ক্লাস এইট এ পড়ার সময় আমি রাত আট'টার সময়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। সাতটা পঞ্চাশে আকাশবাণী কলকাতা ক'এ খবর প্রচারিত হত, খবর শেষ হলে আমিও শেষ.... ঘুমে ঢুলে পড়তাম।
আমার টিউশনের স্যার আমার এই কর্মকান্ডের বিষয়ে অবগত ছিলেন, তাই পড়তে গেলে বাবা অথবা মায়ের সই করে নিয়ে যেতে হত আমি বাড়িতে কতক্ষণ পড়ছি তা জানিয়ে। আমি মায়ের কাছে খাতা পেন নিয়ে বলতাম-
নাও! এখানে লেখ ছ'টা থেকে ন'টা....
পড়তে যাওয়ার সময় বাবা যেদিন বাড়িতে থাকতো, মা বলত বাবাকে দিয়ে সই করাতে... বাবা লিখে দিত-
"সাত'টা থেকে সাড়ে সাত'টা"। একেক দিন নিজেই নিজের বাবা-মা হতাম..।
গণ্ডার মার্কা কাঁচ হ্যারিকেনে লাগানো হত। সেই কাঁচের গাঢ় হলুদ আলো বইতে পড়ত, এখন আলোর রঙ পাল্টে গেছে... সাদা...।
মোনালি রায় আমার সঙ্গে পড়ত। একদিন কাগজে লিখেছিলাম এস প্লাস এম... তারপর অনেকক্ষণ সেটা দেখে তৃপ্ত হয়ে ছিলাম।স্কুলে গিয়ে মোনালির পাশে দাঁড়াতেই ও মুখ ঝামটা দিয়ে সরে গেছিল... পরেরদিন আমি বাড়ি ফিরে আবার নতুন একটা কাগজে নাম লিখেছিলাম এস প্লাস সি.... সি মানে চুমকি।
আমাদের স্কুলে একটা ঘন্টা ছিল। ছেলেরা ঘন্টা বাজাতো আর মেয়েরা সেই ঘন্টার আওয়াজে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলত। একদিন মিউজিক্যাল চেয়ার খেলতে খেলতে চুমকির চটি হারিয়ে গিয়েছিল। খুব কান্না করছিল। সবাই মিলে ঠিক করলাম চুমকিকে ওর বাড়ি পৌঁছে দেব, গেলাম চুমকির বাড়ি।
চুমকির মা আমাদের কাঁচের গ্লাসে সরবত এনে দিয়েছিল, রাস্না বোধহয়। তখন বিয়ে বাড়িতে এই ধরণের সরবত খাওয়ানোর প্রচলন ছিল... জানি না কেন, তবু তখন মনে হচ্ছিল আজ আমার বিয়ে।
প্রেম ট্রেম করলে মানুষ পাগল হয়ে যায়। বাস্তবিক জ্ঞান-বোধ লোভ পায়। ইগো, আত্মসম্মানবোধ, ব্যক্তিত্ব এই ধরণের কঠিন পরিভাষা প্রেমে ঢুকলে সেই প্রেম কাগজের মত পুড়ে যায়.... ছাই হয়ে উড়ে যায়...।
আজ এত রাত্রে এই সমস্ত অবান্তর আলখাল্লা কথাবার্তা লেখার কোনও মানে নেই... তবু...
ফেসবুকে আজকাল বেশ কিছু বাণী চোখে পড়ে... প্রেম সম্পর্কিত এমনই একটি মহৎ বাণী হল "আজ তুমি যা নিয়ে চিন্তিত, তা কাল তোমার কাছে পরিহাসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে "।
আমি এই ধরণের অনেক বোকামি করেছি আগে... কিন্তু কোনওটাই সেই অর্থে হাস্যাস্পদ কিংবা পরিহাস মনে হয়না... কারণ আমার আবেগটা সত্যি ছিল.... আর যখন কারও আবেগ সত্যি থাকে, তখন সে সত্যি আর বাকি সব মিথ্যে....।
Sudip Sen
16 March 16
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন