- রাম-ও গুলাবী, শ্যাম-ও  গুলাবী, হরি ভি গুলাবী, গুলাবী এ শাহার.... টিং ডিং... ডিং ডিং ডিং ডিং ডিং ডিং নিং নিং নিং নিং।
- বাহ! মন ভরে গেল আপনার গান শুনে।
- তাহলে একটা ইংলিশ গান শোনাই?
- প্লিজ...
- হে নাও, হে নাও...
না না নে নাও...
এ ব্যাঙ্গাবয়েস ঠাঠা....
এ লেকিন মেরে পাঠা....

- আহ! পুরো মধু! কী দারুণ ইংলিশ গান শোনালেন আপনি। আচ্ছা! বাংলা গান জানেন না?
- হ্যাঁ! শোনাব?
- প্লিজ....
- দাদা আমার যেমুন তেমুন বৌদি আমার মডার্ণ,
এই,দাদা আমার যেমুন তেমুন বৌদি আমার মডার্ণ।
শ্বশুর শ্বাশুরিকে করেনা সম্মান, ননদ ভাসুর ও কে দেয় না মান।
 দাদা আমার যেমুন তেমুন বৌদি আমার মডার্ণ।
- চমৎকার! আরেকটা হোক...
- চোখে দেখা আছে স্বপ্ন আছে...
চোখে রাগ আছে অহংকারী বাসনা আছে,
সবই আছে তোমার বুকে, টিগ ডিগ ডিগ টিডিগ টিগ।
লুকোনো যা তোমার বুকে...টিগ ডিগ ডিগ টিডিগ টিগ।
মাইরি, ভুলা যাবেনা,
যাবার বলা দেখা হলো কঅথা হলো না।
যাবার বলা দেখা হলো কঅথা হলো না।...

সাইকেল চড়ে কাটিয়ে বেরানো সারাআটা দুপুর..
দু-দ্দু-দু দুদুদু দুদুপুর...
সাইকেল এ পাম নাই..
টিগ ডিগ ডিগ টিডিগ ডিগ।
রাস্তাতে জাম নাই....
টিগ ডিগ ডিগ টিডিগ ডিগ।
ও যাও তুমি হেটে।
এগিয়ে গিয়ে গাল ফোলানো..
চোখ রাঙিয়ে সেই তাকানো...
মাইরি ভুলা যাবেনা....
যাবার বলা দেখা হলো কঅথা হলো না।...

- বাহ! এটা একবারে সুপারসনিক। আপনি  রবীন্দ্রসঙ্গীত জানেন?
- কী বালের কথা বলেন! রবীন্দ্রসংগীত কানে বাজলে তো শিখব! একমাত্র গ্রীষ্মের গাঁ* ফাটা গরমে কলকাতার রাস্তাই 'শ্রাবণের ঘনঘটা', তাছারা আর কোথাও বাজেনা। তবে হ্যাঁ! আমরাও রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করি, চাঁদা তুলে রাস্তাই একটা বাথরুম বানিয়েছি, নাম রবীন্দ্র মুত্রালয়। এই রাস্তাঘাটে মা-বোন না মেনে আপনার মত বালের বুদ্ধিজীবীরা যখন চেন খুলে ইঁদুর বার করে মোতে, খুব ঘিন্না হয়। আমার কী মনে হয় জানেন! গোটা শিক্ষিত সমাজ একটা পিলাসটিকের বালতিতে বদ্ধ। বালতির বাইরে না বেড়োতে পারলে তারা মানুষ চিনবে কিভাবে? আচ্ছা! আপনারও কী সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে ঘিন্না হয়?
- এমন কেন বলছেন? তাই হলে কী আপনার গান শুনতাম! আপনার কথা শুনতাম মন দিয়ে? তবে কী জানেন শিক্ষিত মানুষের সময়ের বড্ড অভাব।
- তা জানি। কিন্তু কী জানেন! আমার ছেলেটাকে বড় মানুষ করার ইচ্ছে, পড়াশোনাতেও ভাল। ও শিক্ষিত হোক, কিন্তু বুদ্ধিজীবী যেন না হয়। টিভির বুদ্ধিজীবীদের দেখে আমার শব্দটার প্রতি ভক্তি উঠে গিয়েছে। পারিনা বুঝলেন!  সংসারের তালবাহানাতে আর পারিনা। ইনকাম নেই। ছেলেটাকে ঠিকঠাক পড়ার খরচ দিতে পারি না। বই খাতা দিতে পারি না। দুটো ফল এনে খাওয়াতে পারি না। তার উপর প্রাইভেট মাস্টারের মাইনে।
বিশ্বাস করুন, মাল খেয়েছি বলে ভাট বকছি না।
শালার শুয়োরের বাচ্চা মাস্টার সরকারের থেকে এত মাইনে পাই, অথচ তাও দুদিন টিউশন পড়িয়ে হাজার টাকা মাইনে নেয়। আমার মাসেই ইনকাম চার হাজার টাকা। তাহলে এত খরচ চালাবো কিভাবে বলতে পারেন?
- দেখুন, খরচ নিয়ে ভাববেন না। পড়াশোনা করান, দেখবেন টাকা ঠিক জোগার হয়ে যাবে। যার কেউ নেই তার ভগবান আছেন।
- আবার একটা বালের মত অবাস্তব কথা বললেন। মাল খেয়েছি বলে বোধশক্তি হারিয়েছি তা ভাববেন না একদম।
আপনি বুদ্ধিতে টইটুম্বুর বলে ভাববেন না আমার ঘট শূন্য। পারছিনা দাদা। সংসারের হাল ধরতে পারছিনা। সপ্তাহ ধরে ইনকাম বন্ধ, সামনে পুজো আসছে। দাদা জানেন! মাঝেমধ্যে মরে যেতে ইচ্ছে করে। ছেলেটার কথা ভেবে মরতেও পারিনা। বড্ড চাপা কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।