আজ ময়নার বিয়ে। আমি ত্রিশ টাকা দামের একটা ফোটো অ্যালবাম নিয়ে নিমন্ত্রণ খেতে যাচ্ছি... টাকাটা যদিও নিজের ট্যাক থেকে খরচ করতে হয়নি, ক'দিন আগেই দিদির বিয়েতে পাঁচজন বন্ধু মিলে ত্রিশ টাকা চাঁদা তুলে একটি ফোটো অ্যালবাম উপহার দিয়েছিল, তার উপরেই নতুন রঙিন কাগজ লাগিয়ে নিয়েছি...
ময়নাকে কিছুতেই চেনা যাচ্ছে না। মুখ ভর্তি আটা-ময়দা মেখেছে। ইচ্ছে হচ্ছে একটা তালপাতা কেটে এনে গাল থেকে সমস্ত আটা তুলে শুয়োরছানাদের খেতে দিই...
ময়নাকে স্কুলের সময় থেকে আমি ময়না পট্যাটো বলে ডাকি... পট্যাটো মানে আলু, ময়নার সারনেম... কখনও সখনও পঁচা আলু বললে খুব বেশি রেগে যেত, আর তখন চোখগুলো চোখ থেকে বেড়িয়ে আসতো... মনে হত গরম তেলের চিকেন পকোরা।
সেই পঁচা আলু আজ সিংহাসনে মহারাণী ভিক্টোরিয়া সেজে বসে আছে.... একেকজন লোক এসে গিফ্ট দিচ্ছে আর ভিক্টোরিয়া টিথ ক্যালিয়ে মৃদুহাসি ফরোয়ার্ড করছে।
বিয়ের দিন মানুষের অনুভূতি ক্যামন হয় তা বলা কঠিন। কেউকেউ মনে করে বিয়ে মানে একটা সম্পর্কের সামাজিকীকরণ... বিয়ে মানে লোককে ঘুষ খাওয়ানো...
দাদা আজ আমার বিয়ে, রাত্তির বেলার ঘুষটা আমার বাড়িতে খাবেন, তার পরিবর্তে কাল থেকে আমরা একসাথে থাকব... আর একসাথে রাত্তির বেলা ঘুমোলেও কোনও পুলিশের বাঁধা দেওয়ার অধিকার থাকবেনা। বিয়ে অনেক আজেবাজে জিনিসপত্রের অনুমতিপত্র। আমি অত্যন্ত সৎ একজন ব্যক্তি। তাই ঘুষ খেলে আমার পেটে হজম হয় না। পরেরদিন দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে ঘুমোতে হয়।
বিয়ের নিমন্ত্রণ খেতে এলেই আমার ঘুম পাই... অনেকদিন আগে বইতে পড়েছিলাম, প্রত্যেক আকর্ষণের সমান ও বিপরীতমুখী বিকর্ষণ আছে, তাই বিয়ে বাড়ির রঙ মেখে সঙ সাজা রমণীদের প্রতি আগ্রহ কম... এছাড়াও সেরকম কোনও অভিজ্ঞতা নেই যে কোনও অপরিচিতা দীর্ঘক্ষণ এই হতভাগার দিকে তাকিয়ে আছে, আর তাকালেও অস্বস্তি বেশি হবে বলে মনে হয়...
দু-তিনবার হায় তোলার পর খাওয়ার টেবিলে বসে পড়লাম... ঘুমে চোখ এঁটে আসছে, টেবিলের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম.... তারপর স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম... ময়নাকে বলছি...
ময়না! চল... আমরা বিলের মাঠে গরুর ঘাস কাটতে যাই... আজ তোকে আর বিয়ে করতে হবেনা....
Sudip Sen
24/03
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন