প্রথমবার স্যারকে একটা ঘড়ি দিলাম। ঘড়ি স্যারকে খুব বেশি খুশি করতে পারেনি...। তখন নিয়মিত স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাটা হত...। স্যারের প্রায় শেষ বয়স... চাকরি না পেলে জীবন চালানো খুব কঠিন.....
তখন স্কুল সার্ভিস কমিশনের দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষাতে জেনারেল নলেজ থেকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হত... আমি ক্লাস নাইনে পড়ি, আরেকটা ব্যাচ ছিল স্যারের... ক্লাস এইটের... ক্লাস এইটের সেই ছোট্ট মেয়েটিকে আমার বড় ভাল লাগত... একবার জলের বোতল চেয়ে জল খাওয়ার পর থ্যাংকস জানাব না ধন্যবাদ জানাব এই নিয়ে একঘণ্টার কনফিউজড অবস্থা আমার...
তারপর থেকে কখনও চকলেট খেলে দুটো কিনতাম... একটা আমার জন্য, আরেকটা ওর জন্য.... না! জমানো চকলেট দেওয়ার সাহস কখনও হয়নি...
তবে সাহস করে শিক্ষক দিবসের একটা জমকালো প্ল্যান করে ফেললাম.... স্যার যেহেতু ভূগোল বিষয় নিয়ে এস.এস.সি তে বসছে কয়েকটা ম্যাপ কিনে ফেললাম... পৃথিবী, দেশ, রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ আর বর্ধমান জেলা.... একটা গ্লোব... আরেকটা জিকের বই... ইয়া মোটা.... এই ধরো আমাদের টি.এম.এইচ এর ম্যানুয়ালের মত....
স্যার খুবই খুশি... আমাদের এই বাচ্চা বয়সে এই পরিণত বুদ্ধির তারিফ না করে আর পারলেন না...সবার শেষে ক্লাস এইট যখন হারমোনিয়াম নিয়ে গান শুরু করল, আমার বেশ দুঃখ হচ্ছিল.... মনে হচ্ছিল আমার এই দাদা-দাদা ভাবের ভ্যালিডিটি বোধহয় এই শেষ.....
এরপর থেকে একটু একটু করে শিখতে শিখলাম... যেকোনো উপহার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী দেওয়া উচিত, মানুষ যাতে সেটাকে ব্যবহার করতে পারে... যেটার ব্যাবহারিক প্রয়োগ অন্যকিছুর থেকে অধীকতর ভাল...
অনেকসময় আমরা ফর্মালিটি পালন করি... এই যেমন ধরো পূজো এলেই পরিচিত মানুষদের জামাপ্যান্ট দেওয়ার একটা রেওয়াজ আছে, আমার মনে হয় কাওকে কিছু দেওয়ার আগে তাকে জিজ্ঞেস করা তার কি প্রয়োজন! আর কোনটা অত্যাবশ্যক...
ধরো কারও আই.বি.পি.এস এর পি.ও'র বই খুব প্রয়োজন আর তুমি তাকে টিশার্ট গিফট করলে!
আর প্রয়োজনে তোমায় চায়তে শিখতে হবে... বিশ্বাস করো... শিখতেই হবে....
আমি বরাবর হেব্বি লাজুক... কদিন আগে এক বান্ধবী হঠাত্ সমস্যায় পড়ে... মোবাইলে ব্যালেন্স রিফিল করতে হবে...ইমার্রজেন
্সি... অনলাইন পেমেন্ট করে দিলাম...
আমার সার্কেলের লোকজন আমারই মত... আমি টাকা নেব না... আর সে নাছোড়বান্দা... দিয়েই ছাড়বে... শেষমেশ অ্যামাজন আই.ডি পাসওয়ার্ড দিয়ে বললাম কার্ট এর বইটা প্রিপেড অর্ডার করে দিতে...
বেসিক্যালি ফোনে কথা বলে এত টাকা ফুরানো আমার পক্ষে দুঃসাধ্য ছিল...
সত্যি বলছি....
যা লিখতে চেয়েছিলাম তা লিখিনি... আর যা লিখেছি তা লিখতে চাইনি....