চোর
রতন বাজারের ব্যাগ নিয়ে মেঠোপথ দিয়ে হাটের দিকে এগোচ্ছে। সাড়ে সাতশো আলু,পঁচাত্তর সর্ষের তেল আর দেড়শো মুসুরির ডাল। মা যেমন হিসেব করে টাকা দেয়, তাতে ফেরত পাওয়ার কোনও আশা থাকে না। অথচ দু-এক টাকা ফিরলে দিব্যি কুলের আচার খাওয়া যায়।
মেঠোপথ পাকা রাস্তায় মিশেছে। সারি সারি খাবারের দোকান। গোপালের দোকানে গামলা ভর্তি ছানার জিলিপি, রসগোল্লা লর্ড চমচম। রতনের জিভে জল আসে। খেতে ইচ্ছে হয়। ভগবান যদি কোনও দূত পাঠান আর রতনের খাবারের ইচ্ছে জানতে চান?
কিংবা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে যদি এক আশ্চর্য প্রদীপের সন্ধান পাই! রতনের ভেবেই আনন্দ হচ্ছে। ভাবছে প্রদীপের দূত পাহারা দিচ্ছে আর ও টপাটপ রসগোল্লা মুখে পুরছে।
এই তো রেশনের দোকান! শুক্রবার কেরোসিন নিতে আসতে হয়। যে দিন আটশো তেল দেয়, সে দিন রতনের মহাসুখ। তেলের সঙ্গে কলের জল মিশিয়ে রতন এক লিটার বানায়। তার পর চার টাকা সাশ্রয় করে গোপালের দোকানের আঙুল গজা খায়। লম্ফতে তেল ভরলে অদ্ভুত ভাবে তেলটুকু শেষ হয়ে জলের শেষাংশ পড়ে থাকে। রতন মাকে বোঝায়... ডিলাররা তেলে জল মেশাচ্ছে।
এই তো মুদির দোকান। দাদা, দেড়শো মুসুর ডাল দিন তো...রতনের চোখ যায় ক্রিম বিস্কুটের দিকে। খুব কাছেই বিস্কুটের ছোট ছোট প্যাকেট পাহাড়ের মত সাজানো। রতন চুপিসাড়ে এক প্যাকেট বিস্কুট তুলে নেয়। চার দিকে তাকায়। না, কেউ দেখেনি। আহ! ...কি আনন্দ! রতনের নিজেকে বীরপুরুষ মনে হচ্ছে। চুরি করার শান্তি মনকে পুলকিত করছে।
-আর কি লাগবে?
-পঁচাত্তর সর্ষের তেল।
রতনের চোখ যাচ্ছে পয়সার বাটার দিকে। কত টাকা। খুচরো পয়সা। খুব দূরে নয়। ইচ্ছে করলেই তুলে নেওয়া যায়। রতন কচি হাতটা বাড়ায়। মনে পড়ে যায় আদর্শ লিপির কথা,
'কখনও কাহারও দ্রব্য চুরি করিবে না'।
এই তো চকচকে পঞ্চাশ টাকার নোট ফ্যানের হাওয়ায় উড়ছে। আর একটু উড়লেই ছুঁয়ে ফেলবে রতন। তার পর টাকা যাবে পকেটে।
-কি করছ?
-আজ্ঞে,কিছু না।
-যা করেছ করেছ। দ্বিতীয় দিন এমন যেন না দেখি।
তেল আর ডাল নিয়ে রতন সব্জির দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। পকেটে ক্রীম বিস্কুট। আহ! দেখেই শান্তি। এক অদ্ভুত আমোদে মন উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। রতন ভাবতে থাকে। প্রতিদিন একটা করে ক্রীম বিস্কুট খাবে আর গার্ডার দিয়ে বিস্কুটের মুখ আটকে রাখবে।
সব্জির দোকানে আলুর ঝুড়ির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল রতন। দোকানদার অত্যন্ত ব্যস্ত। একা সামলাতে পারছেনা। রতন একটা একটা আলু ব্যাগে পুরতে লাগল। চারটে বড় আলু ব্যাগে ঢুকে গেছে। রতন লোভ সংবরণ করে আর নয়।
-পাঁচশো আলু দিন তো?
দাঁড়িপাল্লায় মাপার পর দোকানদার ব্যাগ বাড়ানোর নির্দেশ দেয়।
-ওহে ছোকরা! ব্যাগে আলু কী ভাবে এল?
রতন উত্তর দেয় না।
আলু কেনার পর বাঁচানো টাকা থেকে রতন ঝুরিভাজা কিনে চিবোতে চিবোতে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
রতনের মা জোর করে স্কুলে পাঠায়। এক দিন স্কুলে গেলে দুপুরের খাবার বেঁচে যায়। মা যে বাড়িতে কাজে যায় সেখান থেকে কিছু খেয়ে আসে। তাতে এক বেলার টাকা বাঁচে। রতন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। শিক্ষার জন্য স্কুলে যাওয়া নয়। দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজনে ডাল আর সোয়াবিনের তরকারি খাওয়ার আশায়।
বাবার খোঁজ পাওয়া যায় না। হয়তো বেঁচে আছে! মাকে কোনও দিন জিজ্ঞেস করে না। কারণ এতে মা অত্যন্ত রেগে যায়। রতন ভাবতে থাকে, আজকের কাণ্ড মা জানতে পারলে অত্যন্ত ক্ষুণ্ণ হবে।
মা কি ভাত কাপড় দিয়ে চোর পালছে? পাড়ার সবাই রতনের মাকে চোরের মা বলে ডাকবে!
ভাবতে ভাবতে রতন মেঠো রাস্তায় পৌঁছে যায়। বাড়ির উপরের তালগাছ চোখে পড়ছে। বাড়িতে অনেক লোক দেখা যাচ্ছে। কয়েকটা গাড়ি। মায়ের কি তবে শরীর খারাপ হল! রতন এক অজানা আতঙ্কে আঁতকে ওঠে। এ সময় কিছু হলে মাকে আর বাঁচানো যাবে না। বাড়িতে পুলিশের গাড়ি। ঐ তো..পুলিশ মাকে ধরে রয়েছে।
কি হয়েছে মায়ের? মা কি করেছে?
বাড়িতে পৌঁছে রতন সব জানতে পারল। মা কাজের বাড়ি থেকে সোনার নেকলেস চুরি করে ধরা পড়েছে। চুরি করেছে বাবার জন্য। বাবা মাদকাসক্ত। মায়ের কাছে মাঝে মধ্যেই আসে টাকার তাগিদে। এবারের মার শূন্য ভাঁড়ার। তাই এই অসদুপায়।
মা রতনকে ধরে কান্না করতে থাকে। রতন নিরুত্তর থাকে। মাকে বলে না, চোরের পেটে সেও এক চোর তৈরি হয়েছে।
পুলিশের গাড়ির হর্ন বাজতে থাকে। রতন চুরি করা বিস্কুটের প্যাকেট মার হাতে দেয়। পুলিশের পায়ে পড়ে। আমিও চোর, আমিও আজ চুরি করিছি। এই দেখেন, আমার চুরি করা আলু, মায়ের হাতের বিস্কুট আমার ই চুরি করা। আমি চোরের পেটের চোর। আমাকে মায়ের সঙ্গে নিয়ে চলুন।
পুলিশ ধাক্কা দিয়ে রতনকে নীচে ফেলে দেয়। রতনের চোখ ফেটে জল ঝরতে থাকে।
রতন বাজারের ব্যাগ নিয়ে মেঠোপথ দিয়ে হাটের দিকে এগোচ্ছে। সাড়ে সাতশো আলু,পঁচাত্তর সর্ষের তেল আর দেড়শো মুসুরির ডাল। মা যেমন হিসেব করে টাকা দেয়, তাতে ফেরত পাওয়ার কোনও আশা থাকে না। অথচ দু-এক টাকা ফিরলে দিব্যি কুলের আচার খাওয়া যায়।
মেঠোপথ পাকা রাস্তায় মিশেছে। সারি সারি খাবারের দোকান। গোপালের দোকানে গামলা ভর্তি ছানার জিলিপি, রসগোল্লা লর্ড চমচম। রতনের জিভে জল আসে। খেতে ইচ্ছে হয়। ভগবান যদি কোনও দূত পাঠান আর রতনের খাবারের ইচ্ছে জানতে চান?
কিংবা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে যদি এক আশ্চর্য প্রদীপের সন্ধান পাই! রতনের ভেবেই আনন্দ হচ্ছে। ভাবছে প্রদীপের দূত পাহারা দিচ্ছে আর ও টপাটপ রসগোল্লা মুখে পুরছে।
এই তো রেশনের দোকান! শুক্রবার কেরোসিন নিতে আসতে হয়। যে দিন আটশো তেল দেয়, সে দিন রতনের মহাসুখ। তেলের সঙ্গে কলের জল মিশিয়ে রতন এক লিটার বানায়। তার পর চার টাকা সাশ্রয় করে গোপালের দোকানের আঙুল গজা খায়। লম্ফতে তেল ভরলে অদ্ভুত ভাবে তেলটুকু শেষ হয়ে জলের শেষাংশ পড়ে থাকে। রতন মাকে বোঝায়... ডিলাররা তেলে জল মেশাচ্ছে।
এই তো মুদির দোকান। দাদা, দেড়শো মুসুর ডাল দিন তো...রতনের চোখ যায় ক্রিম বিস্কুটের দিকে। খুব কাছেই বিস্কুটের ছোট ছোট প্যাকেট পাহাড়ের মত সাজানো। রতন চুপিসাড়ে এক প্যাকেট বিস্কুট তুলে নেয়। চার দিকে তাকায়। না, কেউ দেখেনি। আহ! ...কি আনন্দ! রতনের নিজেকে বীরপুরুষ মনে হচ্ছে। চুরি করার শান্তি মনকে পুলকিত করছে।
-আর কি লাগবে?
-পঁচাত্তর সর্ষের তেল।
রতনের চোখ যাচ্ছে পয়সার বাটার দিকে। কত টাকা। খুচরো পয়সা। খুব দূরে নয়। ইচ্ছে করলেই তুলে নেওয়া যায়। রতন কচি হাতটা বাড়ায়। মনে পড়ে যায় আদর্শ লিপির কথা,
'কখনও কাহারও দ্রব্য চুরি করিবে না'।
এই তো চকচকে পঞ্চাশ টাকার নোট ফ্যানের হাওয়ায় উড়ছে। আর একটু উড়লেই ছুঁয়ে ফেলবে রতন। তার পর টাকা যাবে পকেটে।
-কি করছ?
-আজ্ঞে,কিছু না।
-যা করেছ করেছ। দ্বিতীয় দিন এমন যেন না দেখি।
তেল আর ডাল নিয়ে রতন সব্জির দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। পকেটে ক্রীম বিস্কুট। আহ! দেখেই শান্তি। এক অদ্ভুত আমোদে মন উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। রতন ভাবতে থাকে। প্রতিদিন একটা করে ক্রীম বিস্কুট খাবে আর গার্ডার দিয়ে বিস্কুটের মুখ আটকে রাখবে।
সব্জির দোকানে আলুর ঝুড়ির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল রতন। দোকানদার অত্যন্ত ব্যস্ত। একা সামলাতে পারছেনা। রতন একটা একটা আলু ব্যাগে পুরতে লাগল। চারটে বড় আলু ব্যাগে ঢুকে গেছে। রতন লোভ সংবরণ করে আর নয়।
-পাঁচশো আলু দিন তো?
দাঁড়িপাল্লায় মাপার পর দোকানদার ব্যাগ বাড়ানোর নির্দেশ দেয়।
-ওহে ছোকরা! ব্যাগে আলু কী ভাবে এল?
রতন উত্তর দেয় না।
আলু কেনার পর বাঁচানো টাকা থেকে রতন ঝুরিভাজা কিনে চিবোতে চিবোতে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
রতনের মা জোর করে স্কুলে পাঠায়। এক দিন স্কুলে গেলে দুপুরের খাবার বেঁচে যায়। মা যে বাড়িতে কাজে যায় সেখান থেকে কিছু খেয়ে আসে। তাতে এক বেলার টাকা বাঁচে। রতন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। শিক্ষার জন্য স্কুলে যাওয়া নয়। দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজনে ডাল আর সোয়াবিনের তরকারি খাওয়ার আশায়।
বাবার খোঁজ পাওয়া যায় না। হয়তো বেঁচে আছে! মাকে কোনও দিন জিজ্ঞেস করে না। কারণ এতে মা অত্যন্ত রেগে যায়। রতন ভাবতে থাকে, আজকের কাণ্ড মা জানতে পারলে অত্যন্ত ক্ষুণ্ণ হবে।
মা কি ভাত কাপড় দিয়ে চোর পালছে? পাড়ার সবাই রতনের মাকে চোরের মা বলে ডাকবে!
ভাবতে ভাবতে রতন মেঠো রাস্তায় পৌঁছে যায়। বাড়ির উপরের তালগাছ চোখে পড়ছে। বাড়িতে অনেক লোক দেখা যাচ্ছে। কয়েকটা গাড়ি। মায়ের কি তবে শরীর খারাপ হল! রতন এক অজানা আতঙ্কে আঁতকে ওঠে। এ সময় কিছু হলে মাকে আর বাঁচানো যাবে না। বাড়িতে পুলিশের গাড়ি। ঐ তো..পুলিশ মাকে ধরে রয়েছে।
কি হয়েছে মায়ের? মা কি করেছে?
বাড়িতে পৌঁছে রতন সব জানতে পারল। মা কাজের বাড়ি থেকে সোনার নেকলেস চুরি করে ধরা পড়েছে। চুরি করেছে বাবার জন্য। বাবা মাদকাসক্ত। মায়ের কাছে মাঝে মধ্যেই আসে টাকার তাগিদে। এবারের মার শূন্য ভাঁড়ার। তাই এই অসদুপায়।
মা রতনকে ধরে কান্না করতে থাকে। রতন নিরুত্তর থাকে। মাকে বলে না, চোরের পেটে সেও এক চোর তৈরি হয়েছে।
পুলিশের গাড়ির হর্ন বাজতে থাকে। রতন চুরি করা বিস্কুটের প্যাকেট মার হাতে দেয়। পুলিশের পায়ে পড়ে। আমিও চোর, আমিও আজ চুরি করিছি। এই দেখেন, আমার চুরি করা আলু, মায়ের হাতের বিস্কুট আমার ই চুরি করা। আমি চোরের পেটের চোর। আমাকে মায়ের সঙ্গে নিয়ে চলুন।
পুলিশ ধাক্কা দিয়ে রতনকে নীচে ফেলে দেয়। রতনের চোখ ফেটে জল ঝরতে থাকে।
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন