। বিদায়!

                                           ইতি
                                            ইতঃপূর্বের প্রেমিক।