ক্ষুদ্রপ্রাণের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন মানবজাতির এক চিরাচরিত স্বভাব।
শুধুমাত্র ক্ষুদ্রপ্রাণ নয়, অপেক্ষাকৃত নিম্নশ্রেণীর মনুষ্যপ্রজাতিও স্বজাতির অত্যাচারের শিকার হয়।
নির্যাতন করা শুধুমাত্র প্রভুত্বের ক্ষমতা প্রদর্শিত করেনা, অনেকসময়  তা বিনোদনের মাধ্যমও বটে।

ক্লাস ফোরে পড়েছিলাম হিরোসিমা নাগাশাকির উপর পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণের কাহিনী। কতটা হিংস্র হতে পারে? বোঝার চেষ্টা করতাম।
একটা লোহার দন্ড নিয়ে তার একপ্রান্তে কাগজ জড়িয়ে অপর প্রান্তে পলিথিন মুড়ে তাতে কিছুটা কেরোসিন ঢেলে আগুন জালতাম। বারান্দাতে সারিবদ্ধভাবে লাল পিঁপড়েরা যেত...... আমি সেই প্লাস্টিক গলিয়ে গলিয়ে পিঁপড়ের উপর ফেলতাম।
কেউ পিছনের চারটে ঠ্যাঙ হারিয়ে বৃথা বাঁচার চেষ্টা করত, কেউ সামনের পাগুলো সামনের দিকে উঁচিয়ে আত্মসমর্পণ করত, কারো উপর আগুন পরে দপ করে জ্বলে উঠত। আহ্! কাউকে হত্যা করে কী শান্তি! এই কারণেই বোধহয় জঙ্গি গোষ্ঠীর বিনাশ সম্ভব নয়। তারা মৃত্যুর স্বাদ চিনেছে....আস্বাদন করেছে নোনতাটে রক্তের লাল স্বাদ।

সদ্য প্রস্ফুটিত আঠাশ দিনের বেড়ালের বাচ্চাটাকে দেখেছিলাম। দেখেছিলাম হিংস্র কিশোর কেও। প্রথমবার ছুড়ে ফেলেছিল পুকুরের পাশটাতে.....সাঁতরে পার হয়ে ডাঙায় উঠে এসেছিল। মিউমিউ করে কুকিয়ে কেঁদে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিল.... ছাড়েনি। হাতে তুলে ছুড়েছিল পুকুরের মাঝখানটাতে....সাঁতরে সাঁতরে কিছুদূর আসার পর ওকে আর দেখা যায়নি...পুকুরে মিলিয়ে গিয়েছিল হয়তো... আচ্ছা! আঠাশ দিনের যে বাচ্চাটিকে ধর্ষণ করা হলো, সেও কী এভাবে বাঁচবার চেষ্টা করেছিল? যন্ত্রণাতে ছটফট করেছিল? মৃত্যুর শেষ কান্না কেঁদেছিল?

মানুষ বড় হিংস্র প্রজাতি। স্বার্থসিদ্ধির জন্যে যতটা নীচে নামার প্রয়োজন..... সে ততটাই নীচে নামতে পারে, প্রয়োজনে তার চেয়েও বেশি। আমিও নীচ, বর্বর বুর্জোয়া।  রাস্তার অসহায় লোক দেখলে, মুখ ফিরিয়ে নিই। রাস্তাতে যারা থাকে তারা ছোটলোক। ছোটলোকদের শিক্ষার অভাব। ওরা ছোটলোক.... ওরা শুয়োরের বাচ্চা।

অথচ  নিষিদ্ধ গলির শুয়োরদের দেখতে আমার ভাল লাগে। তারা বুকটা খুলে আবাহন করে.... নীতিভ্রষ্ট করে কুপথে চালিত করে। অথচ প্যান্টশার্ট খোলার পর যে ক্লাইন্ট মিটিংটা সেরে ফেলা যাবে.....তা কল্পনাতীত। সমাজের সমস্ত জীবিকার পুরুষ সম্প্রদায়কে এরা একত্র করার মহান ব্রত পালন করছে।

এই সমস্ত সত্য বলার পর আমি  নিজের মানবতাবাদী চিন্তাভাবনার প্রজ্ঞাপন ঘটাবো। তিনবছর আগে তোলা রবীন্দ্রসদনের পাঁপড় বেচা বুড়িটার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করব, সাথে দিল্লির অনেস্ট অটোবালার মহান সততাপরায়ণ মনোভাব এবং মুম্বাই এর ইঞ্জিনিয়ারিং পাস ছেলেটার কাছ থেকে একটা পেপার কেনার কাহিনী ফেসবুকে শেয়ার করে লাইকের বন্যা বইয়ে দেব।

আর কোনও বাচ্চা শিশুশ্রমের আইনি তৎপরতায় কাজ করে খেতে না পেয়ে, হাত পেতে ভিক্ষা চাইতে এলে, মুখ সরিয়ে নেব। শুয়োরের বাচ্চা আবার চলে এসেছে.............।

Sudip Sen
13 Dec 15