No Offense

#ইঁচড়ে_পাকা

- স্যার, আপনি আপনার গরু-বাছুর পুকুরে নামিয়ে চান করাতে বলুন, আপনার মাথার পাকা চুল একটা একটা করে বেছে তুলতে বলুন, বাজার থেকে চুনুমাছ কিনে  দুধকচুর ডাটা কেটে এনে তা রেঁধে আপনাকে খাওয়াতে বলুন, জর্দা মেশান পান কিংবা 'স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়' বিড়ি কিনে আনতে বলুন। আমি সব শুনব, কিন্তু স্যার দয়া করে আমাকে আর পড়তে বলবেন না।
- কেন? বলি, হয়েছেটা কী?
- স্যার, আমি অনেক দিন ধরে আপনাকে বলব বলব ভাবছি, বইতে সব ভুলভাল লেখা থাকে।
- শুধু তো বললেই হবেনা, প্রমাণ করে দেখাতে হবে।
- দেখুন স্যার ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছি
                  "ছোট খোকা বলে অ আ
                  শেখেনি সে কথা কওয়া।"
স্যার, কথা না শিখলে ছোট খোকা অ, আ বলে কিভাবে? আচ্ছা আমি ধরেই নিলাম ছোট খোকা অ আ পড়তে পারে, তাই বলে ও ঔ পড়াতে গিয়ে একটা শিশুকে এতটা পাকিয়ে দেওয়া কী ঠিক?
- কেমন?

-                              ডাক পাড়ে ও ঔ
                                 ভাত আনো বড় বৌ।
স্যার, এবার যদি বাচ্চা ছেলেটা জিজ্ঞেস করে
'বৌ' মানে কী? ধরেই নিলাম সে বৌ মানে জানে, তাহলে বড় বৌকেই বা কেন ডাকা হচ্ছে? স্যার, এর মানে যা দাঁড়াল তা হ'ল শুধুমাত্র একজন বৌ নেই, বড় বৌ, মেজ বৌ, সেজ বৌ এমনকি ছোট বৌ ও থাকতে পারে। এগুলো কী ঠিক!
- আচ্ছা, তারপর বলো।
- সেদিন রাত্তিরে ভাই পড়তে বসেছে। স্যার পড়া ধরেছেন 'একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনু', ভাই মুখস্থ বলে চলেছে........
"রাস্তা চলেছে যত অজগর 'লতা'
পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপধাপ।"
স্যার, রাত্রে সাপ বলতে নেই, ভাই তাই লতা বলেছিল, তা মদন মাস্টার কী মারটাই না মারল ভাইকে। স্যার জানেন মদন মাস্টারের নাম ও বইতে লেখা ' 'সঙ্গে যে যায় ভাগ্নে মদন', ভাই এটা রোজ পড়ে আর হাসে।
- আচ্ছা, তারপর বলো।
- "কোথায় জলে মরাল চলে,
মরালী তার পাছে পাছে?"
স্যার, এসব শেখানো কী ঠিক? এই লাইনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কেউ যদি মরালীর পাছে পাছে ছোটে, আর মরালীর দাদা মল্লার দেখতে পেয়ে যদি মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেয়, তখন হাসপাতালের খরচা কে দেবে?
- আর কোনও বক্তব্য আছে তোমার?
- স্যার, লাস্ট বাট নট লিস্ট...
কাল পানুকাকু 'দুই বিঘা জমি' পড়াচ্ছিল। আমরা ছাদে পড়ছিলাম। পানুকাকু আমার বই চেয়েছিল, অনেক সঙ্কোচের পর আমি বইটা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। স্যার, আমার বইএর মলাটে সানি আন্টির ছবি, ওই পড়ার আগে নিজেকে একটু মোটিভেট করি আর কি! তো, স্যার তো আর মলাট দেখতে পায়নি! বই এর পিছন টা আমরাই দেখছিলাম।
স্যারের ছাদের সোজাসুজি চন্দনের বাড়ি। উচ্চারণগত সুবিধার্থে আমরা যুক্তাক্ষরের 'ন' টা বাদ দিয়ে ডাকি ওকে। চন্দনের দাদু বেশ বয়স্ক, বিরাশি মত হবে। উনি সবসময় হাত নড়েন।
তো স্যার পড়াচ্ছেন....
"সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া"
হাসির সূত্রপাত ওখান থেকেই, তবে তা আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করল, স্যার যখন আবৃত্তি করলেন.....
"বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে"
ওদিকে জানালা দিয়ে চন্দনের দাদুর হাত তীব্রভাবে নড়তে শুরু করেছে। সামনে সানি আন্টির ছবি, আর স্যারের আবৃত্তি........
আমরা কেউ হাসি চেপে রাখতে পারি নি। স্যার সব বুঝতে পেরে বই ছুড়ে ফেলে দিলেন। এবার স্যারের চোখ গেল বইএর মলাটের উপর। আমাদের পুরো ব্যাচকে স্যার পড়তে যেতে বারণ করেছে। এবার বলুন, আমাদের আর দোষ কোথায়? ক্লাস ওয়ান থেকে পাকতে শুরু করলে, টুয়েলভের এই অবস্থা তো স্বাভাবিক!

© Sudip Sen
15/Oct/15